
২০১৩ সালে ডিজেলের সাথে অকটেন এর মূল্যের ব্যবধান ছিল লিটার প্রতি ৩১টাকা এবং পেট্রোল এর ব্যবধান ছিল ২৮ টাকা। ২০১৬ সালে ডিজেল এর সাথে অকটেন এর মূল্যের ব্যবধান ছিল লিটার প্রতি ২৪ টাকা এবং পেট্রোল এর ব্যবধান ছিল ২১ টাকা। ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে যখন ডিজেল এর দাম বৃদ্ধি করা হয় তখন অকটেন/পেট্রোল এর দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। বর্তমানে ডিজেল এর সাথে অকটেন ও পেট্রোল এর দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিজেল এর সাথে অকটেন এর ব্যবধান লিটার প্রতি ২১ টাকা এবং পেট্রোল এর ব্যবধান লিটার প্রতি ১৬ টাকা যা পূর্বের তুলনায় অনেক কম।
আরও পড়ুন : বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেবে
দেশে অকটেন ও পেট্রোল অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে অকটেন ও পেট্রোল মূলতঃ ইস্টার্ণ রিফাইনারীর ক্রুড অয়েল ও ন্যাফথা থেকে এবং পেট্রোবাংলার কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
অকটেন ও পেট্রোল এর কাঁচামাল ক্রুড অয়েল যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সাথে সম্পর্কিত সেহেতু ক্রুড অয়েল এর দাম বৃদ্ধি পেলে অকটেন ও পেট্রোল এর দামও বৃদ্ধি পাবে।
সম্প্রতি অকটেন ও পেট্রোল এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে অকটেন/পেট্রোল উৎপাদনের কাঁচামাল ন্যাফথা ও কনডেনসেট বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। আমদানিকৃত উক্ত ন্যাফথা ও কনডেনসেট থেকে স্থানীয়ভাবে অকটেন ও পেট্রোল উৎপাদন করা হলে এর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে অকটেন এর প্লাটস-এ প্রকাশিত মূল্যের উপর ভিত্তি করে নিরূপণপূর্বক পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন : জ্বালানি তেলের মূল্যসমন্বয় নিয়ে কি বলছেন অর্থনীতিবিদরা? কতটুকু যৌক্তিক এই মূল্য সমন্বয়?
সুতরাং, অকটেন ও পেট্রোল এই দুটি পণ্যের কাঁচামাল ক্রুড অয়েল / ন্যাফথা / কনডেনসেট আন্তর্জাতিক বাজারের সহিত সম্পর্কিত হওয়ায় অকটেন ও পেট্রোল এর স্থানীয় মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সম্পর্কিত।
উদাহরণ স্বরুপ, একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিপিসি জুলাই ২০২২ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে লিটার প্রতি ১০১.৯৩ টাকা মূল্যে ন্যাফথা থেকে উৎপাদিত অকটেন ক্রয় করেছে। উক্ত মূল্যের সাথে বিপিসি/তেল বিপণন কোম্পানিসমূহের অপারেশনাল ও আনুসাঙ্গিক খরচ এবং গেজেট অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে পরিবহণ, বিক্রয় ও বিপণন খরচ যুক্ত করে বিপিসি পর্যায়ে কস্টিং দাঁড়ায় লিটার প্রতি ১২০.৪২ টাকা। কিন্তু বিপিসি তা এতদিন গ্রাহক পর্যায়ে লিটার প্রতি ৮৯ টাকায় বিক্রি করছিল। ফলে বিপিসি’র লোকসান ছিল ৩১.৪২ টাকা। মূল্য সমন্বয়ের কারণে এখন অকটেন এর ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্য লিটার প্রতি ১৩৫.০০ টাকা এবং বিপিসি’র কস্টিং লিটার প্রতি ১২৫.৬৪ টাকা অর্থাৎ লিটার প্রতি ৯.৩৬ টাকা লাভ হচ্ছে। একই নিয়ম পেট্রোল এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রতি নিয়ত ওঠানামা করে।
আরও পড়ুন : দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এবং কিছু পত্রিকা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে
এই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যে জিনিসটা সরকারের করা উচিত ছিল আরো আগেই, সেটা হলো এখন তেলের দাম বাজারভিত্তিক করে দেওয়া। বাজারের সঙ্গে তেলের দাম ওঠা-নামা করবে। এটা বাজারভিত্তিক করে দিলে বিশ্ববাজারে দাম কমলে তার সুফল ভোক্তারা পাবেন, না হলে ভোক্তারা তার সুফল পাবেন না।’
একবার দাম বাড়ার পর বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তার সুফল দেশে পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এটার কারণ আগে আমরা বাজারভিত্তিক করিনি, এ কারণে পায়নি। যদি বাজারভিত্তিক হতো তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে বা প্রত্যেকদিন আট আনা, চার আনা, এক টাকা, দুই টাকা বাড়তো-কমতো। তাহলে সহনীয় হয়ে যেত।’
[অকটেন ও পেট্রোল এর মূল্য বৃদ্ধি হলো কেন যদি গ্যাস ফিল্ডের উপজাত কনডেনসেট থেকেই পাওয়া যায় ?]
তিনি বলেন, ‘এই যে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছিল, এখন কমছে, আরও কমবে। হয়তো বলতে পারেন, একটু ধীরে ধীরে কমছে। এর সঙ্গে আমি একমত, কিন্তু কমবে তো। না কমে তো পারবে না। আমদানি খরচ যখন কমবে, তখন এটা কমতে হবে।’
আরও পড়ুন :
- বিএনপি যেভাবে দেশের বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস ধ্বংস করেছিল
- দৃশ্যপটে আবার খলিল বার্গম্যান এর নেত্র নিউজঃ বাংলাদেশের জ্বালানী ক্ষেত্রের কন্ট্রোল নিতে চায় কোন সিন্ডিকেট?
- ফ্যাক্ট জানুন: বাংলাদেশ পেট্রোল রপ্তানি করলেও কেন পেট্রোলের দাম বেড়েছে? এখন কেন ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না?