বিএনপি

মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা ঢেলেও সুবিধা করতে পারছে না বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে সৃষ্ট গুজব সেল। বিদেশে পলাতক হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানের কলকাঠি নাড়নে দিবারাত্রি খেটে মরছে গুজবসেল এর সদস্যরা। কখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কখনও দেশের বিভিন্ন জায়গার মসজিদের মাইক থেকে গুজব ছড়িয়ে দেশের পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গুজব সেল এর সদস্যরা।

সম্প্রীতির বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ধর্মীয় ইস্যুতে সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে একটি চক্র। যার লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো। ইতিহাসের সবচেয়ে সুখকর শাসনামল পার করছে বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িকতা। যদিও সরকার ও প্রশাসন কঠোর হস্তে দমনও করছে।

অর্থনীতি, রাজনীতি, স্বাস্থ্য খাত (টিকা সংক্রান্ত), শিক্ষা ব্যবস্থাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চক্রান্ত করছে গুজবসেল। নানারকম আজগুবি ও কল্পিত তথ্য নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে গুজব ও প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে এই চক্রটি। তাদের ষড়যন্ত্রের ফলে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন, কূটচালের বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সরকারের সতর্ক অবস্থানের কারণে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবার তারা বেছে নিয়েছে ঘৃণ্য আরেক পথ।

আরো পড়ুনঃ শাপলা চত্বরে হেফাজতের আড়ালে ধ্বংসযজ্ঞের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো খালেদা জিয়া

দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে ট্রিগার করতে ছড়াচ্ছে ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে গুজব আর অপপ্রচার। শুরু হয়েছিল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে। সে সময় সারাদেশে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পূজা মণ্ডপে কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে। পরে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করার পর জানা যায় বিএনপির নেতারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই সাথে সারাদেশে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ভাঙচুর এবং লুটপাট, দাঙ্গা, সহিংসতায় নেতৃত্ব দেয় বিএনপি, জামায়াত, শিবির, হেফাজতসহ ধর্মান্ধ গোষ্ঠী।পূজামণ্ডপ ভাঙচুর

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাওয়ালি আয়োজনকে কেন্দ্র করে নতুন ঘটনায় উস্কানি দেওয়া হয়। মূলত বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ও কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত শিবিরের সন্ত্রাসীদেরকে ঢাবি ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিতে চেয়েছিল কাওয়ালী আয়োজনের নামে। এতে অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুর সংগঠনের কর্মীরা। সাথে সম্পৃক্ত ছিল হেফাজত এবং চর্মনাইপন্থীরাও। অর্থাৎ আক্বীদা ভিন্ন হলেও সরকারবিরোধীতায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করা বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের কঠোর অবস্থানের কারণে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এরপর আসে নতুন ইস্যু। রাজারবাগ পীরের একটি মহিলা সংগঠন। সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্টের একটি মামলার রায়ের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজারবাগ পীর ও তার ধর্মীয় সংগঠনের আওতাভুক্ত নামে-বেনামে যত সম্পত্তি রয়েছে, তার তত্ত্ব-তালাশ করে আদালতে যেন প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এমন খবরে স্বভাবতই পীরালি ব্যবসার মাধ্যমে এবং বহু মানুষের সম্পত্তি উচ্ছেদের মাধ্যমে জোরপূবর্ক দখলকারী (মামলা চলমান) রাজারবাগ গোষ্ঠী চাপে পড়ে যায়। আর সেই ঘটনা থেকে লোকের দৃষ্টি ফেরাতে আমদানি করে নতুন ইস্যু।

আরো পড়ুনঃ চতুর জামায়াতের লাশের রাজনীতি: টার্গেট হেফাজতে মাদ্রাসাগুলো

পর্দার নামে নারীদের মুখমন্ডলের ছবি ছাড়া এনআইডি কার্ডের দাবিতে তারা সংবাদ সম্মেলন করে। কিন্তু হাস্যকর দাবী বলে পাত্তা পায়নি। কিন্তু এতে ধর্মান্ধ কয়েকটি গোষ্ঠীকে তারা পাশে পেয়ে যায়। এরা আবার নতুন দাবি তোলে ঢাবির টিএসসিতে মহিলাদের নামাজের জন্য স্থান সংকুলানের জন্য। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং বিভিন্ন ছাত্রী হলে আলাদা নামাজের বন্দোবস্ত থাকা সত্ত্বেও সকল ধর্ম, মত এবং আদর্শের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা টিএসসিতেই নামাজের স্থানের দাবির মত স্পর্শকাতর বিষয়ের অবতারনা করা হয়। এটাও পাত্তা পাচ্ছে না।

এসব ইস্যু ব্যর্থ হওয়ায় এবার ঢাকার বাইরের এলাকাগুলোতে নজর দিয়েছে চক্রান্তকারীরা। যার অংশ হিসেবে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জের একটি স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে হেনস্থা করা। বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদানকালে ছাত্রদের সাথে তার যৌক্তিক এবং যথার্থ আলোচনার অংশ বিশেষ মোবাইলে গোপনে রেকর্ড করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যেখানে যুক্ত ছিলেন ওুই স্কুলের এক শিক্ষক, যিনি হৃদয় মণ্ডলকে এভাবে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে এই ঘৃণ্য কাজটি করান। এতে যুক্ত ছিলেন জামায়াতের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আরো কয়েকজন।

এছাড়াও নওগাঁর একটি স্কুলে হিজাব বিতর্ক উস্কে দিয়ে শিক্ষিকা আমোদিনি পালকে ফাঁসানোর অপচেষ্টার ঘটনাও ফাঁস হয়েছে। আজকের খবরে মিলেছে মীরসরাইয়ের একটি স্কুলের ঘটনা। কিছুদিন আগে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় এক ছাত্রীকে হিজাবের জন্য বকাঝকা করার। যদিও স্কুলের ৭০টি সিসিটিভি ক্যামেরার বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই ঘটনাকে পুঁজি করে শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়াকে মারধর করেন চার ব্যক্তি, যারা নিজেদেরকে ওই ছাত্রীর চাচা দাবি করেন।

আরো পড়ুনঃ নওগাঁর স্কুলে ‘হিজাব বিতর্কের’ পেছনে কী?

সেই ঘটনায় ওই ছাত্রী নিজের সাথে শিক্ষকের রোষের শিকার হিসেবে আরও দুই ছাত্রীর নাম যুক্ত করে। যদিও সেই দুই ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে জানায়, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এমনকি অভিযোগকারী ছাত্রী যে সময়ের কথা বলছে, সে নিজেই সেদিন পিটির সময় স্কুলে ছিল না, সে সেদিন দেরি করে এসেছিল। এখানে অভিযোগকারী ছাত্রীকে উস্কে দিয়েছিলেন রবিউল নামের এক শিক্ষক। এমন ঘটনা উপুর্যপুরী ঘটেই চলেছে।

কিন্তু কথা হলো কেন এই অপচেষ্টা? শান্তিতে থাকতে চাইছেন না কারা? কারাই বা বিভেদ ও বিবাদ সৃষ্টিতে সর্বাত্মক অপচেষ্টা করছে? প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন ইস্যু ও ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প যখনই মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তখনই চক্ষুশূল শুরু হয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের। ফলে শুরু করে অপপ্রচার। কোনো ইস্যু না পেলে ওরা হাত দেয় সাম্প্রদায়িকতায়।

এই ঘটনাগুলোর পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের গুজবসেল এর হাত। যারা পদ্মাসেতুর উদ্বোধন, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সম্পন্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর সফলতার বিষয় মেনে নিতে পারছে না। মাথাব্যথা শুরু হয়েছে সরকারবিরোধীদের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণকে ধর্মের নামে ক্ষেপিয়ে তুলে দেশে দাঙ্গা লাগানোর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করছে একটি পক্ষ; যারা দেশের উন্নয়ন চায় না। এরা চায় দেশকে পাকিস্থানের মত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। সম্মিলিত প্রতিরোধই পারে দেশকে রক্ষা করতে। তাই সচেতনতা এবং চোখ-কান খোলা রাখা জরুরি।

আরো পড়ুনঃ