
১৯৭১ সাল পূর্ব পাকিস্থানের সামরিক স্পাই হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বলে জেনারেল টিক্কার অনুসারী কর্নেল বেগ নিশ্চিত করেছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে। বিষয়টি ২৬শে মার্চ ১৯৭৪ তারিখে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক প্রবন্ধে জিয়াউর রহমান নিজেও উল্লেখ করেছেন।
পাকিস্থানের চৌকস সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল বেগ-এর ভাষ্যমতে, গোপন তথ্য প্রকাশ পেয়ে যাবার ভয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার প্রথম ২-৩ দিনের মধ্যেই ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার আব্দুর রশিদ জানজুয়াসহ স্পাইংয়ের বিষয়টি জানে, এমন কয়েকজন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন মেজর জিয়াউর রহমান।
আরও পড়ুন : গণহত্যার রাত থেকেই মেজর জিয়ার হাত ছিলো বাঙালির রক্তে রঞ্জিত
মূলত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়ক ছিলো এই জিয়া। পাকিস্থান যাতে বিভাজিত না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য পাকিস্থানের সামরিক স্পাই হিসেবে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তিনি। মেজর জিয়ার এসব কীর্তি প্রকাশ হতে শুরু করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্থানের প্রেতাত্মারা সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্থানের সামরিক স্পাই মেজর জিয়ার নানা কীর্তি প্রকাশ করেছেন জেনারেল টিক্কার অনুসারীরা। আর এসব প্রচার হলেই জ্বালাপোড়া শুরু হয় পাকিপন্থীদের। বিশেষ করে হলুদ সাংবাদিক কনক সরওয়ার, রাজাকার শাবক ইলিয়াস হোসাইন, সিআইএ’র ফান্ডে পত্রিকা চালানো তাসনিম খলিলরা সংবাদের নামে ঐতিহাসিক সত্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার নানান অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্থানের সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মেজর জিয়ার যোগাযোগের মূল সোপান ছিল পাক আর্মি অফিসার কর্নেল বেগ। যে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কর্নেল বেগ কথা বলেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। মোটা দাগে জিয়ার অপকর্মের কিছু দিক তুলে ধরা হলো-
• মেজর জিয়া ছিলেন পাকিস্থানের সামরিক স্পাই!
• মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জেনারেল টিক্কার অনুসারী কর্নেল বেগের সঙ্গে মেজর জিয়ার সম্পৃক্ততা।
• মুক্তিযুদ্ধে পরস্পর মুখোমুখি দুটি পক্ষের দুই সেনা কর্মকর্তার মাঝে বিশেষ যোগাযোগ ও পত্র বিনিময়।
• বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের সময় আকস্মিক নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করেছিলেন মেজর জিয়া।
• বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ধূর্ততার সঙ্গে জুনিয়র অফিসারদের ব্যবহার করে মসনদ হাসিল।
এ প্রসঙ্গে পাকিস্থানের এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম আসগর খান বলেছিলেন, মেজর জিয়া খুবই ধূর্ত অফিসার ছিলেন। তিনি খুব দ্রুত জেনারেল টিক্কার চোখে পড়তে সক্ষম হন। যখন পূর্ব পাকিস্থানের সকল বাঙালি সামরিক সদস্যদের পশ্চিম পাকিস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনও কিন্তু জিয়াকে পূর্ব পাকিস্থানেই রাখা হয় বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে। যা অনেকেই জানেন না।
জুনিয়র কর্মকর্তা জিয়াকে জেনারেল টিক্কা প্রচণ্ড বিশ্বাস ও স্নেহ করতেন। তাই তাকে অতিরিক্ত সুবিধাদি দিয়ে পাকিস্থানের সামরিক স্পাই হিসেবে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহ-অধিনায়ক করে পূর্ব পাকিস্থানে পাঠানো হয়।
Table of Contents
[মুক্তিযুদ্ধ ছিল আইএসআই’র স্পাই জিয়ার স্পেশাল মিশন : ৭১ ও পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিত]

এদিকে দেশবরেণ্য সাংবাদিক আবেদ খান রচিত অনবদ্য ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি’র প্রতিটি পরতে পরতে উঠে এসেছে ইতিহাসের বিভিন্ন দিক। শক্তিমান এই সাংবাদিক উন্মোচিত করেছেন অতীতের বহু জঞ্জাল।
ইতিহাসের একজন প্রত্যক্ষ রাজসাক্ষীর মতো লেখাটির বিভিন্ন পর্বে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সেই ষড়যন্ত্র, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ব্যক্তি ও ঘটনা এবং তার পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক অজানা অধ্যায় উন্মোচন করেন।
আরও পড়ুন : ইতিহাসের কাঠগড়ায় স্বৈরশাসক জিয়ার গুম ও হত্যার রাজনীতির উপাখ্যান
যার প্রেক্ষিতে- ধূর্ত মেজর জিয়ার খোলসে আবৃত বীভৎসতা এবং এর সত্যতা প্রকাশের পাশাপাশি নীতিভ্রষ্ট এই সেনা কর্মকর্তাই যে ১৯৭৫ ও তৎপরবর্তী প্রতিটি কুকর্মের মাস্টারমাইন্ড; সেই বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি সেই বর্ণিত তথ্যগুলোর সত্যতা জানান দিতেই সামনে এসেছে বেশকিছু আলোচিত গোপন তথ্য। বিশেষ সূত্রের ভিত্তিতে প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর এই তথ্যাদি ও তাদের যৌক্তিক বিশ্লেষণে প্রাপ্ত দিক-নির্দেশনা অন্তত তাই বলছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিকামী বাঙালির নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। বরাবরই বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিতর্কিত একজন সেনা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে নিজের অবদানের জন্য কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন সাবেক সেনা শাসক, রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া।
কিন্তু এমন ‘দেশপ্রেমিক’ একজন সেনা সদস্য কেন পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনা ক্যু’র মাধ্যমে জাতির পিতাকে সপরিবারে (২ জন ব্যতীত) নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হয়েছিলেন, তা অনেকের কাছেই একটি রহস্য। ধারণা করা হয়, বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রভাবে ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠাই ছিল এর মূল কারণ।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু হত্যা: সিআইএ নেটওয়ার্ক এবং জিয়াউর রহমানের ভূমিকা
সম্প্রতি বেশকিছু সেনসিটিভ তথ্য ও গোপন নথি প্রকাশের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বা ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গ দোষে নয়, বরং পেশাদারিত্বের সঙ্গে শত্রুর সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এজেন্ট হিসেবে পুরোদস্তুর একজন দেশপ্রেমিক ও মুজিব আদর্শের কথিত বীরযোদ্ধারূপে আবর্তিত হয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্থান সেনা গোয়েন্দা সংস্থার অন্যতম চৌকস সদস্য মেজর জিয়া।
এ সকল নথির মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময় জাগানিয়া প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ও তৎপরবর্তী বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেয়া জেড ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জিয়ার কাছে লেখা পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত কসাই টিক্কা খানের অন্যতম বিশ্বস্ত অনুসারী কর্নেল বেগের একটি চিঠি।
যার প্রেক্ষিতে তৎকালীন নানান ঘটনা ও প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতির যৌক্তিক বিশ্লেষণে সামনে আসছে ভয়াবহ তথ্য। যেখানে বলা হচ্ছে, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং পাকিস্থান ইন্টেলিজেন্সের কুখ্যাত স্পাই হিসেবে মিশনে আসেন জিয়া। যার লক্ষ্য ছিল, বঙ্গবন্ধুর একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এবং একান্তই যদি পাকিস্থান মুক্তিযুদ্ধে হেরে যায়, সেক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বাঙালির নিউক্লিয়াস বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর স্বপ্নকে শেষ করে দেয়া!
আরও পড়ুন : মেজর জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতার উপাখ্যান
এরই ধারাবাহিকতায় জিয়া হত্যাকাণ্ডেরও একটি যৌক্তিক কারণও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। প্রভুদের মিশন সম্পন্ন করতে আসা জিয়া নিজেই যখন প্রভুত্ব অর্জনের লোভে নিমজ্জিত হয়, তখনই প্রয়োজন ফুরিয়ে আসা মেজর জিয়াকেও নীরব করে দেয়া হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
আর এই ক্ষমতামুখী লোভে মেজর জিয়ার বহু অতীত সত্যের পর্দা উন্মোচিত করছে বর্তমানে। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি অবশ্য বরাবরই তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করলেও এই দাবি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, তা প্রমাণ হয়েছে বহু আগেই। জিয়ার নিজের লেখা ৭৪ সালের সেই প্রবন্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের বিষয়ে নিজের কোনো কৃতিত্বের দাবিও করেননি।
সম্প্রতি দুর্লভ এই চিঠি, সংশ্লিষ্ট উইকিলিকসের গোপন তথ্য ও সাবেক এক আইএসআই সদস্যের দেয়া তথ্যের প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী নানা প্রসঙ্গে অজানা সত্যের সমারোহ ঘটতে শুরু করে মেজর জিয়াকে ঘিরে। যার মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে পাকিস্থানের প্রতি আনুগত্যের কারণেই জিয়ার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আইএসআই-এর পর্যায়ক্রমে অর্থায়ন প্রসঙ্গটিও।
[মুক্তিযুদ্ধ ছিল আইএসআই’র স্পাই জিয়ার স্পেশাল মিশন : ৭১ ও পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিত]
বেশ কিছুদিন আগে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের মোটা অংকের সঞ্চিত অর্থের হিসাব এবং উৎস জানতে চাইলে ব্রিটিশ তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হয়, তার টাকা জুয়ায় উপার্জিত। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে আসলে দেশবিরোধী কত বড় জুয়ার আসরে তিনি মজেছেন।
বাবা মেজর জিয়ার উত্তরসূরি, আইএসআই এজেন্ট তালিকায় নাম ওঠানো তারেক জিয়া কোন সূত্রে পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং তার মা খালেদা জিয়া কেন জামাতপন্থি রাজনীতির চর্চায় নিবেদিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রটোকল ভেঙে পাকিস্থানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জানজুয়ার (জিয়ার কমান্ডিং অফিসার) এর মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে জানজুয়ার নিজের দেশ পাকিস্থানেই তার মৃত্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি। এসব প্রশ্নের উত্তর মেলে সে সময় মেজর জিয়াকে লেখা পাকিস্থানি কর্নেল বেগের একটি চিঠির মাধ্যমে।
সে সময় জিয়া-বেগ দ্বৈরথ চলার কথা ধুন্ধুমার, যেহেতু মেজর জিয়া ছিলেন একজন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা আর বেগ ছিলেন পাকিস্থানি কসাই টিক্কার ভৃত্য। অথচ বিস্ময়করভাবে তাদের মাঝে সে সময় অবিশ্বাস্যভাবে গড়ে ওঠা সমঝোতার ক্ষেত্রটিই অনেকাংশে স্পষ্ট করে তোলে জিয়ার মূল ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো।
চিঠিটি ১৯৭১-এর ২৯শে মে লেখা। চিঠিতে তৎকালীন কর্ণেল বেগ লিখেছেন, মেজর জিয়াউর রহমানকে। প্রথমেই চিঠির ভাষ্য পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে:-
Major Ziaur Rahman, Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say, good job. you will get new job soon.
Don’t worry about your family. Your wife and kids are fine you have to be more careful about major Jalil.
Col. Baig Pak Army
May 29. 1971
মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি, ঢাকা
তোমার কাজে আমরা সবাই খুশি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে তুমি ভালো কাজ করছো। খুব শীঘ্রই তুমি নতুন কাজ পাবে।
তোমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না। তোমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ভালো আছে। তোমাকে মেজর জলিল সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
কর্নেল বেগ, পাক আর্মি
মে ২৯, ১৯৭১।
এক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, চিঠি লেখার সময়কাল বলছে, সে সময় পাকিস্থানি সেনাদের বিপক্ষে মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত বাঙালিরা। স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি সংগ্রাম করছে, চারদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর মৃত্যু। যেখানে মেজর জিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরের কমান্ডার, একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন।
আর কর্নেল বেগ, পাকিস্থানি বাহিনীর অন্যতম কর্তা। সকাল-সন্ধ্যা বাঙালি নিধনের নির্দেশ দিচ্ছেন, ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছেন। দুজনই সমর ক্ষেত্রে চরম প্রতিপক্ষ। অথচ কর্নেল বেগ জিয়াকে পাক আর্মির অংশ মেনেই বলছেন- ‘তোমার কাজে আমরা খুশি।’ মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াকে পাক সেনাদের অন্যতম কর্তা কী এমন কাজ দিয়েছেন যে, এতো রক্তক্ষয় আর সম্ভাব্য পরাজায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও খুশি ছিলেন কর্নেল?
[মুক্তিযুদ্ধ ছিল আইএসআই’র স্পাই জিয়ার স্পেশাল মিশন : ৭১ ও পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিত]
এ অংশ থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন অকথিত অধ্যায়ের একটি বিশাল অংশ আলোতে আসে। এর মানে কি এই, দৃশ্যত জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করলেও আসলে তিনি ছিলেন পাকিস্থানি বাহিনীর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন? আর তাতে তিনি সফল হচ্ছিলেন? আর সেটা যে অনেকাংশেই বাস্তব তা বোঝাতে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তিলে তিলে খন্দকার মোশতাকদের ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু হওয়ার কথা আজ জাতি কিন্তু জানে।
সে সময় পাকিস্থান সম্পূর্ণভাবেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের জাদুর কাঠির ইশারায় চলতো। আর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ে স্পাই ও আততায়ী ব্যবহারের ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত রণকৌশলের জন্যে মার্কিনিরা সারা দুনিয়াতেই বেশ পরিচিত।
যা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে, বিশেষ করে ভারত ও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনের ফলে উৎকণ্ঠিত ও দোসরদের যুদ্ধজয়ে মরিয়া কিসিঞ্জারের আত্মমর্যাদা যখন বিবস্ত্র প্রায়, তখনই এমন স্পাই প্রেরণের মাধ্যমে নোংরা ষড়যন্ত্রের চাল শুরু হয়। যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ছিলেন সম্ভবত জিয়া।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ষড়যন্ত্রে মোশতাক চক্রের সঙ্গে জিয়ার যোগাযোগের কথাও জাতি জানে। কিন্তু যেটি এই চিঠি স্পষ্ট করে দিয়েছে তা হলো ‘মুক্তিযোদ্ধা’ জিয়া আসলে ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্থানি বাহিনীর এজেন্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানি ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ ছিলেন মেজর জিয়া।
আরও পড়ুন : জিয়াউর রহমানের টেনিস-কোর্ট ষড়যন্ত্র
মুক্তিযুদ্ধের সময়ই তাকে পাকিস্থানিরা ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দিয়েছিল, যে দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছিলেন। ৭৫-এ জিয়ার ভূমিকায় যারা হিসাব মেলাতে পারেন না, তাদের জন্য এই চিঠি একটি বড় উন্মোচন।
এই চিঠি প্রমাণ করে, জিয়া কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, তিনি ছিলেন পাকিস্থানের ‘স্পাই’। আর এ কারণেই ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জিয়া মোশতাক চক্রকে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত এই ঘটনা ঘটান। এ কারণেই, ৭৫-এর পর জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধে আটকদের মুক্তি দিয়েছিলেন।
এ কারণেই, জিয়া পলাতক গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এ কারণেই জিয়া আবার জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এ কারণেই জিয়া, চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, দলে নিয়েছিলেন। এ কারণেই জিয়া রক্তে ভেজা আমাদের সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছিলেন। এ কারণেই জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিস্মাৎ করেছিলেন।
আরও পড়ুন : জিয়াউর রহমানের শাসনামল: মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের কোণঠাসা করতে জিয়ার অপকৌশল
একই কারণে জিয়ার মৃত্যুর পরও ১৯৯১-এ ক্ষমতায় এসে বিএনপি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেনি। এ কারণেই খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতকে নিয়ে জোট করেছেন। এ কারণেই, ক্ষমতায় এসে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এ কারণেই খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। প্রকাশ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ কারণেই তিনি এবং তার উপযুক্ত পুত্র জঙ্গি, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।
এই চিঠির যোগসূত্র আমরা পাই, পাকিস্থানের আদালতে দেয়া আইএসআই প্রধানের বক্তব্যে। বছরখানেক আগে আইএসআই প্রধান আদালতে এক লিখিত স্টেটমেন্টে বলেছিলেন- ‘বিএনপিকে আইএসআই নিয়মিত অর্থ দেয়।’
আরও পড়ুন : ২০১৭’র জুলাইতে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য ছিল আইএসআই’র সাথে গোপন বৈঠক
[মুক্তিযুদ্ধ ছিল আইএসআই’র স্পাই জিয়ার স্পেশাল মিশন : ৭১ ও পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিত]

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, খালেদা জিয়ার একটি নিবন্ধ ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ নামে একটি মৌলবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই নিবন্ধে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, এ ব্যাপারে তিনি মার্কিন হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অর্থাৎ জিয়া ‘স্পাই’ হয়ে পাকিস্থানি আনুগত্যের যে বীজ বপন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তা তখন মহীরুহে পরিণত হয় এবং তারেকের হাত ধরে সেটা অব্যাহত রয়েছে।
এজন্যই জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব আর খালেদা-তারেকের হাহাকারের সঙ্গে চলেছিল মার্কিন তোড়জোড়- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকালে। এই চিঠির সঙ্গে খালেদা জিয়ার নিবন্ধের যোগসূত্রও পাওয়া যায়। খালেদা জিয়া তার নিবন্ধের শুরুতে বলেছেন- ‘১৯৭১ সালে প্রথম সারির জাতিগুলোর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আত্ম-সংকল্পের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।’

৭১-এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আমরা সবাই জানি। অনেকে মনে করতে পারেন, খালেদা জিয়া কীভাবে এমন ভুল করলেন। কিন্তু জিয়ার কাছে লেখা কর্নেল বেগের ৭১-এর চিঠি বলে দেয়, খালেদা জিয়া জেনে বুঝেই এসব লিখেছেন। ৭১-এ পাকিস্থানিদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭ম নৌবহর পাঠিয়েছিল ইয়াহিয়ার অনুরোধে। সেই ইয়াহিয়া খানের স্পাই জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া তাই মার্কিন ভূমিকার প্রশংসা করবেনই। একই কায়দায় তিনিও তো মার্কিন আগ্রাসনের আমন্ত্রণও জানাবেন।
সুভাষ সিংহ রায় আরো বলেন, এই একটি চিঠিই দিচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর, অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান। আর সেটাই বাস্তবতা। এরই ধারাবাহিকতায় হয়তো একদিন নিজ তাগিদেই এদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বুঝে নেবে, খালেদা জিয়ারা কখনো গণতন্ত্রের জননী হতে পারেন না, সেটা গণতন্ত্রের জন্য লাঞ্ছনা। তেমনি জামায়াত কখনও নাম বদলে নিলেও আমার বাংলাদেশের আপন হতে পারে না।
আর তারেকরাও পারে না পূর্বসূরির পাপের পথ অনুসরণ না করে তা বন্ধ করতে। সেজন্যেই এদের দ্বারা ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতাকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। সম্ভব হয়েছিল ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জাতির জনকের শেষ রক্তবিন্দুটুকু বাংলার মাটি থেকে নিঃশেষ করে দেয়ার মত ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালানোর।
আরও পড়ুন :
- ৭ নভেম্বর: মুক্তিযোদ্ধা হত্যা ও রাজাকারদের ক্ষমতায়ন শুরু করে জিয়া
- পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে একটি গুলিও চালায়নি জিয়া
- জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে কতজনকে হত্যা করা হয়েছিল?