সুশীল

সম্প্রতি দেশের ২৭ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে সাক্ষর করে জাতিকে বেশ কড়া বার্তা দিয়েছেন। সুইডেনে পলাতক ইউটিউবার তাসনিম খলিল এবং যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট ডেভিড বার্গম্যান পরিচালিত বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে সৃষ্ট গুজবসেল কর্তৃক পয়দাকৃত এক নাটিকায় প্রদর্শিত আগডুম-বাগডুম ফিকশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতেই এই বিশিষ্ট নাগরিকরা নড়েচড়ে বসেছেন। দেশে আটক ও গুম হচ্ছে দাবি করে তারা এই বিবৃতি দিয়েছেন।

তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্সির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফোরামে গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটকসহ চরম মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

তাদের এমন উদ্বিগ্নতার খবরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও বেশ চনমনে হয়ে উঠেছে। আজ তাদের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ। অনেকদিন পর একটা মজমা বসানোর সুযোগ পেয়েছে। বেচা-বিক্রিও মন্দ নয়।

আরও পড়ুন: মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’র আড়ালে বিএনপি’র অর্থায়ন ও নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে মানবাধিকার শব্দটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানবাধিকারের নানারকম দোকানপাট খোলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। যার দোকানদারদের রমরমা অবস্থা। মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকারের অবস্থা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করছেন। আর এই ব্যবসার ফলে ডলার সংকটের মধ্যে দেশে ডলারও আসছে। তবে তারা সেই ডলার দেশে রাখছেন না বিদেশে রাখছেন, সেটি একটি রহস্যময় প্রশ্ন। তবে তাদের যে পকেট স্ফীত হচ্ছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা প্রতিদিন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আর্তনাদ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। শোকের মাস আগস্টে জাতীয় শোক দিবসেই এই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে মিশেল বৈঠক করেন পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। সেই বৈঠকে মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পসার সাজিয়ে বসেন মিশেলের সামনে এবং বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে কান্নাকাটি করেন।

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে জাতির বিবেকেরা কথা বলবেন, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি শুধুমাত্র একটি সরকার ক্ষমতায় এলেই মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হন, অন্য সময় যদি মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তাহলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম একটি বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছিলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৫ই আগস্ট আর ২১শে আগস্ট ভয়াবহতার দিক থেকে একইরকম। ২১শে আগস্টের ঘটনা ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রীয় মদদে এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে।

সেই গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর কোথায় ছিল আমাদের সুশীল সমাজ? কোথায় ছিলেন মানবাধিকার এই ফেরিওয়ালারা? জাতীয় শোক দিবসের দিন ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে ব্যারিস্টার সারা হোসেন গং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। কিন্তু ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তার একটি বিবৃতিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদের রং বদল দেখে খোদ গিরগিটিও লজ্জা পাবে।

আরও পড়ুন:মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ২১শে আগস্টের হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা

এই ফাঁকে বলে রাখা ভালো, সেই ২৭ বিবৃতিদাতার তালিকায় কারা ছিলেন। তাদের নাম- হামিদা হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলী রীয়াজ, আনু মুহাম্মদ, আসিফ নজরুল, স্বপন আদনান, পারভীন হাসান, ফিরদৌস আজিম, আলী ইমাম মজুমদার, শহিদুল আলম, গীতি আরা নাসরিন, সামিনা লুৎফা, শাহনাজ হুদা, তবারক হোসেইন, শিরীন হক, হানা শামস আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, অরূপ রাহী, নূর খান লিটন, রেহনুমা আহমেদ, নাসের বখতিয়ার, সুব্রত চৌধুরী, নোভা আহমেদ ও সালমা আলী।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, উল্লেখিত মানবাধিকার ব্যবসায়ীরা কারা? তাদের সত্যিকারের পরিচয় কী?

প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ প্রকাশ, ৪২ সুশীলের বিবৃতি, ৩৭ চিন্তাবিদের জনের উৎকণ্ঠা, ৪৯টি মানবাধিকার সংগঠনের আক্ষেপ, ২৪ জনের নিন্দা প্রকাশ, ৫০ জনের ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি এবং সাক্ষর প্রদান… ইত্যাদি ইত্যাদি। মূলত এই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ক্ষোভ, নিন্দা প্রকাশকারীদের দেখা পাওয়া যায় সরকারবিরোধী প্রতিটি কার্যকলাপে। আওয়ামী লীগের ওপর হামলা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিএনপি-জামায়াত আমলে ২১ হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা ও গুম, পেট্রোল বোমা ও আগুন সন্ত্রাস… এমন বিষয়গুলোতে এই মানবাধিকার কর্মীদের মুখে কুলুপ আঁটা থাকে।

আজকের এই ২৭ বিবৃতিদাতার নামগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ মিল খুঁজে পাবেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে আদালতের ভেতরে অবস্থান নিয়েছিলেন ডা. জাফরল্লাহ চৌধুরী, যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট ডেভিড বার্গম্যানসহ বিচারপ্রক্রিয়া বানচাল করতে রাজাকার মীর কাশিম আলীর অর্থায়নপুষ্ট আরো অনেকেই। বিচার চলাকালে তারা আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দিচ্ছিলেন, বার্গম্যান তার ব্লগে রাজাকারদের মানবাধিকার নিয়ে বিতর্কিত লেখা লিখছিলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী আদালতের ভেতরেই বিচারকের সরাসরি সমালোচনা করে কথা বলছিলেন। তাদের সাথে সেসময় উপরোক্ত তালিকার মানবাধিকার কর্মীদের অনেকেই ছিলেন।

এর প্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয় তাদের ওপর। তাদেরকে সাজাও দেওয়া হয়। এই সাজার প্রেক্ষিতে সেসময় অর্ধশতাধিক তথাকথিত মানবাধিকারের দোকানদার সাক্ষর করে যুদ্ধাপরাীদের বিচারকে সমালোচনা করে বিবৃতি দেন। একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষের গণহত্যা, ৬-৮ লাখ নারীর সম্ভ্রম হারানো, লাখো শিশুহত্যা, সমগ্র দেশ মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ মানবাতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ চলছে, আর সেই বিচার বাধাগ্রস্ত করে তাকে মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান বলে দাবি করছে এই রাক্ষসরা! ভেবে দেখুন তো একবার?

সেসময় আদালতের বক্তব্যের একটি অংশ এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি। তাহলে বোঝা যাবে, এদের মানবাধিকারের দৌড় আসলে কতটা।

ট্রাইবুনাল-২ এ পিনপতন নিরবতা। বিজ্ঞ আদালত বিনয়ের সাথে ডাকলেন অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, আলী আহমেদ জিয়া উদ্দিন, রাহনুমা আহমেদ এবং শিরিন হককে। আদালত প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, “ডেভিড বার্গম্যান তার ব্লগে কী কী লিখেছেন বা লিখেন এসব আপনারা পড়েছেন? এসব ভালো করে পড়ে কি আপনারা বিবৃতি দিয়েছিলেন?”

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে তারেকের প্রক্সি দিচ্ছে কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান

আহ্বানকৃত ব্যাক্তিদের ভেতর তখন অস্বস্তি শুরু হয়েছে। একজন ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করতে যাচ্ছিলেন, বিজ্ঞ আদালত তাঁর প্রশ্নে স্থির থাকলেন, “শুধু বলেন পড়েছেন নাকি পড়েননি?” উত্তর এলো, “না, পড়ে দেখিনি।” মাননীয় আদালত তখন দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন তাদের, “ডেভিড বার্গম্যানের আদালত অবমাননার মামলার পুরো রায়টা কি পড়ে দেখেছিলেন বিবৃতি দেবার আগে?” এবার আদালতে কবরের নিস্তব্ধতা। আনু মোহাম্মদ একটা ব্যখ্যা দিতে চেষ্টা করলেন।

আদালত তখন খুব আক্ষেপের সাথে বললেন, ডেভিডের ব্লগ পড়েননি, ডেভিড কী লিখেছেন তাও জানেন না, তার বিরুদ্ধে আসা রায়টাও পড়েননি আর চট করে একটা বিবৃতি দিয়ে দিলেন ৪৯ জন মিলে? দুম করে বলে দিলেন দেশে বাক স্বাধীনতা নাই? আদালতে তখনও কবরের গাঢ় নীরবতা বিরাজ করছিলো।

[সূত্রঃ ICT-BD [ICT-2] Miscellaneous Case No. 04 of 2014, প্যারা ৭৯-৮২ এবং আইসিআর ফাউন্ডেশনের আদালত প্রতিনিধি]

লক্ষ্য করুন, এরা সরকারকে বিতর্কিত করতে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যাকে অস্বীকার করতে সবসময় সোচ্চার। মুখে এরা প্রগতির কথা বলে, আদর্শের কথা বলে, কিন্তু তাদের কার্যকলাপ পাকিস্থানের এজেন্ডার সাথে একসূত্রে গাঁথা। উপরোক্ত ২৭ জনের ১/২ জন বাদ প্রত্যেকেই বার্গম্যানের সাজার প্রতিবাদে তার অপরাধ এবং রায় সম্পর্কে না জেনেই গণহারে সাক্ষর করে দিলেন, কাণ এখানে সরকারবিরোধিতার একটা স্কোপ রয়েছে, সেটা বুঝতে পেরেই।

মিল আরও একটা আছে। ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে প্রথম আলোর একটা অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন নাইমুল আবরার। আহত আবরারকে কলেজ সংলগ্ন একটি হাসপাতালে না নিয়ে শুধুমাত্র প্রথম আলোর সাথে চুক্তি থাকায় বহুদূরের অপর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তার আগে তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু না করে কালবিলম্ব ঘটানো হয় সার্বিক দায়িত্বে থাকা প্রথম আলোর কর্তাব্যক্তিদের অব্যবস্থাপনাজনিত করণে। যার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত নিথর পড়ে ছিল এই হতভাগ্য শিক্ষার্থী। হাসপাতালে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে সে মৃত।

এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক, সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা এহেন কোনো কাজ নেই, যা করেননি। এমনকি আবরারের বাবা-মাকে হুমকি দিয়ে রাতারাতি গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে কবর দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তারা সেটাই করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে মামলা হয়। মামলায় দায়িত্বশীল হিসেবে আনিসুল হক এবং মতিউর রহমানসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন মহামান্য আদালত। তখন তালিকার এই মানবাধিকার ব্যবসায়ীসহ ৪৭ জন জ্ঞানপাপী সেই হত্যাকান্ডের বিচার না চেয়ে উল্টো মহামান্য আদালত কর্তৃক জারিকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন!

[সুশীলতার আড়ালে বাংলাদেশের ডানপন্থী বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারের দোকানদারদের মুখোশ উন্মোচন]

বুয়েটের শিবিরকর্মী আবরার হত্যার ঘটনায় তারাই সোচ্চার ছিল, কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল সমর্থকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় মানবাধিকার জেগে উঠেছিল। কিন্তু রেসিডেন্সিয়ালের ছাত্র আবরারের বেলায় সেই মানবাধিকারের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এই দোকানদারদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কমন প্যাটার্নটা আশা করি অনেকটা পরিস্কার।

এবার তাদের সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিততে যাওয়া যাক।

হামিদা হোসেন: জন্মসূত্রে পাকিস্থানি নাগরিক হামিদা হোসেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক প্রপাগান্ডামূলক পরিসংখ্যান অনুসারে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিdr-kamal-with-his-wife ছাড়াই দেশে গুম হওয়া লোকজনের কাল্পনিক তথ্য নিয়ে কারসাজি করা হয়। মানবাধিকারের দোকান- আসক, ব্লাস্ট ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংস্থা অধিকার-এর বিভিন্ন প্রতিবেদনে রাজনৈতিক সেই তথ্য প্রকাশিত হয়। আবার তাদেরকে সূত্র ধরে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অর্থাৎ আবুলের সাক্ষী বাবুল, বাবুলের সাক্ষী আবুল। আর আবুল-বাবুলকে চন্দ্র-সূর্যের মত সাক্ষী মেনে সেই প্রতিবেদন পাঠানো হয় মার্কিন লবিস্ট ফার্মের কাছে। বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত সেই ফার্মগুলোর লবিংয়ে স্যাংশন আরোপ হয় র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী হিসেবে চিহ্নিত।

হামিদার আরেকটি পরিচয়, তিনি ড. কামাল হোসেনের স্ত্রী এবং ডেভিড বার্গম্যানের শাশুড়ি। ২৫শে মার্চ রাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিবেন বলে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসেন ড. কামাল, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমেদ। বাসায় দেখা করে আসছি বলে ড. কামাল পগাড় পার হয়ে যান, আর ফেরেননি। যুদ্ধের পুরো ৯ মাস তিনি পলাতক ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। হামিদার পরিবারের সাথে পাকিস্থানি সেনাশাসকদের দহরম-মহরম ছিল। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের আগেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তালিকা করা হয়েছিল বেছে বেছে হত্যা করার জন্য, অথচ ড. কামাল হোসেনকে নিরাপদে পাকিস্থানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা- আইএসআই’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল ওসমান মিঠ্ঠার আত্মজীবনী- আনলাইকলি বিগিনিংস-এ এ সম্পর্কে বিশদ তথ্য রয়েছে।

আরও পড়ুন:বাংলাদেশে তারেকের প্রক্সি দিচ্ছে কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান

বদিউল আলম মজুমদার: সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল। বদিউল আলম মজুমদাবাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ (!)। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর বাংলাদেশি শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বেশ গালভরা পরিচিতি। তার যাবতীয় যোগসূত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ মার্কিনিদের সাথে। মার্কিন বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেছেন তিনি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে অভিযুক্ত ইউএসএআইডি-এর সাথেও বদিউলের সম্পৃক্ততা অনেক পুরনো। সংস্থাটির ‘পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যানালাইসিস গ্রুপ’ প্রকল্পে চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর হিসেবে কাজ করেন। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী এই বদিউল।

দেশের কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থার বরাতে জানা যায়, বদিউল আমলম মজুমদারের সাথে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা- সিআইএ’র বেশ গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। দেশের ক্রান্তিকালেও তাকে দেখা যায়নি। ফিরে আসেন ১৯৯১ সালে, যখন দেশ স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করেছে ঠিক তখন। তার আগে বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র বদিউল মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা সংস্থা নাসায় পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিদেশি লেজুড় সংস্থা টিআইবি নিয়ে এই প্রবন্ধে আরও বিশদ আলোচনা হবে। আপাতত বদিউল নিয়ে আরও কিছু তথ্য দেখা যাক।

২০১৮ সালে এই বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে সিআইএ’র সমন্বয়ে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, তার স্ত্রী হামিদা হোসেন, সুজন সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গভীর রাতে গোপনে বৈঠকে বসেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন রাত-বিরাতে এমন একজনের বাড়িতে গোপনে বৈঠক করবেন- এর ব্যাখ্যা কী? স্থানীয় জনগণ হঠাৎ দেশবিরোধীদের এমন জমায়েত দেখে তাদের ওপর চড়াও হন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে ঢিল-পাটকেল ছোড়েন। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি গভীর চক্রান্ত চলছিল। সরকার হঠাতে সিআইএ-সহ বেশ কিছু সংস্থার মদদে মার্কিন দালালদের একাট্টা করার চেষ্টা চলছিল। সেই ঘটনার পর বার্নিকাটকে দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অত্যন্ত জঘন্য ব্যক্তি এই জাফরুল্লাহ। নিজেকেDr.Zafrullah মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতপ্রেমে অন্ধ এই বয়স্ক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর স্নেহ পেয়েছেন।বঙ্গবন্ধুর আনুকূল্যে তিনি গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বিপুল জায়গা-জমি পান। কিন্তু সেসব ব্যবহার করে তিনি দেশবিরোধিতায় অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের বিরোধিতার পাশাপাশি পাকিস্থানের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, সন্ত্রাসী জামায়াত-শিবিরের তোষণ, তাদের সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ এবং জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার তিনি। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্তুজা আলীকে ফোন করে নিজেদের ছাত্রীদেরকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে যৌন হয়রানির মামলা করাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন জাফরুল্লাহ।

আরও পড়ুন: বিদেশি শক্তির সহায়তা পেতে পাগল বিএনপি: জাফরুল্লাহ

বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করেন, মনগড়া এবং বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেন এই জাফরুল্লাহ চৌধুরী। করোনায় যখন দেশ কঠিন পরিস্থিতিতে ছিল, আর তা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বিনামূল্যে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করল, ঠিক সেসময় লোকজনকে বিভ্রান্ত করতে সেই ভ্যাক্সিন নিয়ে মিথ্যাচার এবং গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় ভারত এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করে দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এমনকি বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিথ্যাচার করে জনসম্মুখে ক্ষমাও চাইতে হয় তাকে। বাংলাদেশে গাঁজা এবং ইয়াবার মত ভয়াবহ মাদককে বৈধ করে দেওয়ার পেছনেও কাজ করছেন তিনি। গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাকরি দেয়ার নামে ডা. জাফরুল্লাহ বহু মেয়ের সম্ভ্রমহানি করেছেন বলে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক লাঞ্ছিত চিকিৎসক ২০১৮ সালে অভিযোগ করেন এবং তার দাবির প্রেক্ষিতে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা কর্মবিরতিও পালন করেন।

মাঝে মাঝে উদ্ভট বক্তব্য দিলেও ডা. জাফরুল্লাহর মূল এজেন্ডা দেশে জামায়াত-শিবির এবং হেফাজতের উগ্রবাদী নেতাদেরকে ক্ষমতায় বসানো। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হেন কোনো চেষ্টা বাদ দেননি তিনি। আদালত অবমাননার দায়ে তাকে জরিমানাও করেছিল মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। সেসময় জরিমানা না দিয়ে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার সাজা গ্রহণ করেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী জঙ্গিবাদের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থনও প্রকাশ করেছেন অনেক বছর ধরে। সরকার যখন জঙ্গি দমনে কঠোর হয়েছিল, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গিদের আটক, তাদের আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়া এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে জাফরুল্লাহও সরকারের সমালোচনা করে দাবি করেছিলেন, সরকার নাকি জঙ্গি নাটক করছে, সবই সাজানো কর্মকাণ্ড। চিহ্নিত জঙ্গিদের আটক করার পরেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে, বুঝিয়ে-শুনিয়ে ভালো পথে আসার আহ্বান দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার মত দাবি করেছিলেন। জঙ্গি অভিযানে নিহত জঙ্গিরা কেন মারা পড়ল- এ নিয়েও মায়াকান্না করেছেন এই দেশদ্রোহী ভণ্ড চিকিৎসক।

শাহদীন মালিক: সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে বিশেষজ্ঞের দরকার ছিল, তাই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় বঙ্গবন্ধু শাহদীন মালিকসহ অনেককে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দেন। সেখানে তিনি পাট্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’র পরিচালক। এছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বোর্ড অব ট্রাস্টি। দেশবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এই সিপিডি’র ডিস্টিংগুইশ ফেলো ও প্রথম নির্বাহী পরিচালক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য হলেন একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে যাওয়া তার আরেক সহপাঠী। দেবপ্রিয় পড়েছেন মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ঘুরে-ফিরে রসুনের গোড়া একজায়গায় বাঁধা।

এই শাহদীন মালিক একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বার্গম্যান, জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং আনু মুহাম্মদদের সাথে একইসাথে কাজ করেছেন। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং আনিসুল হককে নাইমুল আবরার হত্যাকাণ্ডের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বিবৃতিতেও সাক্ষর করেন। তিনি আবার মানবাধিকারের নামে বুয়েটের শিবিরকর্মী আবরারের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু কখনই আওয়ামী লীগের অগুণিত নেতা-কর্মীর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আওয়াজ করেননা। ভণ্ড সুশীলদলের অন্যতম প্রতিনিধি তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী হিসেবে সামাজিক বিভিন্ন আন্দোলনে সোচ্চার যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। প্রায়ই বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ জানান আন্তর্জাতিক মহলে। মূলত সরকারবিরোধিতার অংশ হিসেবে তিনি এই কাজগুলো করেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে অন্য সময় তার কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। বেশ কয়েকবছর আগে তার স্বামী অপহৃত হন ব্যবসায়িক কারণে প্রতিপক্ষের হাতে। কিন্তু তিনি সেসময় তার স্বামীকে পুঁজি করে সরকারবিরোধিতায় মেতে উঠেছিলেন। এমনকি কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানকে দায়ী করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে সরকারের সম্পৃক্ততা দাবি করে মুখরোচক গল্প ফাঁদেন।

এই রিজওয়ানা হাসানেরও সম্পৃক্ততা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন। মার্কিন দূতাবাসে নিয়মিত আসা-যাওয়া তার। এছাড়া পাকিস্থানি দূতাবাসেও তার যাতায়াত রয়েছে বলে একটি সূত্রের দাবি। মূলত পরিবেশের দোহাই দিয়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা তার নিয়মিত কাজ। অত্যন্ত ছোট এবং ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশের জন্য পরিবেশ-প্রকৃতি নিঃসন্দেহে সবসময় ঝুঁকিপ্রবণ। কিন্তু দেশের মানুষের সাথে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টও জরুরি। কিন্ত অহেতুক বাধাপ্রদানের পেছনে মূল এজেন্ডা হচ্ছে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী হিসেবে চিহ্নিত।

কিছুদিন আগে ঢাকার একটি খানাখন্দে ভরপুর জায়গাকে শিশুদের খেলার মাঠ দাবি করে তাতে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেন তিনি এবং তার পোষ্য লোকজন। মূলত সেই জায়গাটি একটি থানা ভবন নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত স্থান। এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা করেন তিনি, সেই জায়গায় ক্রিকেট খেলছে- এমন ছবি জন্য অবুঝ শিশুদেরও ব্যবহার করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সরকার কেনা জায়গাটি শিশুদের জন্য ছেড়ে দেয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেই স্থানটি এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে, সেখানে কেউ খেলাধুলা করে না। উল্টো মাদকসেবিদের আড্ডাটি আগের মতই আছে। আর বেলা-রও উদ্দেশ্যপূরণ হলো।

এই রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘকে। কিন্তু ২০০৪ সালে যখন গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটলো তখন তাকে উৎকণ্ঠিত হতে দেখা যায়নি, এ নিয়ে নিন্দা জানাতে শোনা যায়নি। সাংবাদিকরা যখন তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, আমি পরিবেশ নিয়ে কাজ করি। এসব (গ্রেনেড হামলা) আমার দেখার বিষয় নয়। সেই পরিবেশ নিয়ে কাজ করা রিজওয়ানা হাসান এখন জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। নিয়মিত রাজনৈতিক বক্তব্যও দেন। উদ্দেশ্য বোঝা কি বেশ কঠিন?

আলী রীয়াজ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রীয়াজ। ১৯৮৭ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পৃক্ততার শুরু। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং করছেন। ইসলাম, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ তার পছন্দের বিষয়। মূলত জঙ্গিবাদের পেছনে তিনি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব দেখতে পান। অর্থাৎ, জঙ্গিরা নিষ্পাপ, তাদেরকে দিয়ে কেউ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কাজটি করিয়ে নিচ্ছে- এমন অনেক গবেষণাপত্র আছে তার। বাংলাদেশে মাদ্রাসাকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদের যে উত্থান, তাকে তিনি অস্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি অনৈসলামিক এবং উদার একটি দেশে বসবাস করলেও বাংলাদেশে তিনি শরীয়া আইন কায়েমের স্বপ্ন দেখেন। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী হিসেবে চিহ্নিত তিনি।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ বিএনপি-জামায়াতের একনিষ্ঠ সমর্থক আলী রীয়াজের জন্য মর্মপীড়ার কারণ। তিনি ‘মোর দ্যান মিটস দ্য আই: এসেস অন বাংলাদেশি পলিটিকস’ নামের একটি বইতে বিএনপি-জামায়াতের প্রচারণা চালিয়েছেন কিছুদিন আগেই। বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশে জঙ্গি তাণ্ডব, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অপারেশান ক্লিন হার্ট- এর নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার, হাওয়া ভবনের কাণ্ড, দেশের তথ্য পাচারের অজুহাতে সাবমেরিন কেবল সংযোগ না নেওয়া, বিদ্যুতের নামে খাম্বা কেলেঙ্কারি, ইয়াজউদ্দিন মার্কা নির্বাচন, ভুয়া ভোটার তালিকা, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা… ইত্যাদি নিয়ে আজ অব্দি দু’কলম লিখেননি রীয়াজ। লিখবেন কীভাবে? তিনি বিদেশে বসে লিখতেন মূলত জামায়াতের মুখপত্র ‘আমার দেশ’ পত্রিকায়। সেখানে তো এসব লেখা যায় না।

বর্তমান বাংলাদেশের ডিজিটাল উত্থান, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা, বাংলাদেশের সবল অর্থনীতি, উৎপাদনে উন্নত বিশ্বকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা- এসব রীয়াজের চোখে পড়ে না। তিনি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে যা লিখেন, তার বিষয়বস্তু হলো- সরকার ‘আলেমদের’ গ্রেপ্তার করে রেখেছে বিনা দোষে, ভিত্তিহীন গুমের খবর ইত্যাদি নিয়ে। অথচ তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৬ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়, সাড়ে ৪ হাজার বেওয়ারিশ লাশ মেলে (মিসিং পার্সনস ডাটাবেজ, ইউএস)- এসব নিয়ে মার্কিন দালাল রীয়াজের সাড়াশব্দ নেই। রীয়াজের মত একশ্রেণির মানবতার দোকানদারদের ক্রমাগত উস্কানিতে আমার দেশ পত্রিকায় লেখালেখির কারণে দেশে ব্লগার, লেখকদের টার্গেট কিলিং করা হয়েছিল। বাংলাদেশে মৌবাদের বিস্তারের পেছনে তার মত লোকদের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।

আনু মুহাম্মদ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করছেন আনু মুহাম্মদ। পাশাপাশি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব। মূলত শিক্ষাদানের নামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দেশের জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাত সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা করার জন্য গঠিত কমিটি একটি উৎপাত ছাড়া আর কিছুই না। বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী কমিটির লোকজনের কেবলা হলো চীন। বাংলাদেশে যেসব প্রকল্পে চীনা অর্থায়ন এবং কারিগরি সহায়তা চলমান আছে, সেসব খাত নিয়ে এই কমিটির কোনো আওয়াজ পাওয়া যায় না, বাধাও দেয় না। কিন্তু চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশি সম্পৃক্ততা থাকলেই তারা রে রে করে তেড়ে আসেন। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী হিসেবে কুখ্যাত তিনি।

যেমন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতের সম্পৃক্ততা থাকায় এ নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আনু মুহাম্মদকে বলেছিলেন, তিনি চাইলে একটি হেলিকপ্টারে করে রামপাল সফর করিয়ে আনতে পারে সরকার। সেখানে পরিবেশ ঠিকঠাক আছে কি না দেখে আসুক। কিন্তু আনু সাহেব এ নিয়ে আর সাড়া দেননি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও বিরোধিতা করেছিল এই কমিটি। অথচ সারাবিশ্বে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, দীর্ঘমেয়াদি ও নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু যেহেতু এখানে চীনা সম্পৃক্ততা নেই, তাই এ নিয়ে বিস্তর আন্দোলন চালিয়েছিল তারা। আনু মুহাম্মদ তার বিভিন্ন বক্তৃতায় বাংলাদেশের সমালোচনা করেন, উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দেন। কিন্তু বিদ্যুতের বেলায় তিনি উন্নত বিশ্বের কথা বলেন না।

রাশিয়ার ৪৬% বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় গ্যাস থেকে, ১৮% কয়লা ও ১৭% পারমাণবিক চুল্লির মাধ্যমে। রাশিয়াতে ৩১টি পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে। চীনে ৫৬% বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩% গ্যাস থেকে, ৩০% কয়লা ও ২০% পারমাণবিক চুল্লি থেকে। কিন্তু, আনু মুহাম্মদদের দৃষ্টিতে সব দোষ বাংলাদেশের বেলায়, সব দোষ শেখ হাসিনার বেলায়। বিদ্যুৎ না থাকলে তার দায় শেখ হাসিনার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করা হলেও দোষ শেখ হাসিনার। মূলত ঢাকায় রাজপথ আটকে দিয়ে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করাই এই কমিটির কাজ। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে এই কমিটি অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সাথে ভিড়ে গিয়ে সমাবেশে জনঘনত্ব বাড়াতে সহায়তা করে আনু মুহাম্মদরা। জঙ্গিদের প্রতি তাদের মায়াকান্না দেখা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে কাছা বেঁধে নেমে পড়েন তারা। শুধু এক্ষেত্রেই তাদের মানবতার দোকান খোলা থাকে।

আসিফ নজরুল: বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজের এক কলঙ্ক এই আসিফ নজরুল।আসিফ নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে আসিফ নজরুল নামে কোনো শিক্ষক নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অনুসারে তার নাম- নজরুল ইসলাম। কিন্তু ভাব নিতে নিজেই নিজের নাম দেন আসিফ নজরুল। যদিও তার ডাক নাম আসিফ নয়। পারিবারিক নাম- সেলিম। এই আসিফ নজরুল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরোধিতাকারী এবং যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামের পে-রোলে পালিত একজন পেইড বুদ্ধিজীবী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘গণতদন্ত কমিশন’-এর সংগৃহীত যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা- আইএসআই’র হাতে তুলে দেন তিনি। তৎকালীন বিএনপি সরকারের বদান্যতায় প্রাপ্ত স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পূর্বে গণতদন্ত কমিশনের সচিবের পদ থেকে ইস্তফা দেন। সেই নথিপত্র পরে আর পাওয়া যায়নি। সেই নথিপত্র গায়েবের বিনিময়ে তিনি ঢাবিতে চাকরি পেয়েছেন বলে জানান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

আরও পড়ুন: বুদ্ধিজীবী না বলে তাদের বুদ্ধি ব্যবসায়ী বলাটাই সমীচীন মনে করি

নথিপত্র গায়েবের বিষয়টি জেনে ক্ষুব্ধ জাহানারা ইমাম সে সময় সাংবাদিক কামাল পাশা চৌধুরী এবং অধ্যাপক শাহরিয়ার কবিরকে বলেছিলেন- “আসিফ যদি কখনও আমার বাড়ি বা আমাদের কোনও সভায় আসে, তবে তাকে সোজা জুতাপেটা করবি।” যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য জামায়াতের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর তালিকা দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছিলো। ২৭শে আগস্ট ২০১০ তারিখে প্রকাশিত সাংবাদিক মাসুদ কার্জনের সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী আমির রফিকুল ইসলামের গ্রেপ্তারের পর উদ্ধারকৃত নথিতে মিলেছে সংগঠনের গুডবুকে থাকা আসিফ নজরুল, কমরেড সাইফুল হক ও ফরহাদ মজহারদের নাম। ডা. জাফরুল্লাহ ও বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা ও আদালত অবমাননায় সাজার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী এই আসিফ নজরুল।

আসিফ নজরুলের বেহায়াপনা ও বিকৃত সেক্স মিশন সম্পর্কে অনেকেই প্রকাশ্যে অবগত। ড. তুহিন মালিক-এর সামনেই অপর এক বন্ধুকে আসিফ নজরুল বলেন, “তোমাদের মাথায় যত চুল আছে- এ জীবনে সেই সংখ্যক নারীর সঙ্গে আমি শুয়েছি”। যে কোনো ধরনের পার্টিতে আসিফ উপস্থিত থাকলে মদের গ্লাস নিয়ে সুন্দরী নারীদের গায়ে ঢলে পড়েন। স্টাইল ওয়াচ সম্পাদক ও সেলেব্রেটি করভী মিজান ও ব্যারিষ্টার তানিয়া আমীরের ওপরেও ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে তাকে। কাকতালীয়ভাবে দুটি পার্টির ভেন্যুই ছিল ঢাকা ক্লাব। মধ্যপ্রাচ্যে এক পাকিস্থানি নাগরিকের স্ত্রীর সঙ্গে গাড়িতে তার যৌনলীলার দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আসিফ নজরুল এখন ফেসবুকে জাতিকে নসিহত করেন, গুজব রটান এবং জঙ্গিবাদে উসকানি দেন। দেশ এবং স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিটি কার্যকলাপে আসিফ নজরুল সম্পৃক্ত।

পারভীন হাসান: আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান। কেন্দ্রীয় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রয়েছে তারও। এই টিআইবি বাংলাদেশের উন্নয়নবিরোধী একটি সংস্থা। মূলত জার্মাানভিত্তিক সংস্থা টিআই-এর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এরা কাজ করে বাংলাদেশে। টিআই এবং টিআইবি’র মাঝে বিস্তর ফারাক। ২০১৮ সালে টিআই কর্তৃক প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক’ বা সিপিআই-২০১৮ তে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তথ্যগত মিথ্যাচার চালায় টিআইবি।

সম্পূর্ণ দেশীয় স্বসুশীলদের নিয়ে গড়া একটি ট্রাস্টি বোর্ড আছে এই টিআইবির। তাদের কর্পোরেট সংগঠনও আছে, তাতে নিজস্ব আয় এবং ব্যয়ও আছে। অথচ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া আয়ের হিসাব ট্রান্সপারেন্ট নয়, বিস্তারিত কিছু নাই। কার কাছ থেকে কী বলে বা কী দেখিয়ে কত টাকা বা ডলার কী শর্তে নিয়েছে তার উল্লেখ নাই- শুধু একটা থোক পরিমাণ দেয়া আছে। দুর্নীতির ধারণাসূচক বা সিপিআই বিশ্বব্যাপী পরিচালনা ও প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বা টিআই। সেকণ্ডারি ডাটাভিত্তিক ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে সেই সূচক করা হলেও তার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে, আর সব দেশের জন্য প্রায় একই পদ্ধতি।

সেই সূচক ওয়েবসাইটে সারা বিশ্বের জন্য প্রকাশের পর টিআইবি একটা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদেরকে সহি টিআই হিসেবে জাহির করে। বাকি সারা বছর টিআইবি আর যা যা জিনিস উৎপাদন করে তা সবই তাদের দোকানের নিজস্ব পণ্য, যার মেথোডোলজি, ডাটা ইন্টেগ্রিটির সাথে টিআই-এর কোনোই সম্পর্ক নাই। এই টিআইবি বিশ্বব্যাংক ও মার্কিনসুশীল মহলের সাথে গলা মিলিয়ে বলেছিলো পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। কানাডার আদালতে সেই দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর টিআইবি সেই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এই সংস্থার অন্যতম হোতা পারভীন হাসান। মার্কিনিদের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে গলাবাজি করেন। কিন্তু ১৫ই আগস্ট এবং ২১শে আগস্ট ইস্যুতে তার কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী হিসেবে চিহ্নিত পারভীন হাসান।

ফিরদৌস আজিম: বাংলাদেশের প্রখ্যাত স্থপতি প্রয়াত বশিরুল হকের স্ত্রী ফিরদৌস আজিম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও কলা বিদ্যা বিভাগের চেয়ারপারসন। নিয়মিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার যাতায়াত। বছরের একটা বড় অংশ সেখানেই কাটান। মার্কিন প্রশাসনের অনেক হোমরা-চোমরার সাথে তার ওঠা-বসা বলে শোনা যায়। বাংলাদেশের জন্য তার কোনো ব্যক্তিগত অবদান না থাকলেও বুদ্ধিজীবী সমাজে তার নাম শোনা যায় বিভিন্ন চিহ্নিত পত্র-পত্রিকার কল্যাণে। বক্তৃতা-বিবৃতি সেভাবে দেখা না গেলেও নাম ফলাওভাবে প্রচারের স্বার্থে বিভিন্ন বিবৃতিতে সাক্ষরকারী ২০-৩০-৪০ জনের তালিকায় তার নাম দেখা যায়। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না হলেও তার অবস্থান বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডার সাথে মিলে যায়। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী ফিরদৌস আজিম।

আলী ইমাম মজুমদার: কট্টর বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত। বিএনপি সরকারের আমলে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেনাসমর্থিত ফখরউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেবিনেট সচিব ছিলেন। তিনি টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য [লক্ষ্য করুন, এখানেও সেই টিআইবি]। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এবং ৩রা নভেম্বরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে দেশ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে, সেই সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন আলী ইমাম মজুমদার। এর আগে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পেশাগত জীবনের প্রায় পুরোটাই বিএনপি-জামায়াত এবং উগ্রবাদীদের পক্ষে কাজ করেছেন আলী ইমাম মজুমদার। সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর রাষ্ট্রের সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো যখনই শূন্য হয়েছে, কোনও না কোনোভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে এই আমলার নাম। নিজেদের স্বার্থে সিইসি হিসেবেও তাকে চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। তাকে সিইসি করা হলে তিনি অবধারিতভাবেই আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার জন্য চেষ্টা করতেন, বলাই বাহুল্য। তাছাড়া এখন যে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে, তখন কমিশনের নিরপক্ষেতা নিয়ে কথা উঠত।

বাংলাদেশের ইতিহাসের রক্তক্ষয়ী ট্র্যাজেডিগুলো নিয়ে এই সাবেক আমলাকে কখনই কথা বলতে দেখা যায়নি। বরং নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলেছেন সূক্ষ্মভাবে। ১৫ই আগস্ট এবং ২১শে আগস্টের নৃশংসতা নিয়ে কথা বললে বিএনপি-জামায়াতের বিরাগভাজন হতে হবে, আর তাতে পরিণতি কী হবে, সেটা সহজেই বুঝতে পারেন তিনি। জীবন সায়াহ্নে এসেও সেই আনুগত্য ভুলতে পারেন না তিনি। এখন মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে সরকারের বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার আমলে গুম-খুন হওয়া ২১ হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বেলায় মুখে কুলুপ।

শহিদুল আলম: দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী আলকচিত্রী শহিদুল আলম। বিদেশি শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে কাজ করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে সরকারকে বিব্রত করা মূলত তার এসাইনমেন্টের একটি অংশ। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেন তিনি। আলোকচিত্রী হয়েও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কাতারভিত্তিক গুজবমাধ্যম আল-জাজিরায় সাক্ষাৎকারে সেই আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করেন তিনি। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ‘মিথ্যা ও অসত্য’ তথ্য দিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের উসকে দেন।

জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকা হেফাজতে ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক, জেএমবির অন্যতম সামরিক প্রশিক্ষক মুফতি হারুন ইজহারের সাথে শহিদুলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই শহিদুল আলম একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার আবদুস সবুর খানের ভাগনে। যে সবুর খান ছিলেন আইয়ুব খান সরকারের সময় মন্ত্রী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্থানকে সমর্থন করেছিলেন এই সবুর খান। বংশপরিক্রমায় শহিদুল আলমের পাকিস্থানপ্রীতি প্রবল। তার মা- অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কাজী আনোয়ারা মনসুরের পাকিস্থানপ্রেমের ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী এই শহিদুল।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক লবিস্ট চক্রঃ কে এই শহিদুল আলম?

শহিদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা রয়েছে সাবেক শিবির সভাপতি এবং বর্তমানে জামায়াত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুর সাথেও। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের উগ্রবাদী কর্মী-সমর্থকদের প্রতি রয়েছে শহিদুলের অপার টান। মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কওমী মাদ্রাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে উসকানি দিয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করছেন শহিদুল। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গোড়ায় কুঠারাঘাত করার কাজটিই সুকৌশলে করে যাচ্ছেন শহিদুল। পাশাপাশি বাক স্বাধীনতার চর্চার নামে মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা এবং গুজব ছড়াচ্ছেন তিনি।

গীতি আরা নাসরিন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন পুরোদস্তর সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা একজন তথাকথিত সুশীল। দেশের বিভিন্ন ইস্যুকে রাজনীতিকরণ, তাকে সরকারবিরোধী অবস্থানে তুলে ধরার কাজটি করেন সুকৌশলে। মানবাধিকারের নামে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডার সুরে সুর মেলান তিনি। শিক্ষক রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় এই শিক্ষাবিদ। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের জন্য মানবাধিকারের দোকান সবসময় তার খোলা। কিন্তু আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী দূরে থাক, ২১শে আগস্টের মিথ্যা মামলায় জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়া জজ মিয়াদের মত বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির ভিক্টিমদের পক্ষে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি।

শিরীন হক: নারী অধিকার সংস্থা নারীপক্ষের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক আরেক মানবতা ব্যবসায়ী। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব তার নারীপক্ষ। সমাজের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু, কিন্তু এবং কিন্তু- তার এই সাইনবোর্ড আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মানবতার কথা বলেন মুখে, কিন্তু অবস্থান নেন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট বার্গম্যানদের বাক স্বাধীনতার পক্ষে, আদালত অবমাননাকারীদের পক্ষে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে দেশজুড়ে রক্ত ঝরিয়েছে অগুণিত সাধারণ মানুষের, সেই জামায়াত-শিবির-হেফাজতের আটককৃত জঙ্গিদের পক্ষে। কিন্তু যথারীতি তার মুখে কুলুপ আঁটা থাকে ১৫ই আগস্ট এবং ২১শে আগস্টের হতাহত এবং ভিক্টিমদের বিষয়ে।

২১শে আগস্টে ২৪ জন নিহতের পরিবার, আহত ৫ শতাধিক জীবিত মানুষ- যারা শরীরে বহন করে চলেছেন হাজার হাজার স্প্লিন্টার, সেই ভুক্তভোগীদের বেলায় এই মানবতা ব্যবসায়ীরও দোকান যথারীতি বন্ধ। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী হিসেবে চিহ্নিত শিরীন হক।

হানা শামস আহমেদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক চিহ্নিত দালাল। কথায় কথায় মার্কিনিদের তাঁবেদারি করা, মার্কিনিদের উদাহরণ টানা, মার্কিনিদের অর্থে লালিত-পালিত তথাকথিত সুশীল। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এজেন্ডাভিত্তিক কাজের দায়ে অভিযুক্ত হানা শামস আহমেদ। বাংলাদেশের ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব মাহফুজ আনামের ডেইলি স্টারের মদদপুষ্ট হানা শামস আহমেদও যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এক মানবাধিকার ব্যবসায়ী। নৃবিজ্ঞানী হলেও তার ব্যবসা মানবাধিকার নিয়ে। নারীবাদ, বর্ণবৈষম্য ইত্যাদি গালভরা বিষয় নিয়ে কাজ করেন তিনি। কিন্তু তার সব কাজের এজেন্ডা মিলে যায় বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে এসে। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী এই হানা শাসন আহমেদ।

অরূপ রাহী: নিজেকে লালন সাঁই বিষয়ে গবেষক এবং সংস্কৃতিমনা দাবি করা অরূপ রাহীও ডা. জাফরুল্লাহ এবং বার্গম্যানের আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী। নিজেকে সংস্কৃতিকর্মী দাবি করা কেউ কীভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে- এ এক আজব প্যারাডক্স। নিজেকে মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচয় দেন অরূপ রাহী। তার মানবাধিকারও শুধু বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে।

নূর খান লিটন: আরেক মানবাধিকারের দোকানদার নূর খান লিটন। ডা. জাফরুল্লাহ এবং বার্গম্যানের আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী লিটন জঙ্গিবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের কেন জনসম্মুখে হাজির করা হয়, কেন তাদেরকে এভাবে জঙ্গিবাদী সরঞ্জামসহ উপস্থাপন করা হয় মিডিয়ার সামনে- এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষে ভোগা লিটনের দাবি, এভাবে জঙ্গিদেরকে সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে! এক অদ্ভূত সাইকোলজি জঙ্গিপ্রেমি মানবাধিকারের এই দোকানদারের। জামায়াত-শিবির এবং হেফাজতের তাণ্ডবকারীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে প্রায়শ বক্তব্য দেন, তাদের গ্রেপ্তার অবৈধ আখ্যা দিয়ে মুক্তির দাবিও জানান। পুরোদস্তুর সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত নূর খান লিটন।

রেহনুমা আহমেদ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু সরকারের আমল থেকে গুজব, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারী হিসেবে চিহ্নিত পত্রিকা নিউএইজ-এ নিয়মিত লিখেন রেহনুমা আহমেদ। সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট এবং মানবাধিকারকর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। ডা. জাফরুল্লাহ ও ডেভিড বার্গম্যান কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টা এবং আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষর করে নিজের নাম কুখ্যাতদের তালিকায় উঠিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনা নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত দেশদ্রোহী আদিলুর রহমানের তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা- অধিকার এর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে জঙ্গিদের পক্ষাবলম্বন করেন এই রেহনুমা।

স্বপন আদনান: সিঙ্গাপুরস্থ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. স্বপন আদনানের নাম পত্র-পত্রিকার কল্যাণে উঠে আসে মূলত পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিতর্কিত কিছু লেখালেখির কারণে। অর্থনীতিবিদের তকমা সেঁটে সরকারের পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সরাসরি বিরোধিতা করেন তিনি সবসময়। একটি প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন- ‘পুনর্নির্বাচনের আশায় সরকার হয়তো যে কোনো পথে এগিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রতীকি সূচনা শুরু করার পথে চলতে পারে। তবে বাংলাদেশের মানুষ হয়তো এত বোকা না, যে তারা এই অবস্থায় প্রকল্পের বাস্তবায়নের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করবে।’ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি নিজের ভ্রান্ত এবং গর্দভসুলভ ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে জাতির কাছে ক্ষমা চাননি।

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা আদিলুর কোন যুক্তিতে মানবাধিকার কর্মী ?

বিএনপি-জামায়াতপন্থী বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি প্রায়শ উন্নয়নবিরোধী লেখা প্রকাশ করেন। তার এসব আবর্জনাসুলভ লেখাগুলো প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পত্রিকাতেও দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিজেরে নামের সাথে মানবাধিকার কর্মী টাইটেল যুক্ত করেছেন। মূলত সরকার বিরোধিতার কাজে এই টাইটেলটি ব্যবহৃত হচ্ছে। যথারীতি ১৫ এবং ২১শে আগস্টের বিষয়ে নীরবতা পালন করেন তিনি। অন্য সময় তার মানবতার দোকান খোলা থাকে। বিভিন্ন বিবৃতিতে সাক্ষর করে জাতিকে তার এক্সিস্টেন্সের জানান দেন।

সঞ্জীব দ্রং: কলাম লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী সঞ্জীব দ্রং আদিবাসী ফোরাম নামের একটি সংগঠনের নেতা, গারো জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত। মূলত আদিবাসীদের নিয়ে সোচ্চার এবং লেখক হিসেবে তার পরিচিতি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ৩০-৩৫ সুশীল বা বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতিতে সাক্ষর প্রদানকারী হিসেবে। মানবাধিকারের লাভজনক ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন বলে অনেকের অভিমত।

সামিনা লুৎফা: কট্টর আওয়ামী বিরোধী হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের ঘটনাকে বেআইনি এবং অন্যায় সিদ্ধান্ত বলে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন এই শিক্ষক। ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনা নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত দেশদ্রোহী আদিলুর রহমানের তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা- অধিকার এর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে জঙ্গিদের পক্ষাবলম্বন করেন সামিনা। নিজেকে প্রগতিশীল এক নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচয় দিলেও মূলত বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সুহৃদ তিনি।

শাহনাজ হুদা: ডা. জাফরুল্লাহ এবং বার্গম্যানের আদালত অবমাননায় সাজা পাওয়ার প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে সাক্ষরকারী ড. শাহনাজ হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন শিক্ষক এবং আরেক কালপ্রিট আসিফ নজরুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শাহনাজ হুদার আরেকটি পরিচয় তিনি স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার ধর্ম, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী শামসুল হুদা চৌধুরীর সন্তান। পারিবারিকভাবেই বিএনপি-জামায়াতের আদর্শে অনুপ্রাণিত শাহনাজ হুদা কট্টর আওয়ামী বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তার মানবাধিকারের দোকান কাদের জন্য খোলা, এ আর খোলাসা করার কিছু নাই।

তবারক হোসেইন: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেইন শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতপন্থী হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছেন। ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনা নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত দেশদ্রোহী আদিলুর রহমানের তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা- অধিকার এর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে জঙ্গিদের পক্ষাবলম্বন করেন তবারক হোসেইন। আইনজীবীরা মক্কেলদের স্বার্থ অনুসারে যে কোনো দিকেই ঝুঁকতে পারেন, মক্কেলদের পয়সায় তারা কথা বলেন। সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকারের বিষয়ে তার একাগ্রতায় স্পষ্ট, ট্যাঁকে বেশ ভালো পয়সাকড়ি ঢুকছে কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের কাছ থেকে।

নাসের বখতিয়ার: সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনা নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত দেশদ্রোহী আদিলুর রহমানের তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা- অধিকার এর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে জঙ্গিদের পক্ষাবলম্বনকারী হিসেবে চিহ্নিত। জীবনের এই ধাপে এসে নাম ফাটানোর ঝোঁক উঠলে সেটা বন্যার জলের মত গতি পায়। ফলাফল- বিভিন্ন ইস্যুতে ৩৭ জন, ৪২ জন, ২৫ জন, ৪৯ জনের বিবৃতিদাতা সুশীলের তালিকায় নিজের নাম পত্রিকায় ছাপা দেখার জন্য ঢুকে পড়েছেন তিনিও। এর মাধ্যেমে মনের গহীনে সুপ্ত থাকা বিএনপি-জামায়াতপ্রেম সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডকে মানবাধিকার কর্মীর দায়িত্ব বলে মনে করছেন।

সুব্রত চৌধুরী: গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীও আদিলুরের নিষিদ্ধ দোকান- অধিকারপ্রেমি হিসেবে চিহ্নিত। সুব্রত চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকেই ড. কামালের পিছে পিছে ঘুরেছেন। গণফোরামের রাজনীতি করলেও কখনও নির্বাচনে যেতে পারেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয় ঐক্য গঠনে এবং বিএনপির সঙ্গে লিঁয়াজোর বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই সুব্রত চৌধুরী দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিএনপি নেতা নিতাই রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ঐক্যফ্রন্ট গঠনে অবদান রাখার পুরস্কার হিসেবে ঢাকা-৬ আসনে মনোনয়ন পান।

বছরে ১০ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে হলফনামায় সুব্রত উল্লেখ করেছেন তার বাসায় মাত্র ২ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী রয়েছে। সেই সাথে তার জমির মূল্য ৫ হাজার টাকা বলে দাবি করেছেন। ড. কামাল হোসেনের ন্যায় আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতার উদাহরণ দেখিয়েছেন এই আইনজীবী। মানবাধিকারের নামে দোকান খুলেছেন, কিন্তু মিথ্যাচার যে মজ্জাগত, তার উদাহরণ স্পষ্ট।

নোভা আহমেদ: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ। বৈচিত্রময় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই শিক্ষক নিজেকে প্রগতিশীল দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সরকারবিরোধী অবস্থান তার সুস্পষ্ট। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের প্রতি তার প্রেম উথলে ওঠে। তার আরেক পরিচয়, তিনি প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ-এর কন্যা। নোভার ছোট বোন শীলা আহমেদ লম্পট আসিফ নজরুলের চতুর্থ বিবি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি এবং দেশে ক্যু ঘটানোর জন্য উসকানি দেওয়ার কারণে আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেয় ছাত্রলীগ। আর তাতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, গর্ত থেকে সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসে তথাকথিত মানবাধিকারের দোকান খুলে বাক স্বাধীনতার পসরা সাজায় তারা।

৬৪ বিশিষ্ট নাগরিকের নামে এক বিবৃতি বেরোয় আর তাতে সাক্ষর করে এই নিবন্ধের তালিকার সবাই। তাতে নোভা আহমেদও ছিলেন, বোন জামাইয়ের ইজ্জত বলে কথা! জাতির কোনো ক্রান্তিকালে নোভার সাড়া মেলে না। ১৫ই আগস্ট, ২১শে আগস্ট নিয়ে সুশীলতার মুখোশ এঁটে মুখে কুলুপ আঁটেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের বেলায় এসে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। খালেদা জিয়ার বিশেষ আনুকূল্য পাওয়া এবং জিয়াউর রহমানের গুণমুগ্ধ হুমায়ূন আহমেদ-এর কন্যা নোভাও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। শুধু তা-ই নয়, সচিবালয়ে সরকারের স্পর্শকাতর নথি চুরি করে হাতেনাতে ধরা খাওয়া প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতেও তিনি ছিলেন সোচ্চার! বড় অদ্ভূত এদের সাইকোলজি। নষ্ট এবং দুষ্টু লোকদের প্রতি তাদের মানবতার দোকান জমজমাট সবসময়।

সালমা আলী: মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। ২০১৬-তে প্রায় তিনশ’ দরিদ্র মানুষের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সালমা আলীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। জানা যায়, সালমা আলীসহ অভিযুক্তরা পরস্পরের যোগসাজশে রেশন দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে কিস্তিতে ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন। ২০১৫ সালের ১লা জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে নগরীর চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় দরিদ্র নারী-পুরুষদের কাছ থেকে কিস্তিতে টাকাগুলো গ্রহণ করেন। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সংস্থার প্যাড ব্যবহার করে রেশন দেওয়া এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির কথা বলে এসব টাকা নেওয়া হয়। পরে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। এরাই আমাদের মনবতার সবক দেয়!

অথচ কখনো শোনা যায়নি, ২১শে আগস্টের হতাহতদের পক্ষে আইনি লড়াইতে নেমেছেন সালমা আলী। কারণ তারা যে আওয়ামী লীগের কর্মী! ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত গুম-খুনের শিকার ২১ হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর পরিবারের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য কখনো তার মানবাধিকারের দোকান খুলেছেন বলেও জানা নেই। আজ তাদের মায়াকান্না শোনা যাচ্ছে কিছু গুজবের ওপর ভিত্তি করে। মানবতার এই দোকানদারদের এমনকি লজ্জাও হয় না!

পরিশেষ:
যে ২৭ জন ব্যক্তি বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গুম-খুন নিয়ে বিদেশিদের নালিশ দিতে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন, তাদেরকে আবার ‘বিশিষ্ট নাগরিক’, ‘মানবাধিকার কর্মী’ আখ্যা দিয়ে পত্রিকাগুলো ব্যাপক কাভারেজ দিচ্ছে, টিভি মিডিয়ায় ব্যাপক ফুটেজ দেওয়া হচ্ছে, তাদের গোমর ফাঁস করা হলো। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে হলে ১৫ই আগস্ট, ২১শে আগস্টের মত নৃশংসতার কথাও উঠে আসতে হবে। ৩০ লাখ নর-নারী হত্যার জন্য গণহত্যার দায় স্বীকার করে নেওয়ার জন্য সরাসরি পাকিস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার দায়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেওয়া বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিতে হবে, বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর ২২ বার প্রাণঘাতী হামলার প্রতিবাদ করতে হবে, ভুক্তভোগীদের ব্যাপারে কথা বলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে, দেশবিরোধীদের প্রতিহতে একমত হতে হবে। যদি তা না পারে, তবে দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে, ধিকৃত হতে হবে। সর্বস্তরে দাবি তুলতে হবে- মানবাধিকারের তথাকথিত দোকানগুলো বন্ধ হোক।

আরও পড়ুন: