বিএনপি

অনেকের মনে থাকবে ২০১৩ সালের কথা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিদেশি চক্রান্তকারীদের লেজুড় হিসেবে গঠিত তথাকথিথ মানবাধিকার সংস্থা- অধিকার এর নির্বাহী আদিলুর রহমান সরকারেরে বিরুদ্ধে একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল তৈরি করেন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতের সাথে মিলে। ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখে লং মার্চের সেই সাজানো পরিকল্পনার অন্যতম অংশ ছিলেন এই আদিলুর রহমান। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের কাছ থেকে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী পান কয়েক কোটি টাকার ফাণ্ড। সেই অর্থে ঢাকা অচল করে দিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েক লাখ ছাত্র-শিক্ষককে দিয়ে দেশের প্রশাসন এবং সরকার উৎখাতের এই ষড়যন্ত্রটি হয় অনেকদিন আগে থেকেই।

এমনকি সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিবে বিএনপি; আর হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হকসহ জামায়াত-শিবির-হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হবে। খালেদা জিয়া হবেন সেই সরকারপ্রধান- এমন একটি রূপরেখাও দাঁড় করানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থান এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হুমকির মুখে লেজ গুটিয়ে পালায় হেফাজতে ইসলাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এই দেশবিরোধী চক্রের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। গ্রেপ্তারের ভয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ঢাকা ছাড়তে থাকে। ষড়যন্ত্র বিফল হওয়ায় ক্ষুব্ধ চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তথ্যসন্ত্রাসের মাধ্যমে আরেক অপতৎপরতা চালায়। সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে- এমন বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যের বেসাতি তৈরি করে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যের নাগরিক এখন তারেক তাহলে কিভাবে দেবেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব?

হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে প্রথমে বলানো হয়, তাদের ৩ হাজার নেতা-কর্মীকে সরকার শাপলা চত্বরে হত্যা করেছে আর সেই লাশ রাতারাতি গুম করে ফেলেছে। এসব উদ্ভট দাবি প্রত্যাখ্যান করে সরকার যখন নিহতদের নাম-পরিচয় জানতে চায়, তখন হেফাজতে ইসলাম পিছু হটে। কারণ হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী মানে সবাই কোনো না কোনো কওমি মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই তাদের নাম-ঠিকানা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। কিন্তু হেফাজত সরকারকে সেই তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়। তারপর সেই হাজার হাজার কাল্পনিক হত্যার শিকারদের সংখ্যা কমতে কমতে কয়েকশতে নামে।

কিন্তু কয়েকশ লাশ একটা বড় এলাকা থেকে রাতারাতি গায়েব করে পুরো শহর ধুয়ে মুছে চকচকে করা সম্ভব নয় যৌক্তিকভাবে। তখন দৃশ্যপটে হাজির হন আদিলুর রহমান। তিনি ৬১ জনকে হত্যা এবং গুম করা হয়েছে বলে আরেক উদ্ভট দাবি করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি তার তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর নাম ভাঙিয়ে এহেন মিথ্যাচার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে মিডিয়া ক্যু করার চেষ্টা করেন। তার এই গুজব ও মিথ্যাচারের কারণে সারাদেশের সাধারণ মুসলমানরা ফুঁসে ওঠেন। সেই উন্মত্ততাকে কাজে লাগিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করেন আদিলুর।

‘অধিকার’ ভুয়া একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ২০১৩ সালের ১০ই জুন। তাতে দাবি করা হয়, ৫ই মে পুলিশি অভিযানে ‘শত শত’ হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছেন! তবে অধিকার প্রাথমিকভাবে নিহত ৬১ জনের তালিকা দেয়। এরপর তথ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে সেই ৬১ জনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা জানতে চায়। একই বছরের ১০ই জুলাই ‘অধিকার’কে দেয়া চিঠিতে তথ্য মন্ত্রণালয় বলে, নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় সরকার প্রকৃত সংখ্যা দেশের নাগারিকদের জানাতে চায়। যদিও তখনকার পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে ১৬ জনের বেশি নিহত হওয়ার তথ্য জানা যায়নি।

আরো পড়ুনঃ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নিবন্ধন বাতিল

পরবর্তীতে আদালতে জবানবন্দিতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আশরাফুল আলম বলেন, হেফাজতে ইসলামের ওই সমাবেশে পুলিশের উপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ই মে সকালে পুলিশসহ ১১ জন মারা যান। তৎকালীন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অধিকার তথ্য মন্ত্রণালয়কে সব তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের রিপোর্টটি বিকৃত এবং অসত্য তথ্যের ভরপুর। এই রিপোর্ট তারা বাংলা এবং ইংরেজিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। ওই প্রতিবদনে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার পুরনো কিছু ছবিও যুক্ত করা হয়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উস্কানি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১)(২) ধারার অপরাধের উপাদান পাওয়া যায়। সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে এতে। তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৩(১)ও (২) ধারার লঙ্ঘন করায় আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই গ্রেপ্তারের ঘটনাটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এবং সরকারবিরোধী কিছু মিডিয়া নতুন করে তথ্যসন্ত্রাস শুরু করে। কয়েকটি গণমাধ্যমের আলাদা আলাদা অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল সেসময়। যাতে দেখা যায়, হেফাজতে ইসলামের দেওয়া তালিকা অনুসারে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে নিহতদের জীবিত পাওয়া যায়। এমনকি অনেক ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার সামনে লাশ সেজে শুয়ে থাকা হেফাজত নেতা-কর্মীরা পুলিশের লাঠি দেখে লাফিয়ে উঠে দৌড় দেয়।

যদিও আল-জাজিরাসহ কয়েকটি তথ্যসন্ত্রাসী মিডিয়ায় দৌড় দেওয়ার আগের অংশটুকু দেখিয়ে দাবি করা হয় হাজার হাজার মৃতদেহ। এমনকি একজন বাকপ্রতিবন্ধী গোরখোদকের একটি বানোয়াট সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে আল-জাজিরা। যাতে একজন অনুবাদক দাবি করেন, রাতে অনেক লাশ এসেছিল, সব মাটিচাপা দেওয়া হয়। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সেই বাকপ্রতিবন্ধী গোরখোদকের পরিবারের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে, তাকে টাকা দিয়ে অঙ্গভঙ্গি করতে বলেছিল কয়েকজন লোক। আরও অনেকের সন্ধান পায় গণমাধ্যম। আদিলুর রহমানের তালিকায় তারা ছিলেন মৃত এবং নিখোঁজ।

আরো পড়ুনঃ ‘অধিকার’–এর নিবন্ধন নবায়ন করল না এনজিও ব্যুরো

এরপর অধিকারের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩টি ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারের ২টি সিপিইউ জব্দ করা হয় আদালতের নির্দেশে। এসময় গোয়েন্দারা এই আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে অনেক অপরাধের তথ্য-প্রমাণ হাতে পায়। তার সাথে কারা কারা জড়িত, কীভাবে অর্থায়ন করা হচ্ছে সরকারবিরোধিতার জন্য, সেসবের অনেক সূত্র পান গোয়েন্দারা। সেসময় বিএনপি-জামায়াতসহ দেশবিরোধী চক্রের মাথার ওপর হাত রাখা বিদেশি কিছু সংস্থার হর্তাকর্তা এসব নিয়ে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করে।

তখন সরকার প্রেসনোট প্রকাশ করে ব্যাখ্যা দেয়, ন্যায়সঙ্গত এবং যথাযথ কারণেই আদিলুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের প্রেসনোটে বলা হয়, আদিল কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির নির্বাহী হিসেবে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। অধিকারের প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড চালানোর কথা বলে ভিত্তিহীন প্রচার আদিলের নির্দেশনাতেই চালানো হয়। অধিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ২৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে ৫ই মে দিনব্যাপী হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও হত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়। দিনের বেলায় হেফাজতের হাতে নিহত কয়েকটি মৃতদহ ও আহত কয়েকজনের ছবি কম্পিউটারে ফটোশপের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে রাতের অভিযানে তারা নিহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

প্রেসনোটে বলা হয়, হেফাজতকর্মীরা বিভিন্ন রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ফেলায় সন্ধ্যার পর শাপলা চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে শাপলা চত্বরের আশপাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন লক্ষ্য করে হেফাজতকর্মীরা হামলা চালাতে থাকে। হিংসাত্মক হামলা থেকে বিরত থাকার পর তাদের হামলার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকাকে ধ্বংসাত্মক হামলা থেকে রক্ষার জন্যই ৫ই মে রাতে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হয়।

ওই অভিযানে পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী প্রাণঘাতি নয় এমন অস্ত্র (টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও রাবার বুলেট) ব্যবহার করে, যাতে ১০ মিনিটের মধ্যেই হেফাজতকর্মীরা স্থান ত্যাগ করে। তবে তাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংগঠিত হয়ে অলিগলির ভেতর থেকে কিছুক্ষণ হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারাও পালিয়ে যায়। অভিযানে বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন এবং কয়েকটি টেলিভিশন পুরো অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করে। রাতের অভিযানে কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার না করায় কোনো মৃত্যুও ঘটেনি। তবে দিনের বেলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের হামলা ও পুলিশের প্রতিরোধের কারণে মোট ১১ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

অধিকার ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে একটি কাল্পনিক প্রতিবেদন তৈরি করে। এ ধরনের মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য ইন্টারনেটে বিশেষ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়ায তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন/২০০৬-এর ৫৭(১)(২) ধারায় অপরাধ। অধিকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি দশ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা, বলা হয় প্রসনোটে।

এরপর মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন দেওয়ায় ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিল করে এনজিও ব্যুরো। অধিকার-এর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করা ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজে সম্পৃক্ত থাকার কথা জানায় ব্যুরো। কর্তৃপক্ষ জানায় , আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজে নিয়োজিত হওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে কথিত গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকার তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, তাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।

২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১)(২) ধারার অধিকারের বিরুদ্ধে মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ২ মাস পরে কারাবন্দি থেকে জামিনে মুক্তি পান আদিলুর। এরপর অনেকদিন প্রকাশ্য তৎপরতা দেখা যায়নি আদিলুর রহমানের। এরমধ্যে ২০১৭ সালে মানবাধিকার সংস্থার একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে মালয়েশিয়ায় যান আদিলুর রহমান। সেখানে বিমানবন্দরে তাকে আটক করে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতাসহ বেশ কিছু সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাকে আটক করে রাখা হয়।আদিলুর রহমান

সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় বিএনপির বেশ কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীর সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যাদের ছত্রছায়ায় সেখানে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর পলাতক অপরাধী নেতা-কর্মীর আশ্রয় রয়েছে। এছাড়াও সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাচারকৃত হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। আদিলুরের ইচ্ছা ছিল, মানবাধিকার সংস্থার নামে নতুন উইং খুলে মালয়েশিয়ায় বিএনপির এমনই একটি প্রকল্পে নিযুক্ত থাকা। আর বিদেশে বসে বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা চালানো। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে মামলা চলার কারণে মালয়েশিয়ান পুলিশ আদিলুরকে সেই সুযোগ দেয়নি। পরে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। এ নিয়ে সেসময় বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা গোষ্ঠীরা মালয়েশিয়ান পুলিশের হাতে আদিলুরের আটকের ঘটনাকে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বলে দাবি করে।

২০১৭ সালের পর বেশ কিছুদিন আবার তার কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। গত বছর যখন তার সেই মামলার কার্যক্রম চালু হচ্ছিল তখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল পাতে আদিলুর গং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র‌্যাবসহ ৭ জন কর্মকর্তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, তাতে হাত ছিল অধিকারসহ দেশবিরোধী কয়েকটি চক্রের সম্মিলিত অপতৎপরতা। মানবাধিকার সংস্থার সাইনবোর্ডের আড়ালে কাজ করা কিছু দেশবিরোধী সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেয় বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে মর্মে। পরে ২০২০ সালের ২৭শে নভেম্বর এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে চিঠি দেয় মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু সেই চিঠির কোনো জবাব জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেয়নি। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান এবং তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান গ্রেপ্তার

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিলো- অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট। এর মধ্যে ব্লাস্ট শুধুমাত্র সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবেদন দিয়েছে। আর সূত্র হিসেবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে নিয়েছে। যে দুটি পত্রিকা আবার অধিকার এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আদিলুরকে আইনি সহায়তাদানকারী সংস্থা) রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে সংবাদ পরিবেশন করে। অর্থাৎ, একে অন্যকে সূ্ত্র হিসেবে দেখায়। সেই অনুসন্ধান শেষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জড়িত আছে বলে দাবি করা হয়। মূলত অধিকারই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ৭ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছে। এভাবে বিএনপির মোক্ষলাভ ঘটে। অধিকারের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা জারি ঘটাতে সক্ষম হয়। বিগত ১৪ বছরে এটাই বিএনপির একমাত্র সাফল্য।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাফল্য, উন্নয়ন এবং এগিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের তাঁবেদার সংস্থাগুলোর কাছে ভালো ঠেকছে না। দুর্বল রাষ্ট্রকে সবল নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডও তাদের পছন্দ না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সেই পুরনো চাল চালছে। মানবাধিকারের নামে বিভিন্ন দেশের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং তাদের অগ্রগতি ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত চালাচ্ছে। তবে চীন এবং রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ উষ্ণ সম্পর্ক থাকায় ভূ-রাজনৈতিক খেলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশগ্রহণ করার চেয়ে গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের পয়সায় লালিত বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত সময়ে যেভাবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে বর্তমানে দেশে অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে। আরেকটি ক্যু ঘটানোর চেষ্টায় আছে দেশবিরোধী চক্রটি। প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড, কল-কারখানায় অস্থিরতা, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি গার্মেন্টস খাতে অরাজকতা সৃষ্টি, পণ্যে আগুন দেওয়া- ইত্যাদি বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এসবের পেছনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দায়ী করছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে।

আদিলুর রহমান গং আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মরণ কামড় বসাতে চায় বাংলাদেশের উন্নয়নের এই অগ্রাযাত্রা ব্যাহত করতে। আসুন সবাই মিলে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দিই।