
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ, হত্যার হুকুমদাতা, দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারির পরেও শুধুমাত্র মানবিক খাতিরে বারবার সরকারের অনুকম্পা পেয়েছেন বিএনপির দুর্নীতিগ্রস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বর্তমানে তার গুলশানের বাসায় বহাল তবিয়তে আরামদণ্ড উপভোগ করছেন। তবে তার শারীরিক অনুপস্থিতিতে তার দল বিএনপির অবস্থা নাজেহাল। বর্তমানে বিএনপি একেবারেই অকার্যকর এবং লক্ষ্যহীন সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি আর বড়জোর বছর দুয়েক টিকতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিভিন্ন দল-উপদলে কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে বিএনপি। একপক্ষ আন্দোলন করতে চায়, আরেকপক্ষ অনীহা জানায়- এভাবে চলছে গত কয়েক বছর ধরে। এমনকি দলের মহাসচিবকেও কেউ কেউ সরকারের নিজস্ব লোক বলে দাবি করছেন। অনেকে প্রকাশ্যেই দাবি করেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম তার মামলাগুলো থেকে রেহাই পেয়ে গেছেন সরকারের সাথে দেন-দরবার করে। আর শর্ত অনুযায়ী বিএনপিকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখছেন।
দলের একাংশ চায় না মির্জা ফখরুল মহাসচিব থাকুক। অপরপক্ষে কয়েকজন পরস্পর গুতোগুতি করছেন আগামী কাউন্সিলে মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে। এরমধ্যে এতদিন যাবৎ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এগিয়ে থাকলেও এখন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পছন্দ অনেকের। যদিও হাইকমান্ড উগ্রবাদী শরিকদলগুলোকে খুশি রাখতে ধর্মীয় কারণেই গয়েশ্বরের প্রতি আগ্রহী নয়, এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে তারেক রহমানের আস্থাভাজন আমানউল্লাহ আমান এবং মির্জা আব্বাসের নাম শোনা যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ বিএনপি এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিত্রহীন একটি দলে পরিণত হয়েছে
তবে আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ দলের একটা অংশ চায় বয়ঃজ্যেষ্ঠ হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে মহাসচিব করা হোক। কিন্তু খন্দকার মোশাররফ আগ্রহী নন, কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন- দীর্ঘদিন রাজনীতি করা এই নেতা তার হাঁটুর বয়সী তারেক রহমানের সরাসরি অধীনে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং তার আদেশ-নিষেধ শুনতে আগ্রহী নন। বরং তিনি নিজের আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে এগিয়ে রাখতে চান। এসব ছাড়াও একেক নেতার অনুসারীরা অন্যদের সহ্য করতে পারছেন না। এসব নিয়েই কোন্দলে-কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি।
এদিকে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ চাইছে বিএনপি যেন সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসে। আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রতিপক্ষ হয়ে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক অবস্থানে যেন আসতে পারে বিএনপি, এটাই প্রগতিশীল বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাওয়া। আর সেজন্য স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে পরিত্যাগ করার দাবিও রয়েছে খোদ বিএনপির ভেতরেই। আর এমন মনোভাব দেখে জামায়াতও বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ।
তবে বাস্তবতা বুঝতে পেরে অনেকদিন ধরেই ভোল বদলাতে শুরু করেছে জামায়াত। ভিন্ন নামে এবং ব্যানারে সংগঠন করছে তারা। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে জামায়াত-শিবির নিজেদের সংগঠনের কর্মীদেরকে (পদধারী নেতা নয়) গোপনে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোদ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ভেতরে ঢুকে পড়েছে এমন লোকজন। যাদের অতীত খুঁজতে গেলে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে থাকার প্রমাণ মেলে না। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তারা জামায়াত-শিবিরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা তাদের কর্মকাণ্ডেই পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ বিএনপিকে নিয়ে হাসাহাসি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও
আগে যেমন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা ভাগাভাগির স্বপ্ন দেখত, বর্তমানে জামায়াতই বিএনপিকে আর সেভাবে পাশে রাখতে চায় না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থেকেই তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আর এই ষড়যন্ত্রে তারা সফল হলে এমনিতেই বিএনপি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জামায়াতও ভালো করেই জানে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান- দুজনের কেউই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তাই অযথা বিএনপির মত একটা বোঝা তারা টানতে চায় না।
জামায়াতের শত শত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার অর্থায়নের ওপর ভিত্তি করে সংগঠন টিকে রয়েছে। সংগঠনের নিবন্ধন হারালেও তাদের নেতা-কর্মীরা নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। অন্যদিকে বিএনপির সেই সাংগঠনিক শক্তি নেই। ফলে তাদের বিলুপ্তি এখন সময়ের ব্যাপার। যেহেতু সহসা তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর আর কোনো পথ নাই, তাই প্রায় নিশ্চিত বিএনপি এখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে।