বিএনপি

বিএনপির দুর্নীতি ও অপশাসনের ফল হাড়ে হাড়ে ভোগ করছে দেশবাসী। খালেদা-তারেকের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে ধ্বংস হয়েছে দেশের বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদ। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি তারা। তাদের জোটের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে নাইকো পরিচালিত বাংলাদেশে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে আগুন ধরে যায়। যার কারণে বিপুল মজুদ থাকার পরেও সেই গ্যাস ক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বিলিয়ন ডলারের মহামূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাস হারায় বাংলাদেশ।

তারেক রহমানের কমিশন বাণিজ্যের কারণে নাইকোর কতিপয় অদক্ষ কর্মীর হাতে গ্যাস ফিল্ডটি তুলে দেয়ার ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। হাওয়া ভবনের প্রেসক্রিপশন মতো ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নে ২০০৩ সালে কানাডিয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী কোম্পানি বাপেক্স। নাইকো সেখানে অনুসন্ধান কূপ খনন করার সময় ২০০৫ সালের জানুয়ারি ও জুন মাসে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে।

আরও পড়ুনঃ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেবে

ওই গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। ছিল বিশাল পরিমাণের মজুদ, যা ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় উন্নতি হতে পারত। কিন্তু একটি দুর্নীতিপরায়ণ দল ও তাদের এইট পাশ প্রধানমন্ত্রীর মাফিয়া সর্দার পুত্রের লোভের কারণে বাংলাদেশের বিশাল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ থাকা গ্যাসফিল্ডটি জ্বলতে দেখেছে দেশের মানুষ। এছাড়া নাইকো দুর্নীতি মামলায় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে কানাডার আদালত।

বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়ার সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত কানাডার কোম্পানি নাইকো থেকে বন্ধু গিয়াসউদ্দিনের মাধ্যমে তারেক রহমান ৪৫ লাখ ডলারের ঘুষ নিয়েছিলেন। গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংস করায় ক্ষতিপূরণের মামলা থেকে বাঁচতে এই অর্থ দেওয়া হয়।

বিএনপির এমন অপকর্ম নিয়ে দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান জ্বালানি সংকট বাংলাদেশের একার না। বিশ্ব একটা অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। সেখানে সরকারকে দায়ী করার কোনো অবকাশই নাই। বিএনপি নেতাদের কোনরকম লজ্জা শরম থাকলে তারা এ বিষয় নিয়ে অপপ্রচার চালাতো না। কারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিএনপির সময়ে এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল যে, স্বয়ং খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভার জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন দুর্নীতিতে ধরা পড়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

আরও পড়ুনঃ দুর্নীতির রাজপুত্র তারেক রহমান

২০১১ সালেল ২৩শে জুন কানাডার আদালত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মোশাররফের দুর্নীতি মামলার বিষয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পেয়েছিল। মোশাররফ অনৈতিক সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে একটি দামি গাড়ি উপহার পান নাইকোর কাছ থেকে। যার আর্থিক মূল্য ছিল কানাডিয়ান মুদ্রায় ১,৯০,৯৮৪ ডলার। নাইকো আরও ৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার ঘুষ দেয় মোশাররফকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের জন্য। নাইকো বাংলাদেশ থেকে নিজেদের নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস কিনতে ও বিক্রয় করতে পারবে এবং গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের কারণে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জরিমানা কমিয়ে দেয়া হবে- নিশ্চিত করতেই মোশাররফকে ঘুষ দেয়।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, নাইকোর এই ঘুষ দেয়ার কাজটি ছিল নির্লজ্জের মতো। নাইকো তাদের এজেন্ট কাশিম শরিফকে ৪ মিলিয়ন ডলার এবং ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভুঁইয়াকে (তারেকের বন্ধু সিলভার সেলিম) ৫ লাখ ডলার দেয় পরামর্শক হিসেবে, যেন তারা বিএনপি সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

[বিএনপি যেভাবে দেশের বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস ধ্বংস করেছিল]

এসব তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তাদের তথ্যপ্রমাণ এটাই প্রমাণ করে, নাইকো তাদের বাংলাদেশি এজেন্টদেরকে সুইস ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথমে বার্বাডোজের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কাশিম শরিফ এবং সেলিম ভুঁইয়ার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়। পরে ওই টাকা চলে যায় তারেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের অ্যাকাউন্টে।

নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ই ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন। ২০০৮-এর ৫ই মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

আরও পড়ুনঃ শতভাগ বিদ্যুতের বদলে খাম্বা দেয়াসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকাকে গণতন্ত্র বলছে বিএনপি

বিদ্যুতের দাবিতে সাধারণ মানুষের মিছিলে গুলি চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করেছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। শুধু বিদ্যুৎ সেক্টর থেকেই ২০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছিলেন মাফিয়া সর্দার তারেক। বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালনা লাইন স্থাপনের নামে শুধু খুঁটি পুঁতে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের অপকর্মের কারণেই ফল ভোগ করছে বাংলাদেশ। তারা যদি দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ধ্বংস না করতো তাহলে আমাদের আমদানির উপর নির্ভরতা আরও কম হতো। তবে সরকারের বৃদ্ধিমত্তার কারণে এই সাময়িক সংকট খুব সহজেই কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: