ভোট

১৯৭৭ সালের ৩০ মে। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। সেনাপ্রধানের পদে থেকে লাশের মিছিলের উপর দাঁড়িয়ে এককভাবে নির্বাচনের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান। রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে নিজেই গঠন ‘জাগদল’ নামের একটি দল। এরপর ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচন করে নিজেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

সামরিক উর্দি ও অস্ত্রের ভয়ে দেশের গণমাধ্যম অনিয়মের বিষয়ে চুপ থাকলেও, বিদেশি গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচারিত হয়। এই নির্বাচনে জিয়া কোনো কোনো এলাকায় ১১০ ভাগ ভোট পেয়েছেন বলেও প্রমাণসহ বিভিন্ন বিদেশি সংবাদপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের তথ্যানুযায়ী- ‘এই নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে মিনিটে ১১০ থেকে ১২০ শতাংশ ভোট পড়ার বিরল রেকর্ড হয়েছে’।

[জিয়ার ‘হ্যাঁ-না ভোট’ ছিল ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার]

খুনি জিয়ার সেই প্রহসনের নির্বাচনে তিনি একাই হন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। এককভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরেছিলেন তিনি। তাছাড়া বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর যে বিধিমালা অনুযায়ীও তিনি প্রার্থী হতে পারেন না। বাংলাদেশ আর্মি অ্যাক্ট ২৯২ ও ২৯৩ বিধিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্য তার চাকরির মেয়াদ শেষ না হতে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

আরও পড়ুনঃ ৩ জুন ১৯৭৮ সালের কলঙ্কে কালিমালিপ্ত জিয়া 

জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে সামরিক বাহিনীতে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। সুতরাং, ‘হ্যাঁ-না’ ভোটে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও আইনের বরখেলাপ। সে হিসেবে জিয়াউর রহমান ছিলেন অবৈধ রাষ্ট্রপতি। এখানেই থেমে থাকেনি জিয়া। ১৯৭৮ সালের ২৮ এপ্রিল জিয়াউর রহমান একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি থাকার জন্য একটি সামরিক ফরমান জারি করেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের সংবিধান, আইন-কানুন, সামরিক বাহিনীর বিধি অবৈধভাবে বারবার নিজের স্বার্থে জারি করেছেন তিনি।

[জিয়ার ‘হ্যাঁ-না ভোট’ ছিল ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার]

ইতিহাস বিশ্লেষকরা জিয়া সম্পর্কে বলেন, নির্মোহ চিত্তে জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে কেবল জিয়াউর রহমানের আমলকে জোরপূর্বক পদ দখল আর বন্দুকের নলের খোঁচায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টের অধ্যাদেশ, আদেশ ও আইন জারির সময়কাল বা ষড়যন্ত্রের অমানিশা বলা যেতে পারে।

জিয়া নিজেই এক সামরিক ফরমান জারি করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক তো ঘোষণা করেছিলেনই, আবার নিজেই আরেক ফরমান জারি

করে ঘোষণা দেন তিনি দেশের ‘প্রেসিডেন্ট’। কে তাকে প্রস্তাব দিল? কে তাকে ভোট দিল? কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ল না! শুধু সামরিক ফরমান জারি করে বলেছিলেন, ‘এখন থেকে তিনিই দেশের প্রেসিডেন্ট’। ভাবা যায়!

আরও পড়ুনঃ

‘রাতের ভোট’ নামক প্রমাণহীন এক আজগুবি তত্ত্বের আবিষ্কার হয়েছিল যেভাবে

মুক্তিযুদ্ধ ছিল আইএসআই’র স্পাই জিয়ার স্পেশাল মিশন : ৭১ ও পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিত

জালিয়াতির সুযোগ নেই তাই ইভিএম নিয়ে বিএনপির অপপ্রচার