সংখ্যালঘু

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়, সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপির নৃশংসতা এখনও ভোলেনি দেশের মানুষ।

বিএনপি যেন এক বিভীষিকার নাম। হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি থেকে শুরু করে এহেন কোন অপকর্ম নেই, যা দলটির নেতাকর্মীরা করেনি। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা নারী ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি দখল, হত্যাসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট হিন্দুদের উপর তাণ্ডব চালায়। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিলো যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটারেরা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।

নির্বাচনের পরের অবস্থা ছিলো আরো পরিকল্পিত, ছকবদ্ধ এবং গুরুতর। সেসময় বিএনপি জোটের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিলো বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, কুমিল্লা ও নরসিংদী।

[সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপির নৃশংসতা এখনও ভোলেনি দেশের মানুষ]

ওই সময় আক্রমণকারীরা হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর, সম্পত্তি লুটপাট এবং অনেক হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করে। পাওয়া গেছে হিন্দু মেয়েদের অপহরণের খবরও। তাদের এমন সব বর্বর অত্যাচার সইতে না পেরে ওই সময়ে শত শত হিন্দু পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যায়।

বিএনপি-জামায়াত জোটের তান্ডবের কিছু চিত্র:

পূর্নিমা রানী শীল । অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে তখন। সবে নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি জামাত জোট সরকার জয়ী হয়েছে। চাপ পড়ছে হিন্দু পাড়াগুলোর ওপরে। পূর্নিমা সেই রাতে বাড়িতেই ছিল। সদ্য বিজয়ী স্থানীয় নেতারা মায়ের সামনেই ধর্ষণ করলো তাকে। এত মানুষ দেখে পূর্নিমার মা বলছিলো “বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, আমার মেয়ে মারা যাবে। অসহায় বাবা দেখলো মেয়ের ধর্ষণ, মা আকুতি করলো। ধর্ষিতা পূর্নিমা অবশ্য সে রাতে মরেনি । ধর্ষণের গ্লানি নিয়ে তাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে।

ছবি রানীর কথা মনে আছে? তিনি আওয়ামীলীগের কর্মী ছিলেন। বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। ২০০২ সালের ২১ শে অগাস্ট তৎকালীন জোট বাহিনীর ক্যাডার দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন ক্যাডাররা ছবি রানীকে বাসস্ট্যান্ড থেকে কাপড় খুলে ফেলে। এরপর তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর একের পর এক ক্যাডার দ্বারা তিনি ধর্ষণের শিকার হতে থাকেন।

ধর্ষকরা ধর্ষণ করে ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়। ছবি রানী যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন পাশের দোকানে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা বিড়ি ফুঁকছিল। তার চিৎকারে সাধারন মানুষ তো দূরে থাক, পুলিশ ও সেদিন ফিরেও তাকায়নি।

আরও পড়ুনঃ

১০ অক্টোবর ২০০১ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা।

১২ অক্টোবর ২০০১ সালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী বিজয়ের পাশবিক উল্লাস, প্রশাসন নীরব। অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগেই বরিশালের গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সন্ত্রাস শুরু হয়, নির্বাচনের পর তা আরো বেড়ে গেছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৫০টি।

৭ নভেম্বর ২০০১ সালের চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মিঠানালার দাসপাড়ায় সোমবার মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী সুনীল দাস সাধু নিহত হয় এবং প্রায় ৩০ জন নারী ও শিশু আহত হয়েছে।ধর্ষণ, হামলা ও লুটপাটে ৫১টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক চাঁদাবাজি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে এ সময়। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা ভয়ে কোনো অভিযোগ পর্যন্ত করেনি।

[সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপির নৃশংসতা এখনও ভোলেনি দেশের মানুষ]

রাজিহারের শেফালী সরকার নামটি হয়ত আমরা অনেক জন শুনেছি। গ্রামের মানুষের কাছে আরেকটি পরিচয় ছিল- ‘ঘরের ডাক্তার’। টুকটাক চিকিৎসা দিতেন গরিব মানুষদের। নির্বাচনে কাজ করেন আওয়ামী লীগের পক্ষে। এটাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। তাকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কোপানো হয়।

উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের বলরাম দাসের স্ত্রী কণিকা রানী দাস, তাদের বাড়িতে ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর রাতে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে মালামাল লুট করে এবং তার সম্ভ্রমহানি ঘটায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেও শারীরিক নির্যাতন চালায়।

অমর চন্দ্র দাসের স্ত্রী কল্যাণী দাস, গভীর রাতে বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িতে এসে ধান-চাল, জামাকাপড়সহ বাড়ির সকল মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তারা তার মেয়ের খোঁজ করে এবং মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। কিন্তু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং সেখানে নেই, এ কথা শুনে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর সামনে কল্যাণীকে ধর্ষণ করে।

২০০১ সালে বাগেরহাটের যাত্রাপুরের ঠাকুর বাড়িতে এক রাতে ২৩ জন গৃহবধূকে বিএনপির ক্যাডাররা ধর্ষণ করে এবং সেখানে দুটো হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বিএনপির আমলে ছয় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য প্রাণ হারায়, আহত হয় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ, ১২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে।সংঘবদ্ধভাবে হামলা, নির্যাতন, লুটতরাজে নিঃস্ব হয় লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার।

কানাডার ইমিগ্রেশন এবং শরণাথী বোর্ডের গবেষণা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশে নির্বাচনের সময়কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতার ঘটনাগুলো বিবিসি (১০ অক্টোবর ২০০১), গাল্ফ নিউজ (১২ ফেব্রুয়ারী ২০০২), প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (২০ অক্টোবর ২০০১), এবং প্যাক্স ক্রিস্টি (২৬ নভেম্বর, ২০০১) ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, ঘটনাগুলোতে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও লুটপাটের পাশাপাশি হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সহিংসতার শিকার হয়ে শত শত হিন্দু পরিবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে এই খবর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টর আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন ২০০৫-এ প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়, হিন্দুদের উপর সহিংস আচরণ করেছে যারা ঐতিহ্যগত ভাবেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। পাশাপাশি প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, লুট এবং নির্যাতনের কথাও উল্লেখ করা হয়।

তাদের আমলে এত ঘটনা ঘটানোর পর তারা কেমনে এত মিথ্যা কথা বলতে পারে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল।জনগণ সবাইকে একত্রিত হয়ে তাদের বয়কট করা উচিত বলে আমি মনে করি। তারা ক্ষমতায় গেলে এই দেশকে তালেবান বানাবে।

আরও পড়ুনঃ