
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। যদিও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গত সেপ্টেম্বর মাসে মাহমুদুর রহমান নামে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। ইতোমধ্যে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনে হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছেন।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, ১৪ বছর ধরে একজন ব্যক্তি পরিচয় গোপন করে নাকের ডগায় বসবাস করবেন এবং নতুন ভোটার আইডি কার্ড, পার্সপোর্ট ইত্যাদি গ্রহণ করবেন। এ কারণে সরকার এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।
এবার হারিছ চৌধুরীর রহস্যের মধ্যেই ইলিয়াস আলীকে নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর ঘটনাটি কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছে। তা হলো, হারিছ চৌধুরী যদি মাহমুদুর রহমান নাম নামে এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট গ্রহণ করেন এবং সেই পরিচয়েই মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে ধরে নিতে হবে বাংলাদেশে যেকোনো ব্যক্তির আত্মগোপন করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন মির্জা আব্বাস
হারিছ চৌধুরী ছিলেন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি। সাধারণ নাগরিক নন, মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালদের একজন। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড ওয়ারেন্ট ছিল। এরকম ব্যক্তি যদি ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা পান্থপথে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারেন তাহলে ইলিয়াস আলী যে এখনও জীবিত এবং আত্মগোপন করে নেই, তা কেউ হলফ করে বলতে পারেন না।
আর সে কারণেই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানের রহস্য। অনেকেই মনে করেন, ইলিয়াস আলীও হয়তো গুম হননি। তিনিও হারিছ চৌধুরীর মতো আটকে পড়ে আছেন।
ইলিয়াস আলীর কথিত গুম হওয়ার আগে তার সঙ্গে সিলেট জেলার রাজনীতি নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতার বিরোধ হয়েছিল। বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস এ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে। তিনি সেখানে ইলিয়াস আলীর নিরুদ্দেশ হওয়ার পেছনে দলের নেতাদের হাত রয়েছে বলে মুখ ফসকে বলে ফেলেন।
দলীয় ফোরামের সেই ঘরোয়া বৈঠকের ভিডিও কোনোভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। যার ফলে খোদ লন্ডন থেকে মির্জা আব্বাসকে শাসানো হয়। পরদিন আব্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমন ঘরোয়া বৈঠকের ভিডিও জনসম্মুখে চলে আসায়। এজন্যও তিনি দলের কোন্দলকে দায়ী করেন।
মির্জা আব্বাসের মুখ ফসকে বেরোনো তথ্যের পরই ইলিয়াস আলী আদৌ গুম হয়েছেন, নাকি তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে আছেন এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির অনেক নেতাই বলেন, ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ তারা পাননি।
আবার এর আগে বিএনপির আরেক নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদও গুম হয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরে ভারতে তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে উদ্ধার করে। সেসময় তিনি হাস্যকর দাবি করেছিলেন কীভাবে তিনি ভারতে এসে পৌঁছেছেন তা জানেন না। বর্তমানে তিনি এখন ভারতেই অবস্থান করছেন।
ঠিক একইভাবে ইলিয়াস আলী কি রাজনৈতিক কৈাশল হিসেবে আত্মগোপনে আছেন কি না বা সরকারকে চাপে ফেলার জন্য এরকম পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে কি না, এ নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।
[হারিছ চৌধুরীর পর এবার ইলিয়াস আলীকে নিয়ে ধূম্রজাল]
সাম্প্রতিক সময়ে, গুম নিয়ে বিএনপি, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একাংশ এবং আন্তর্জাতিক মহল সরকারের ওপর নানারকম চাপ সৃষ্টি করছে। গুম সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও বাংলাদেশের গুম নিয়ে নানামূখী আলোচনা হয়েছে। সেখানে গত এক দশকে ৭৬ জনের একটি তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।
যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার মার্কিন মানবাধিকার সংস্থাগুলো। অথচ মার্কিন বিচার বিভাগের ডাটাবেজ অনুসারে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৬ লক্ষ লোক গুম হয়ে যায়, সাড়ে ৪ হাজার বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায়, যেসব ঘটনার কোনো সুরাহা হয় না। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থা নিয়ে সেই তথাকথিত সংস্থাগুলোর কোনো আওয়াজ নেই যদিও।
এই গুম ইস্যুটি উত্থাপিত হয়েছে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর রহস্যময় নিখোঁজের পর থেকেই। তাহলে কি সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবেই ইলিয়াস আলীর এই নিরুদ্দেশ কাহিনী? ইলিয়াস আলীকে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়ে গেছে এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বিএনপি কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না সে বিষয়েও রহস্য রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ইলিয়াস আলী কি লন্ডনে?
যদি তিনি গুম হতেন বা তাকে যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধরে নিয়ে যেত তাহলে নিশ্চই তার ব্যাপারে কোনো না কোনো তথ্য পাওয়া যেত। আর যদি তিনি স্বেচ্ছায় হারিছ চৌধুরীর মতো আত্মগোপন করে থাকেন বা হারিছ চৌধুরীর মতো পরিচয় বদল করে থাকেন তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া কারও পক্ষেই যে সম্ভব না; যা হারিছ চৌধুরীর ঘটনাই প্রমাণ করে।
তাই হারিছ চৌধুরীর পরিচয় গোপন এবং মাহমুদুর রহমান নামে দাফন বাংলাদেশে বড় বড় গুমের ঘটনাগুলোর একটা নতুন রহস্য উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় যে কেউ নাম পরিবর্তন করে নতুন এনআইডি নিতে পারেন, এমনকি পাসপোর্টও নিতে পারেন।
আর ভুয়া নাম-পরিচয় গ্রহণের পর কেউ যদি গুম বা স্বেচ্ছা-নিখোঁজ হয়ে সেই ঘটনাকে রাজনৈতিক দাবার গুটি বানায়, তাহলে সেটি দেখবে কে?
আরও পড়ুনঃ
- হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু: বাস্তব নাকি তারেকের নতুন কোনো ষড়যন্ত্র?
- বিএনপি নেতারাই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে: মির্জা আব্বাস
- লুনার মুখে ইলিয়াস আলী গুমের চাঞ্চল্যকর তথ্য