মেজর জিয়া

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে মেজর জিয়া পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধ শেষে পাক সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পদক “হিলাল-ই-জুরাত” পদক জোটে তার ভাগ্যে। সূত্রঃ- উইকিপিডিয়া ও পাক ডিফেন্স ফোরাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত জিয়াউর রহমান অখ্যাত কোন মেজর ছিলেন না। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুগত এবং প্রচণ্ড রকম ভারতবিদ্বেষী ও মুজিববিদ্বেষী ছিলেন। তার প্রমাণ তিনি রেখেছেন প্রতি পদে পদে।

জিয়াউর রহমান ১৯৬৮-৬৯-এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে খ্যাত “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের মামলা”য় পাকিস্তান সামরিক সরকারের কৌশুলি কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানের সহকারী ছিলেন। কথিত আছে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সামরিক সরকারের পক্ষে কথা আদায়ে এই দু’জন বঙ্গবন্ধুকে জেরা ও নির্যাতন করেন। সূত্রঃ- জেনারেল জিয়ার রাজনীতি, আবীর আহাদ। মেজর জিয়া

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ “স্বাধীনতার ঘোষণা” বেতারে সম্প্রচারের জন্য যখন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ জ্যেষ্ঠ বাঙালী সামরিক কর্মকর্তার খোঁজ করছিলেন তখন বাঙালী নিধনে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের দায়িত্ব পালনে প্রেরিত হয়েছিলেন মেজর জিয়া। কনিষ্ঠ বাঙালী সামরিক কর্মকর্তারা তাকে পথ থেকে ধরে এনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে হাজির করেছিলেন। সূত্রঃ- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বেলাল মোহাম্মদ।

আরও পড়ুনঃ জিয়া যেভাবে বদলেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

 

বাঙালী জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের চূড়ান্ত এক সন্ধিক্ষণে ঘটনাচক্রে সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন স্বাধীনতার ঘোষক। প্রথমবার স্বাধীনতার ঘোষণায় নিজকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের চাপের মুখে তা প্রত্যাহার করে পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও অধীনে উল্লেখ পালন করেন। এটি ছিল পরিষ্কার অসততা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা মাত্র।

মেজর জিয়ার কুকীর্তির কিছু কথা সংযোজিত হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ধারাক্রম পূর্ণতা পাবে। ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ রাত ১১-৩০ মিনিটে ঢাকায় “অপারেশন সার্চলাইট” অনুযায়ী পাকবাহিনী কর্তৃক পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যা শুরু হলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সিগন্যাল কোরের বাঙালী সৈনিকরা সে খবর ১ম জানতে পায় এবং তারা একত্রে সমবেত হয়ে সদলবলে রাত ১২-৩০ মিনিটে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। তখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাঙালী সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ১,৮০০ জন।জিয়া

এসময় তারা খবর পায় সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন বাঙালী অফিসার ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে পাকবাহিনী ইতোমধ্যে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। এ সংবাদে বাঙালী সৈনিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং পাক সৈনিকদের বন্দী অথবা কোনরকম বাধা পেলে হত্যার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তখন রাত ১টা থেকে ১-৩০ মিনিটে ২য় ইস্ট বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার লে. ক. জানজুয়া তার অধস্তন টুআইসি মেজর জিয়াকে যে কোনো কৌশলে বাঙালী সৈনিকদের বিদ্রোহ দমনের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে একটি গুলিও চালায়নি জিয়া

বসের নির্দেশনানুযায়ী পাক আর্মি ইন্টেলিজেন্সের বিশ্বস্ত ও চৌকষ কর্মকর্তা মেজর জিয়া বাঙালী সৈনিকদের উদ্দেশ করে তাৎক্ষণিক এক আবেগময় বক্তৃতায় তার অধীনস্ত সৈনিকদের অস্ত্র সমর্পণের অনুরোধ জানান এবং বলেন, বিদ্রোহ করবার প্রয়োজন হলে তা আমার নেতৃত্বেই হবে এবং জীবন দেওয়ার প্রয়োজন হলে সর্বপ্রথম আমিই জীবন দেবো।

সুতরাং, আপনারা অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণ করে বিশ্রামে যান। বাঙালী সৈনিকরা তাদের ঊর্ধ্বতন বাঙালী এই অফিসারের আবেগপ্রবণ কথায় বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করে অস্ত্র সংবরণ করে এবং ঘুমাতে যায়।রাত ২টা থেকে আড়াইটার দিকে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত ১,৮০০ বাঙালী সৈনিকের উপর মাত্র ৫০০ বেলুচ ও পাঞ্জাবী সৈন্যেরা অতর্কিতে আক্রমণ চালায়্ এবং সর্বমোট ১,২০০’র অধিক সৈনিক, তাদের পরিবার ও শিশুদের চরম নির্মমতায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। সুতরাং ২৫শে মার্চ গণহত্যার রাত থেকেই তথাকথিত ঘোষক মেজর জিয়ার হাত ছিলো বাঙালির রক্তে রঞ্জিত।

আরও পড়ুনঃ