পদ্মা

আসছে ২৫ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম স্থাপনা পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এতে করে একটি বড় ধাক্কা খেলো বাংলাদেশের স্বঘোষিত ও কথিত সুশীল সমাজের সদস্যরা যারা নিজেদের সততা ও স্বচ্ছতার অবতার বলে জাহির করতে বড্ড পছন্দ করে। ২০১১ সালে কিছু গালগল্প ও কথিত অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে এবং প্রকল থেকে সরে দাঁড়ায়। আর এরপর থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দল বেঁধে ঝাপিয়ে পড়ে তথাকথিত সুশীল সমাজের সদস্যবৃন্দেরা।

আরও পড়ুন : পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের যে উন্নয়ন হবে তা কিছুতেই মানতে পারছে না বিএনপি

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদে প্রথমবারের মতো এই সেতু নির্মাণের ওয়াদা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেকর্ড ব্যবধানে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ আর সেতু নির্মানে আগ্রহ দেখায় বিশ্ব ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি দাতা সংস্থা। আবার এরাই কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্প বন্ধ করার প্রয়াস চালায় কিন্তু তখনও তারা একটি পয়সাও ছাড় করেনি।  তাদের এই অভিযোগ কানাডার আদালতে মুখ থুবড়ে পড়ে। মামলার রায়ে বলা হয় এই অভিযোগ কাল্পনিক গালগল্প ছাড়া কিছুই নয়।

আরও পড়ুন : কানাডার আদালতে পদ্মাসেতু দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি বিশ্বব্যাংক !

এবং হাস্যকরভাবে বিশ্ব ব্যাংকের এই গুজবের ওপর ভিত্তি করে তথাকথিত ‘দুর্নীতিবিরোধী’ ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকেরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে এবং বিশ্ব ব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগকে সত্যতা দেওয়ার জন্য নানান প্রচেষ্টা চালায়। অভিযোগের পক্ষে ন্যুনতম প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা বাদ দিয়ে তারা শেখ হাসিনার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ব্যস্ত দিন পার করতে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের দাবির পক্ষেই সাফাই গাইতে থাকে মিডিয়ার সামনে। তারা যখন মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে ব্যস্ত, প্রধানমন্ত্রী তখন সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অসংখ্য প্রেস কনফারেন্স, কলাম ও টকশো-এর এক অশুভ পরিকল্পনা চলতে থাকে জনগণের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিরুপ মনোভাব গড়ে তোলার আর এতে জোট বাঁধে এমন দুই পক্ষ যাদের নিজেদের উদ্দেশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই আয়োজন দেখে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের দুর্নীতিবাজ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাল মেলানো শুরু করে। তাদের সবার ছিল লক্ষ্য একটাই- যাতে শেখ হাসিনা বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়া সেতুর কাজ শুরু করতে না পারেন। এমন একটি প্রকল্প এই পদ্মা সেতু যা দেশের জাতীয় আয়ে ২% প্রবৃদ্ধি ঘটানোর ক্ষমতা রাখে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন বিকল্প সমাধানের কথাও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নেতৃত্বাধীন এই সুশীল গ্রুপ চিন্তা করেনি। আর তাদের এই দেশবিরোধী কর্মের পালে হাওয়া লাগে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের দায়িত্বশীল মন্ত্রী পদত্যাগ করেন এবং সংশ্লিষ্ট সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

এতকিছুর পরেও যখন কোন ইতিবাচক ফলাফল আসেনি, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশীয় অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। আবারো সেই সুশীল গোষ্ঠী নানাভাবে এই সিদ্ধান্তকে উপহাস করতে শুরু করে। কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শেখ হাসিনা সমালোচনায় কান না দিয়ে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন।

আরও পড়ুন : চুনকালি পড়ুক বিএনপি-জামায়াতের মুখে, উন্নয়নের বাংলাদেশে আমরা থাকবো সুখে

আজ সেই সেতু, দেশের গর্বের সেতু পুরোপুরি প্রস্তুত এবং ক’দিন পরেই সাধারন মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর এই কাজের শুরু থেকেই বাধা দিয়ে আসা সেই সুশীল গোষ্ঠী একবারের জন্যেও ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। এমনকি কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ প্রমানিত হওয়ার পরেও তারা তাদের পুর্বের বক্তব্য ফিরিয়ে নেয়নি।

চলুন দেখা যাক তাদের সেই সকল প্রলাপের নমুনা –

 

১৭ অক্টোবর ২০১১

খালেদা_জিয়া
খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া

  • স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করলো।

http://www.thedailystar.net/news-detail-206887

 

১ জুলাই ২০১২

ড. আকবর আলি খান

  • বিশ্ব ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা পাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। যখনই কোন দাতা সংস্থা কোন নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হবে, তারা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখবে। সরকার যদি বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতু কাজ শুরু করে, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।

 

বদিউল আলম মজুমদার
বদিউল আলম মজুমদার

বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

  • দুর্নীতি যে আমাদের পেছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নের ধারাকে নষ্ট করছে, এই ঘটনা (পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ) তারই আরেকটি উদাহরণ।
  • দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ হতে হবে।

http://www.thedailystar.net/news-detail-240497

 

আলী আহসান মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

  • বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগকে ‘দুঃখজনক ঘটনা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প আজ অনিশ্চয়তার মুখে

https://www.thedailystar.net/news-detail-240488

 

ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

  • বিকল্প উৎস হতে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা (দুর্নীতির অভিযোগের ওপর থেকে) দৃষ্টি সরানোর উপায় বলে মনে হতে পারে। যদি এই সিদ্ধান্ত সফলও হয় তাতেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না।

https://www.thedailystar.net/news-detail-240491

 

১০ জুলাই ২০১২

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

  • বিশ্বব্যাংক সুনির্দিষ্ট ভাবে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে—প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী

https://today.thefinancialexpress.com.bd/public/last-page/pm-among-3-charged-with-graft-by-wb-fakhrul

 

জয়নাল আবেদিন ফারুক

  • পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উচিত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

এমকে আনোয়ার

  • নিজস্ব অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের নাই

https://today.thefinancialexpress.com.bd/public/last-page/padma-bridge-not-with-own-fund-bnp

 

২৩ জুলাই ২০১২ 

বিএনপি

  • অভিযোগ ওঠার দশ মাস পরে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ এটাই প্রমাণ করে যে এই প্রকল্পে আসলেই দুর্নীতি হয়েছে।

https://bdnews24.com/politics/2012/07/23/abul-hossain-s-resignation-proves-graft-bnp

 

২৪ জুলাই ২০১২

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

  • আবুল হোসেনের পদত্যাগ এটাই প্রমাণ করে যে দুর্নীতির সকল অভিযোগ সত্য… তিনি যদি আরো আগেই পদত্যাগ করতেন তাহলে (বিশ্বব্যাংক) ঋণচুক্তি বাতিল করতো না।

 

বদরুদ্দোজা চৌধুরী
বদরুদ্দোজা চৌধুরী

বদরুদ্দোজা চৌধুরী

  • আবুল হোসেনের পদত্যাগ বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণ করে।

 

ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

– এখন অনেক দেরি হয়ে গেলো। কয়েকমাস আগে বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনলো তখনই হওয়া উচিত ছিল

 

ড. আকবর আলি খান

– অনেক দেরিতে আসলো এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল।

http://www.thedailystar.net/news-detail-243337

 

 ২৮ জুলাই ২০১২

খনদকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

  • আবুল হোসেন কোন দেশপ্রেমিক নন, তিনি একজন নির্লজ্জ ব্যক্তি। তাই তিনি বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ আসার ১০ মাস পরে পদ ছেড়েছেন। একজন দুর্নীতিবাজের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী এতদিন সাফাই গেয়েছেন।

 

ব্রি. জেনারেল (অব) এএসএম হান্নান শাহ, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য

– শেখ হাসিনা একজন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী। তারও উচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

 

এমাজউদ্দীন আহমেদ
এমাজউদ্দীন আহমেদ

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • আবুল হোসেন যদি দেশপ্রেমিক হয় তাহলে দেশপ্রেমিক নয় কে? তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন এটাই প্রমাণ করে যে জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারীদের রাজনৈতিক দলে থাকার অধিকার রয়েছে।

 

মাহমুদুর রহমান মান্না

  • কেন প্রধানমন্ত্রী কাউকে দেশপ্রেমিক বলে সার্টিফিকেট দিতে হবে আর কেনইবা সেটা লন্ডন গিয়ে করতে হবে? প্রধানমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী যোগাযোগ মন্ত্রীর যদি আত্মসম্মানবোধ থাকতো তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার সাথে সাথেই তিনি পদত্যাগ করতেন।

http://www.thedailystar.net/news-detail-243827

[পদ্মা সেতুঃ দেশের সুশীল সমাজ ও আওয়ামী লীগ বিরোধীরা কে কি বলেছিলেন?]

 

৬ ডিসেম্বর ২০১২

বিএনপি

  • পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।

http://bdnews24.com/bangladesh/2012/12/06/acc-wants-to-save-abul-hossain

 

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

আলি ইমাম মজুমদার

  • পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে দুদক নিজেদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দুদক যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতো তাহলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতো না। উন্নয়ন সহযোগীদের পাশাপাশি দেশের জনগণও দুদকের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা আশা করে।

https://www.prothomalo.com/opinion/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%83%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3

 

পরিশেষে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে দেশের সুশীল সমাজ যতটা না দেশের স্বার্থে কাজ করেন তার চেয়ে বেশি তাদের পশ্চিমা মনিবদের শিখিয়ে দেওয়া বুলি আওড়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে তারা জল ঘোলা না করে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে যদি কাজ করতেন তাহলে তাদের সম্মান বাড়তো বৈকি।

আরও পড়ুন :