বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানারকম কথা ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আজ যারা সরব, তাদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। এই তরুণদের বেশিরভাগই বর্তমান সরকারের টানা ক্ষমতায় আসার আগের সময়টা সজ্ঞানে পর্যবেক্ষণ করার মত পরিণত ছিলেন না। এই সরকারের টানা ক্ষমতায় থাকাকালে স্থিতিশীল একটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই তারা নিজেদের বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত হয়। এই তরুণ প্রজন্মকে যেহেতু মুদ্রার অপর পিঠ সেভাবে দেখেনি, তাই তাদের সামনে কেউ মিথ্যাচার করলেও তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। কেউ কেউ তাদেরকে বোঝাচ্ছে, এই দেশের মানুষের ভোটাধিকার নাকি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে! আসলেই কি তাই?

কর্মস্থল থেকে একদিনের জন্য স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকেন অনেকেই। সেসব লোকজনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ায়- ভোট দিতে পারিনি! কেউ তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়নি, তারা নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে সচেতন নন, এটা স্বীকার করেন না শুধু। আসুন, বাংলাদেশের মানুষের ‘ভোটাধিকার হরণ’ নিয়ে কথা বলার আগে তাই দেখা যাক, আজকের এই স্থিতিশীল অবস্থায় আসার আগে নির্বাচনী প্রক্রিয়া কেমন ছিল:

১৯৭২ সালে সংবিধানের মাধ্যমে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্থান থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ৯ মাসের মাথায় সংবিধান প্রণয়ন করেন জাতির পিতা। সেই সংবিধানের মাধ্যমেই তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। সে সময় বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের হাতেই রাখা হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের উপর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন।

সংবিধানের এই বিধানে কোনরূপ আইনি অস্পষ্টতা ছাড়াই একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান প্রণীত হয়। সেসময় গণতান্ত্রিক বিশ্বে এটি উদ্যোগ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে The Representation of the People Order (RPO) প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ে ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের ২৯৩টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে বিজয়ী হন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করেন স্বৈরাচার জিয়া: হ্যাঁ না ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের শুরু

বঙ্গবন্ধু সরকার তথা স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নিতে না পারা পরাজিত শকুনরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশ পুননির্মাণের প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয় কুচক্রীরা। অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। শুরু হয় অসাংবিধানিক স্বৈরশাসনের যুগ।

১৯৭৭ সালের ৩০শে মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের নিয়োজিত সন্ত্রাসী বাহিনী গণহারে হ্যাঁ ভোটের পক্ষে প্রায় শতভাগ সিল মারে। এমনকি অনেক জায়গায় তো ভোটারের চাইতেও বেশি ভোট পড়ে। এভাবে জনগণের ভোটাধিকার সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়া প্রেসিডেন্ট হতে বেতার ক্যুর মাধ্যমে ফল পাল্টে দেন। পরবর্তীতে অপর স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদও একই পন্থা অবলম্বন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন। ফলে দেশের গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যায়।

স্বৈরাচার এরশাদের আগমন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া বিনষ্টকরণ

১৯৮১ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি দেশ শাসন করেন। ওইদিন তিনি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ এফ এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নেন।

১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি এরশাদ প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় পার্টি। পরবর্তীতে এই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৮৬ সালের ৭ই মে অনুষ্ঠিত সেই কুখ্যাত নির্বাচনে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন কব্জা করে। আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ৭৬টি আসনে। এরশাদ তার আত্মজীবনী ‘আমার কর্ম আমার জীবন’-এ স্বীকার করেন, ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসনের ‘হিস্যা’ দাবি করেছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ৭ দলীয় জোট আসনের ভাগ না পেয়েই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। অর্থাৎ, নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাইপাস করে বিএনপি তখনও ক্ষমতার ভাগ পেতে চেয়েছিল।

তবে দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মহলের মতে, ১৯৮৬ সালের সেই নির্বাচন ছিল অতি জঘন্য ধরণের। রাষ্ট্রযন্ত্র এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ঘটান স্বৈরশাসক এরশাদ। তবে আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর প্রবল প্রতিরোধের মুখে সেই সংসদ টিকেছিল মাত্র ১ বছর। ১৯৮৮ সালে তিনি মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর বয়কটের মুখে একতরফা নির্বাচন করলেও বেশিদিন টিকে থাকতে পারেননি। ২ বছর পর গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর এরশাদের স্বৈরশাসনের পতন হয়।

দেশে ফিরেই নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের পথে দেশকে ফিরিয়ে আনায় নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা:

একের পর এক সামরিক সরকার এবং অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলকারীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে খেলেছে। সেই অন্ধকার পথ থেকে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বদেশ গড়তে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আপামর জনতাকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন গণআন্দোলন। ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর জিয়ার হাত ধরে শুরু হওয়া স্বৈরাচারী অপশাসনের অবসান ঘটে এরশাদের পতনের মাধ্যমে।

১৯৯১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলোর বিশেষ করে জামায়াতের সমর্থনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয় বিএনপি। ফলে আওয়ামী লীগ চলে যায় বিরোধী দলে। তবে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবেই রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন শেখ হাসিনা। এরপর ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু হলেও, এর কার্যকর প্রতিফলন ঘটতে শুরু করে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হতে।

‘পাঁচ হুন্ডা দশ গুন্ডা ভোট ঠান্ডা’ পদ্ধতিতে বিএনপির নির্বাচন প্রক্রিয়া:

১৯৯১ সালে রাজাকার-জামায়াতদের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর আবারো নির্বাচন কমিশনকে পাশ কাটিয়ে চলতে শুরু করেন খালেদা জিয়া। সরকারে অধিষ্ঠিত হয়েই খালেদা জিয়া তার স্বামী স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের পথ অনুসরণ করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আবারও কলুষিত করে তোলেন। যাকে বিএনপি নাম দিয়েছিল ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। পাঁচটা মোটরসাইকেলে চড়ে দশ জন সন্ত্রাসী গিয়ে কেন্দ্র দখল করে টপাটপ সিল মেরে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করার এক অদ্ভূত প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বিএনপি। ‘পাঁচ হুন্ডা দশ গুন্ডা ভোট ঠান্ডা’ হয়ে যায় বিএনপির নির্বাচনী দর্শন।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ঢাকা (মিরপুর ও তেজগাঁও) ও মাগুরার উপ-নির্বাচনে বিএনপির দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেন খালেদা জিয়া। এমনকি ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করে একদলীয় নির্বাচনের আয়োজন করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন তিনি। ফলে জনগণ সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করে। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি হয় খালেদা জিয়ার হাত ধরে। তবে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হন খালেদা জিয়া।

স্বৈরাচারী জিয়ার উত্তরসূরি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি:

এরশাদের পতনের পর দেশে গণতন্ত্র ফিরলেও গুণগত কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং বলা যায় গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে খালেদা জিয়ার বিএনপি হচ্ছে স্বৈরাচার জিয়া-এরশাদের উত্তরসূরি। খালেদা জিয়া প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জিয়া-এরশাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন, মাগুরা উপনির্বাচন, মিরপুর ও ঢাকা-১০ (বর্তমান ঢাকা-৮) উপনির্বাচন- এগুলো সংগঠিত করে বিএনপি প্রমাণ করেছিল তারা ক্ষমতার জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে কুন্ঠাবোধ করে না। এছাড়া ১৯৯৪ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরদিন লালবাগে আওয়ামী লীগের বিজয় মিছিলে গুলি করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা ৭ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল।

ভোটার তালিকায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত করেছিল বিএনপি-জামায়াত:

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন ছিল স্বাধীনতার পর সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, যেখানে ৭৪.৮২% পর্যন্ত ভোট পড়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন দলের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। একটি স্থায়ী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার গুণগত পরিবর্তন আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের অপশাসনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছিল খুবই কষ্টকর।

তবুও সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যেই বিএনপি-জামায়াতের নীলনকশা অনুযায়ী প্রশাসন ঢেলে সাজানো হয়। আর একইসাথে শুরু হয় সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-নির্যাতন-খুন। প্রতি পদে পদে বাধা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণায়। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ও রাজাকার প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় কোরান শরিফে হাত রাখিয়ে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছ থেকে।

স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত অপশক্তির এসব ষড়যন্ত্র ও প্রাশাসনিক কারচুপির কারণে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়। এরপর বৃদ্ধি পায় তাণ্ডব, সংঘাত, খুন-গুম-ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ভয়াবহ সহিংসতা। একাত্তরে পাকিস্থানি বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব ফিরিয়ে আনে বিএনপি-জামায়াত। সারাদেশে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মী খুন-গুম হয়। আর নির্যাতন-নিপীড়নে বিলীন হওয়ার অবস্থায় পৌঁছে সংখ্যালঘুরা। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার অপরাধে তাদের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ কর্তৃক গৃহীত সংস্কারের সব উদ্যোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। খোদ নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকেই ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরীর নির্দেশ দেয়া হয় রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তাদের। ভুয়া নাম-ঠিকানা সম্বলিত তালিকা প্রণয়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে নিজেদের লোকজনকে নিয়োগ দেয় বিএনপি-জামায়াত সরকার। এমনকি তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে যারা কাজ করেছেন, তারাও ভুয়া পরিচয়ে নিজেদের লোক ছিল। যা সে সময় বেসরকারি টিভি- চ্যানেল আই’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল।

মোহাম্মদপুর থানাধীন ৪১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম আগারগাঁও এলাকাতেই ৯০০ ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত এবং আওয়ামী লীগপন্থী নতুন ভোটারদের নাম অন্তর্ভূক্ত না করে তালিকা সম্পন্ন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের টপ টু বটম সবাই জড়িত ছিলেন এই প্রক্রিয়ার সাথে। সারাদেশে ঠিক এই প্রক্রিয়ায় সব মিলে ১ কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার সংযোজন এবং আওয়ামীপন্থীদের বাদ দেওয়া হয়েছিল সেসময়।

এভাবই ২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারি আরেকটি প্রহসনমূলক নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নিকৃষ্টতম প্রহসন এটি। ফলে দেশজুড়ে গণ-আন্দোলনে জেগে ওঠেন সাধারণ মানুষ।

২০০১ থেকে পরবর্তী নির্বাচনে আগ পর্যন্ত বিএনপি জামাতের অপশাসনের যুগে যা ঘটেছিল:

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপি এবং জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো শুরু করে। হত্যা-গুম-নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাটসহ এমন কোনো অপরাধ বাকি ছিল না যা তারা করেনি।

২০০১ সালের ২রা অক্টোবর: আওয়ামী লীগ সভাপতি এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি অবিলম্বে হত্যা নির্যাতন ও লুটতরাজ বন্ধের দাবি জানান।

২০০১ সালের ১০ই অক্টোবর: জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। ঐ দিনই বিএনপির সন্ত্রাসীদের আক্রমণে সারাদেশে অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষ মারা যায়।

২০০১ সালের ১৫ই অক্টোবর: সারাদেশে নির্যাতিত, আহত মানুষদের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিন্যুতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আশ্রয় শিবির খোলা হয়। শেখ হাসিনা আহত এবং পঙ্গু নেতা-কর্মী ও সারাদেশ থেকে প্রাণভয়ে বা আহত হয়ে আগত সংখ্যালঘুদের চিকিৎসা এবং আইনি সহায়তাদানের নির্দেশ দেন। ঐ দিন শেখ হাসিনা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে যান।

২০০২: সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। ধর্ষিতা হন ফাহিমা, পূর্ণিমাসহ অনেক নারী। সারাদেশে সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়ে যায়। শিশু নওশীন মারা যায় বাবার কোলে। এত কিছুর পরেও তাণ্ডব আর ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হয়নি। সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয় যেদিন, সেদিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে শেখ হাসিনা- সন্ত্রাস, লুটপাট বন্ধের দাবি জানান।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট: বঙ্গবন্ধু অ্যাভিন্যুতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপির সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালায়। তাদের লক্ষ্য ছিলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। অল্পের জন্য তিনি বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ দলের ২৪ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারান। আহত হন পাঁচ শতাধিক। সেসময় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার।

২০০৫: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা বাড়ায়। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এর তীব্র বিরোধীতা করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেও দলীয়করণ করতে উদ্যোগী হয়েছে।

২০০৬ সালের জানুয়ারি: অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্ভুল ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট পেপার এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবি উত্থাপন করেন।

২০০৬ সালের আগস্ট: শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। তিনি নির্বাচন কমিশনে সর্বজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের বসানোর দাবি করেন।

২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শেখ হাসিনা আন্দোলনের ডাক দেন।

২০০৬ সালের ২৭শে অক্টোবর: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছরের দুঃশাসনের অবসান হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়। আন্দোলনের মুখে বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর: সাংবিধানিক ধারা না মেনে বিএনপির নির্দেশে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন।

২০০৬ সালের নভেম্বর: ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। এরপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সভাপতি সকল দলের সমন্বয়ে মহাজোট নিয়ে নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

২০০৭ সালের ৩রা জানুয়ারি: যে কোনভাবে নির্বাচনে বিএনপিকে জেতানোর একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ২২শে জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সারাদেশে শুরু হয় নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলন।

দেশে নির্দলীয় সরকারের নামে তৃতীয় শক্তির উত্থান ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন

২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি: আন্দোলনের মুখে ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সরে যায়। আসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৭ সালের ১২ই জানুয়ারি: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠনের মাধ্যমে যথাশীঘ্রই সম্ভব একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করেন।

২০০৭ সালের এপ্রিল: চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান শেখ হাসিনা। সেসময় তার অনুপস্থিতিতেই তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। গোটা দেশবাসী এবং সারাবিশ্ব এই ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে। দেশের সুশীল সমাজ ও কয়েকটি চিহ্নিত পত্রিকার সম্পাদক ও মালিকপক্ষসহ সম্মিলিত ষড়যন্ত্রকারীরা ‘মাইনাস ফর্মূলা’ বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই হীন চক্রান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিদেশি গণমাধ্যমে এক আবেগময় সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে আমার জন্ম ঐ মাটিতেই আমার মৃত্যু হবে। কোনো ভয়ভীতি আমাকে দেশে ফেরা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।’

২০০৭ সালের ২৩শে এপ্রিল: জনমত এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সরকারী আদেশ ও হুলিয়া প্রত্যাহার করা হয়।

২০০৭ সালের ৭ই মে: শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। জরুরী আইনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।

২০০৭ সালের ১৪ই জুন: শেখ হাসিনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০০৭ সালের ১৬ই জুলাই: ওয়ান-ইলেভেনের পর সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বিশেষ কারাগারে বন্দি হন। অবশ্য গ্রেপ্তারের আগে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক চিঠি লেখেন। ঐ চিঠিটি ছিল এরকম-

‘প্রিয় দেশবাসী আমার সালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের উপর আমার ভরসা।

আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই।

আমি আছি আপনাদের সাথে আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বো। দুঃখী মানুষের মুকে হাসি ফোটাবোই।’

কারাগারে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে খাবারের সাথে স্লো পয়জনিং করা হয়। বিষক্রিয়ায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় তিনি বাড়ি থেকে আনা চিড়া, মুড়ি, কলা খেয়ে দিনের পর দিন কাটান, তবুও আপোস করেননি। তাঁর অনড় অবস্থানের কারণে এবং জনগণের তুমুল প্রতিবাদের মুখে সেনা সরকার তার নামে সাজানো ও মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

আওয়ামী লীগের দাবির মুখে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকার বিষয়টি ধরা পড়ার পর, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতার দাবি জানায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে প্রবল জনমতের চাপে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ১৪ দলের দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়।

ফলে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচনে পেশীশক্তি ও অর্থের ব্যবহার বন্ধ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইচ্ছুক প্রার্থীর সম্পদের বিবরণী প্রকাশ, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরপরই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করা, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধির তালিকা প্রণয়ন এবং সেখান থেকে মনোনয়ন প্রদান, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্য থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এসব প্রক্রিয়ায় যাচাইয়ের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের করা ভোটার তালিকা হতে ১ কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। এরপরেই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগসহ সর্বস্তরে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি সাধনে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গৃহীত ও বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।

সর্বদলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন, সংলাপ ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা:

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে জেতার পরেও, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু রাখার জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। এমনকি তাদের পছন্দনীয় নির্বাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণেরও প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও দেশের আইন-কানুনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে উল্টো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।

এই সময় তরুণ প্রজন্মের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে বিএনপি-জামায়াত বেঁকে বসে। সারাদেশে শুরু করে নাশকতা। সুষ্ঠু ভোট হলে নিজেদের পরাজয় হবে বুঝতে পেরে, বিএনপি-জামায়াত কৌশলে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকে এবং নির্বাচন বানচালের জন্য দেশজুড়ে নাশকতা শুরু করে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে হানাহানির পথ বেছে নেয়। তাদের এই গোঁয়ার্তুমির কারণই ১৫৩টি আসনে দেশের সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়। এই দায় সম্পূর্ণই বিএনপির।

নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে যে ভয়াবহ অরাজকতা সৃষ্টি করে, তাতে বিভিন্ন স্থানে পোলিং এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়। তবুও এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪ এবং জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে জয় পায়।

থানা লুট থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর ও যানবাহনে পেট্রোল বোমা ও নজিরবিহীন অগ্নিসন্ত্রাস চালায় বিএনপি-জামায়াত। তাদের দুর্বৃত্তায়নের ফলে প্রাণ হারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৩ জন সদস্য। পেট্রোলে পুড়িয়ে তারা হত্যা করে দুই শতাধিক মানুষকে। মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পঙ্গুত্বের শিকার হতে হয় ২ সহস্রাধিক সাধারণ জনগণকে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, ফলে একপর্যায়ে বর্বরতা থামাতে বাধ্য হয় তারা।

বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কারণে এসময় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে আরো প্রায় ১০টি পদ্মা সেতুর মতো স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব হতো।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সর্বদলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রচেষ্টা চালান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। কিন্তু সংলাপে অংশগ্রহণকারী বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো দূরভিসন্ধিমূলকভাবে রাজনৈতিক সংলাপের সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করতে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশে নানা ধরনের গুজব, অপপ্রচার চালিয়ে নির্বাচনি পরিবেশ ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে।

শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের মাঠে জনসংযোগ ও প্রচারণায় না নেমে, উল্টো সেই নির্বাচন বানচাল করার জন্য পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়, নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। বিএনপি বুঝতে পারে, দেশের মানুষ তাদেরকে কোনোভাবেই ভোট দেবে না। তাই তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এবং আওয়ামী লীগের বিজয় ঠেকাতে গঠন করে কথিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। নিবন্ধন বাতিল হওয়া যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতের প্রার্থীদেরকে নিজেদের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেয় নির্বাচন করতে। কিন্তু একইসাথে দলীয় নির্বাচনী প্রচারণা ও পোস্টারিং থেকে বিরাত থাকে। তারা আদৌ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কি না, সমর্থকরাও কনফিউজড হয়ে যায়। প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলেও কোনো কেন্দ্রেই তাদের এজেন্টদের দেখা যায়নি ভোটকেন্দ্রে! তখনই আভাস পাওয়া যায় নতুন ষড়যন্ত্রের।

‘রাতের ভোট’ নামক নতুন এক তত্ত্ব আবিষ্কার হয় ভোটের ফলাফলের পর:

সাহিত্যের ভাষায় বেশ রসালো ভঙ্গিমায় গলাবাজির জন্য বিএনপিতে বেশ কদর রয়েছে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমদের। নিজ বাড়িতে ঠাঁই নাই, তাই দলীয় কার্যালয়ের একটি বিলাসবহুল কক্ষে বছরের পর বছর অবস্থানকারী বিএনপির এই আবাসিক নেতা সারাদিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার পর যখন বুঝলেন বিএনপির ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন এক লিখিত বক্তব্য নিয়ে হাজির হলেন মিডিয়ার সামনে। দাবি করলেন ভোট নাকি আগের দিন ‘রাতে’ করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ!

তার বক্তব্যে সারাদেশ স্তম্ভিত! যেখানে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা সে সময় অন্তত ১২ কোটিরও বেশি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ১০ কোটির ওপর; বিএনপি যেখানে দাবি করে, তাদের দলটি উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয়, কর্মীর সংখ্যা কোটি কোটি; সেখানে দেশের কোনো ভোটকেন্দ্রে রাতে ভোট হওয়ার ন্যূনতম একটি ঘটনারও স্থিরচিত্র বা ভিডিও দেখাতে পারেনি বিএনপি আজ পর্যন্ত! বিএনপিপন্থী শতাধিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের ভ্রাম্যমান সাংবাদিকরা পর্যন্ত রিজভীর এই তত্ত্বের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তবে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের মুখে জনপ্রিয়তা পায় এই রূপকথার গপ্পোটি।

তবে ষড়যন্ত্র একটি নয়, বরং সেই নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতার নির্দেশসহ মওদুদ আহমেদ, বরকতউল্লাহ ভুলু, জয়নুল আবেদিন ফারুকসহ বিএনপির অনেক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল এ সময়। এমনকি নোয়াখালীতে বিএনপি নেতার কেন্দ্র দখলের উদ্দেশে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সশস্ত্র আক্রমণের ভিডিও পর্যন্ত দেখা গেছে।

তাই জাতির কাছে বিবেচনার ভার, বাংলাদেশের মানুষকে বারবার ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করলো কারা? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি?

 গণতন্ত্র, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ:

বিএনপি বারবার ‘নিরপেক্ষ’ লোকজন দিয়ে একটা ‘নিরপেক্ষ’ কমিশনের দাবি করে, ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন চায়। তাদের এই ‘নিরপেক্ষ’ নামক গালভরা তত্ত্বের কোনো সঠিক রূপরেখা তাদের কাছে নাই।  সাধারণ মানুষ বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে জয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে কোলে করে গদিতে বসিয়ে দিলে তবেই সেটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, নইলে নয়। তাদের পছন্দসই লোকজন তাদের নির্দেশে কাজ করলে, তবেই সেটা হবে নিরপেক্ষ কমিশন; অর্থাৎ ‘আজিজমার্কা’ কমিশন হলেই সেটা নিরপেক্ষ। যদিও বিএনপি নেত্রী তার বক্তব্যে একবার বলেছিলেন- পাগল ও শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়। তবুও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত এবং বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে কমিশন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে দাবি মেনে নেওয়াতেও বিএনপি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেই যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে যেহেতু দেশে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন বিদ্যমান নেই, সেহেতু এই সংক্রান্ত যেকোনো আইন হবে সংবিধান মতে একটি বিশেষ ধরনের আইন। এই আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন (Constitutional Convention) প্রতিষ্ঠা করেছে।

এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণে নির্বাচন কমিশন গঠন। যেহেতু এই সাংবিধানিক রীতি এখন পর্যন্ত দুই বার অনুশীলন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেহেতু আইন প্রণয়নের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে সর্বসম্মত বলেই পরিগণিত হয়। এমতাবস্থায়, এই রীতিটির আলোকে এবং এই প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিশেষ আইন সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে প্রণয়ন করা যেতে পারে। এরপরেও যদি কোনো গোষ্ঠী বা সংস্থা দেশের সংবিধান বা বিরাজমান আইন-কানুনের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে, তা দেশের শান্তিকামী জনগণ কখনই মেনে নেবে না।

নির্বাচন কমিশনকে কোনো বাহিনী, সংস্থা বা গোষ্ঠীর প্রভাব থেকে দূরে রাখতে এবং স্বতন্ত্র ভূমিকা পালনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। যার ফলে জাল ভোটের সংস্কৃতি দূর হয়েছে দেশ থেকে।

এখন প্রত্যেক নিবন্ধিত ভোটারের জন্য বায়োমেট্রিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ই-ভোটিং-এর প্রবর্তন, নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে নানাবিধ আইন ও বিধি প্রণয়ন, নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা তৈরি, তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই, দেয়াল লিখন ও রঙিন পোস্টারের পরিবর্তে সাদা-কালো পোস্টারের প্রবর্তন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় স্থাপন এবং নির্বাচন কমিশনকেই তাদের নিজস্ব জনবল নিয়োগের ক্ষমতা অর্পণ, প্রয়োজনীয় আর্থিক তহবিল প্রদান, সাধারণ প্রশাসনের উপর নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধান, নির্বাচনি অপরাধ প্রতিরোধে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-এর নেতৃত্বে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং যানবাহনের নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যে দৃশ্যমান উন্নতি সাধিত হয়েছে, তার সব কিছুর মূলে রয়েছে আওয়ামী লীগ কর্তৃক উপস্থাপিত ২৩-দফা।

২০১৯ সালে Representation of the People (Amendment) Act 2019’ প্রণয়ন করা হয়, যার উদ্দেশ্য EVM পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনি ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করে আর্থিক সাশ্রয়, দ্রুততম সময়ে নির্বাচন সম্পাদন ও সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করা। এই আইনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে EVM পদ্ধতি প্রবর্তন করার লক্ষ্যে এবং সরাসরি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের ১লা জুলাই আরপিও’র নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ (অনুবাদ) প্রণয়ন করা হয়েছে।

EVM-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলায় নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়, যার শিরোনাম ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১’। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ‘নির্বাচন কমিশন আইন-২০০৯’ প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশনের আইনগত ক্ষমতা, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা শুধু বৃদ্ধিই করেনি পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমনকি বিদেশে অবস্থানরত প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ‘ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২’-তে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদন গ্রহণের জন্য অনলাইন পোর্টাল উদ্বোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথ সুগম হবে।

জাতির কাছে তাই প্রশ্ন

এবার ২০২৩ সালের নির্বাচনকে সামনে নিয়ে জাতীয় সরকারের মুলা নিয়ে হাজির বিএনপি। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেছিলো সেইম ফর্মুলা, তাহলে কেন জনগণকে বঞ্চিত করা হলো ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে? ২০২৩ সালে কি ২০১৩-২০১৪ এর মতোই আরেকবার জাতির সাথে তামাশা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি?