
সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশ। এখানে সয়াবিন তেলের চাহিদার সিংহভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তবে ভোজ্যতেলটির উৎপাদন খাতও ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বিশেষত, চলতি শতকের শুরুর দশক থেকে গতি পেয়েছে দেশে সয়াবিন তেল উৎপাদন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদনমুখী হয়েছে বাংলাদেশ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে। ভোজ্যতেলটির উৎপাদন ৩ লাখ টনের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন অ্যাগ্রিকালচারাল সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৭তম। ২০০৩ সালে দেশে সাকল্যে ১১ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছিল। এরপর টানা কয়েক বছর দেশে পণ্যটির উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০০৪ সালে দেশে সয়াবিন তেলের উৎপাদন ৬৩.৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার টনে।
আরও পড়ুনঃ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে রাজনৈতিক কালো হাতের ইশারা
পরের বছর দেশে সব মিলিয়ে ২১ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬.৬৭ শতাংশ বেশি। ২০০৬ সালে ভোজ্যতেলটির উৎপাদন আরো ৩৩.৩৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার টনে। আর ২০০৭ সালে দেশে সয়াবিন তেল উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ২৭ হাজার টনে। এরপর ২ বছর ভোজ্যতেলটির উৎপাদন কমেছে। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দেশে ২৪ হাজার ও ২০ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে।
[শেখ হাসিনার নির্দেশে আমদানি নির্ভরতা কমে দেশে সয়াবিন তেল উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৩ লাখ টন]
২০১০ সালে এসে ফের বেড়ে সয়াবিন তেলের উৎপাদন দাঁড়ায় ২৭ হাজার টনে। ২০১৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ৩৬.০৫ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়। ২০১৭ সালে দেশে ভোজ্যতেলটির উৎপাদন ২ লাখ টনের মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর মোট ২ লাখ ২২ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩.৮৫ শতাংশ বেশি।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার টন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১.৯৮ শতাংশ বেশি। আর বিদায়ী বছরে ভোজ্যতেলটির উৎপাদন আরো ১০.৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টনে। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে দেশে সয়াবিন তেল উৎপাদন বেড়েছে ৩২ হাজার টন।
স্থানীয় মিল মালিকরাও সয়াবিন তেল আমদানির চেয়ে সয়াবিন বীজ আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। এ বছর উৎপাদন তাই ৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এছাড়াও সরকার তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিনসহ তেল ফসলের আবাদ এলাকা ২০ শতাংশ বাড়ানো ও তেল জাতীয় ফসলের হেক্টর প্রতি ফলন ১৫-২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। একইসাথে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে কৃষিবিজ্ঞানীরা গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং পরিবেশের উপযোগী তেলবীজের উন্নতমানের জাত উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। অচিরেই কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত করা হবে এসব জাত। যার সুফল মিলবে শীঘ্রই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণ মানুষ আজ যা ভাবছে, শেখ হাসিনা তা এক যুগ আগেই ভেবে রেখেছেন। আর শেখ হাসিনা যা আজকে ভাবছেন, তা হয়ত আপনার মাথায় আসবে আরও এক যুগ পরে।
আরও পড়ুনঃ
- বাজার অস্থিতিশীল করতে গুদামে ২০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল মজুদ, বিএনপি নেতাকে জরিমানা
- তেলের মূল্যবৃদ্ধির ইস্যু কাজে লাগাতে নুরুদের নির্দেশ তারেকের
- বিএনপির তৈরি প্রথম তেলের সিন্ডিকেটটি এবারো চক্রান্তে লিপ্ত