
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গঠিত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের ঐক্য এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তারা আমাদের দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কয়েক দশক ধরে গৌরবের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। বর্তমানে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২০ সালেও ৬ হাজার ৭৩১ জন শান্তিরক্ষী পাঠানোর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ হিসেবে প্রথম হয় বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, দক্ষতার বিচারেও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সবার ওপরে অবস্থান করছে বর্তমানে।
এছাড়াও, অন্য দেশের শান্তিরক্ষীদের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা মানবিক বলে প্রশংসিত এবং আদৃত হয়েছেন সবগুলো দেশেই। সর্বোচ্চ পয়েন্টপ্রাপ্ত শান্তিরক্ষী ইউনিট বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনের ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার নির্বাচিত হন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের এমন সুনাম থাকায় আঁতে ঘা লাগে দেশবিরোধী চক্রের। ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ১২টি ভুঁইফোড় সংস্থাকে ব্যবহার করে দেশের সুনাম বিনষ্টে শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব নিষিদ্ধে দাবি জানানো হয়েছে। যা নিতান্তই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।
নামসর্বস্ব সংস্থাগুলো হলো— অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল[Amnesty International], এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট [Asian Federation Against Involuntary Disappearances (AFAD)], এশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন [Human Rights Commission of Asia], এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল)[Asian Network for Free Elections (ANFREL)],
ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট [Capital Punishment Justice Project], সিভিসাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন [Civisas: World Alliance for Citizen Participation], হিউম্যান রাইটস ওয়াচ [Human Rights Watch], ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস [International Federation for Human Rights], রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস [Robert F. Kennedy Human Rights], দ্য অ্যাডভোকেট ফর হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড [The Advocate for Human Rights and the World], অর্গানাইজেশন অ্যাগিনেস্ট টর্চার (ওএমসিটি) [Organization Against Torture (OMCT)]।
এই সংস্থাগুলোর মধ্যে অ্যামনেস্টি, আনফ্রেলসহ কয়েকটি সংস্থার কার্যক্রম অত্যন্ত সন্দেহজনক। বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সরকার উৎখাতের মত ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে জড়িত সংস্থাগুলো। গত বছর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক [RESERVE BANK OF INDIA (RBI)]। সেইসাথে তাদের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া আনফ্রেল এর কার্যক্রম অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের অর্থায়ন করে এনইডি- ন্যাশনাল এনডৌমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি [National Endowment for Democracy (NED)]। এটি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র [CIA] একটি ফ্রন্ট। এনইডি বিভিন্ন দেশের সরকার উৎখাতের গ্রাউন্ড তৈরিতে সক্রিয়। বিশ্বের প্রগতিশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে ধ্বংস ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ষাটের দশক থেকে।
দেশগুলো যেন মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য এনইডি নেপথ্যে সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রতিপক্ষ তৈরীতে অর্থায়ন এবং নানান সাহায্য দেয়।
তবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য ভাবমূর্তির কারণে আগডুম-বাগডুম সংস্থাগুলোর এই ষড়যন্ত্র কাজে আসেনি। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বেশি বাংলাদেশি সেনা চেয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুনঃ
- শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বাংলাদেশি সেনা চায় জাতিসংঘ
- জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের আরও সহায়তা চান গুতেরেস
[জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় আরও বাংলাদেশি সেনা চায়, বিভিন্ন সংস্থার তদ্বির-অপপ্রচার ব্যর্থ]
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন গুতেরেস।
জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ আরও বেশি শান্তিরক্ষী সরবরাহ অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন গুতেরেস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সামনের বছরগুলোতে বিশেষ করে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে আরও সাফল্য অর্জন করবে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উচ্চপর্যায়ের পদে এবং বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের বিভিন্ন রাজনৈতিক মিশনে মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) পদে আরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োগের জন্য মহাসচিব গুতেরেজকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
আরও পড়ুনঃ
- যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝেও বাড়ছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়
- বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা,আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ
- জয় বাংলা স্লোগানকে নিয়ে আদের আপত্তি তারা মনে প্রাণে এই দেশকে ধারণ করে না- মুখে বাঙালি অন্তরে অন্যকিছু