
জানুয়ারি মাসের ক্যাবিনেটে এলো শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের প্রস্তাব। নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক অনুদানে বাংলাদেশে ৭ হাজার ৭০০ শিক্ষককে আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এজন্য নেদারল্যান্ডের টিউলিপ কম্পিউটার বাংলাদেশে ১১ হাজার কম্পিউটার এবং প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে। এই প্রকল্পের ব্যয় হিসেবে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে ডাচ সরকার।
বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের শাসনামল। ২০০২ জানুয়ারি মাস। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক চলছে। খালেদা সাধারণত মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুপচাপ বসে থাকেন। আলোচ্য বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়, কিছু আলোচনা হয়। তিনি শুধু শুনে যান। তার নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০০০ সালে, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডাচ সরকার টিউলিপ কম্পিউটারকে কম্পিউটার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের কাজ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এটা মন্ত্রিসভায় এসেছে পুনঃ অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। সরকার পরিবর্তন হলেও এ ধরনের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অটুট থাকে।
[বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপের নামে মিল দেখে চুক্তি বাতিল খালেদার, রাষ্ট্রের গচ্চা ৫৬৭ কোটি!]
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টিউলিপ কম্পিউটার্স’ নাম শোনা মাত্র, খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন। তিনি জানান, এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাসচিব জানান, নেদারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী সদস্য। বছরে দেশটি বাংলাদেশকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে সাফ জানিয়ে দেন, ‘এই চুক্তি বাতিল করতেই হবে।’ এ কথা বলেই তিনি ক্যাবিনেট মিটিং থেকে উঠে গেলেন।
শিক্ষামন্ত্রী এবং সচিব তো থ! দুজনই দ্বারস্থ হলেন মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীর। ড. সিদ্দিকী কথা বললেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। খালেদা জিয়া সে সময় ড. সিদ্দিকীকে যা বললেন তাতে তার ভিরমি খাওয়ার যোগাড়। খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, ‘টিউলিপ’ শেখ রেহানার মেয়ের নাম। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কেন কম্পিউটার কিনতে হবে?’

মুখ্য সচিব বুঝলেন এ নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। তাও বললেন ‘টিউলিপ নেদারল্যান্ডের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। স্থাপিত হয় ১৯৭৯ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেখ রেহানা বা তার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।’
কিন্তু কে শোনে কার কথা। খালেদা জিয়া চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড়। ড. কামাল সিদ্দিকীও নাছোড়বান্দা, তিনি বললেন এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশকে ৪.২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোঁ ধরলেন, টিউলিপ নামে কোন কিছু বাংলাদেশে হবে না।
আরও পড়ুনঃ Tulip Computers freezes Dutch aid to Bangladesh
মূখ্য সচিব তার ব্যর্থতার কথা শিক্ষামন্ত্রীকে জানালেন। শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এক রাশ হতাশা নিয়ে চুক্তি বাতিল করার জন্য নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকে বসলেন। বিস্তারিত শুনে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত তো বিস্ময়ে হতবাক, বাংলাদেশে ১১ হাজার কম্পিউটার আসবে, প্রায় ৮ হাজার শিক্ষক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পাবে, আর এরা শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শেখাবে। এরকম একটি যুগপোযোগী চুক্তি কেন সরকার বাতিল করবে?
যাই হোক শেষ পর্যন্ত সরকার চুক্তি বাতিল করল। টিউলিপ লিমিটেড, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৪.২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চাইল। কিন্তু আবার বেঁকে বসলেন খালেদা জিয়া, তিনি বললেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান খালেদা জিয়াকে নিজে বোঝালেন, বোঝালেন মন্ত্রীসভার অনেকেই। কিন্তু খালেদা জিয়া অনড়।
টিউলিপ লিমিটেড মামলা করল। আদালত বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল। কোর্টের আদেশও মানলেন না খালেদা জিয়া। এরপর আন্তর্জাতিক আদালত নেদারল্যান্ডের সহায়তা বাংলাদেশে বন্ধের আদেশ দিল। বন্ধ হয়ে গেলো বাংলাদেশে ডাচ অনুদান ও সহায়তা। বাংলাদেশের শিশু ও নারীরা ৫৬৭ কোটি টাকার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হলো।
খালেদা জিয়া শুধু চুক্তি বাতিলই করেননি, গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে খবর নিয়েছিলেন যে টিউলিপ এর মালিকানা কার? গোয়েন্দা সংস্থা যখন জানায় এই টিউলিপের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের কোনো সম্পর্ক নেই, ততক্ষণে বাংলাদেশে নেদারল্যান্ড সরকার তার সব সহায়তা বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ
- যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝেও বাড়ছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়
- বিএনপি শাসনামলের মক্ষীরানি বেবি নাজনীন, শামা ও নিশো
- স্বাধীনতার ৫০ বছরে খুনি ও সন্ত্রাসীদের দল বিএনপি’র ১০০ অর্জন
- মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছেন মির্জা ফখরুল!