
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যে কোনো রাজনৈতিক দলের ভোট চাওয়ার অধিকার আছে। তাতে কোনো বাধা নাই। কেউ চাইলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যে কোনো দলকে ভোট দিতে পারে। অন্যতম প্রধন একটি দল হিসেবে বিএনপিও ভোট চাইতে পারে, এতে কোনো বাধা নাই। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের চেয়ে যোগ্য আর কোনো দল আছে কি না, যারা সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সমর্থ- এর চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে- মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে!
গণতন্ত্রে নির্বাচন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের রায় নিয়ে একটি দল নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার গঠন করে। যদিও বাংলাদেশের ৫০ বছরের অভিযাত্রায় বিভিন্ন সময় গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, তারপরও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশও এই চর্চার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে।
জনগণের প্রতিশ্রুতি পূরণে সমর্থ এবং সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সক্ষম মনে করবে যে দলকে, জনগণ তাদেরকেই নির্বাচিত করবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জনগণের সেই আস্থা অর্জন করতে পারবে? তাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড কি জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে? জনগণ কি আদৌ বিএনপিকে ভোট দেবে?
আরও পড়ুনঃ কারা, কেন, কী কারণে, কোন সুখের স্বপ্নে বিএনপিকে ভোট দেবে
নির্বাচনের রাজনীতি নিয়ে বিবেকবান এবং রাজনীতি সচেতন জনগণ যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন, তার আলোকে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরা যেতে পারে :-
বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়কর রোল মডেল। তাঁর ভিশনারি ও সাহসী নেতৃত্ব আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ, মাদার অব হিউম্যানিটি, ভ্যাক্সিন হিরোসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন উপাধিতে তিনি একনামে পরিচিত। পক্ষান্তরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে পলাতক। ফলে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে এমনিতেও অংশ নিতে পারছে না। এমন একটা অথর্ব এবং মুখ থুবড়ে পড়া দলে পরিণত হয়েছে দলটি।
তাই প্রশ্ন- সাজাপ্রাপ্ত ও নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
দলের সিনিয়র নেতাদেরকে দুদিন পর পর বহিষ্কার করে, কাউকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়, আবার ক’দিন পর বুকে টেনে নেওয়া হয়, সেসব নেতারাও দাঁত বের করে হাসতে হাসতে দুই আঙুলে ভি চিহ্ন দেখিয়ে সুড়সুড় করে দলে ঢুকে পড়েন। চারিত্রিক দৃঢ়তাহীন এবং দলের পলাতক নেতার সামনে হাত কচলানো এই নেতাদেরকে প্রশ্ন করলে জবাব দিতে পারেন না, তাদের দলের নেতার আয়েশী জীবন-যাপনের পেছনে অর্থর উৎস কী? তারা উত্তর দিতে পারেন না, ক্ষমতায় গেলে তারা কাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাবেন, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে, নাকি গ্রেনেড হামলা করে খুনি ও পলাতক নেতাকে! প্রশ্ন করলে তারা হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন, জানেন না তাদেরকে কেন প্রতিটি আসনে মনোনয়ন দিতে হলে বিপুল অঙ্কের চাঁদা লন্ডনে পৌঁছে দিতে হবে! তারা এও জানেন না, ক্ষমতায় যেতে পারলে বিতর্কহীন কোন নেতাদেরকে তারা মন্ত্রীসভায় জায়গা দিতে পারবেন, তেমন নেতা কি আদৌ আছে তাদের?
তাই প্রশ্ন- রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে ভোগা বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশের মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি দেশের মানুষের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ফলে নির্বাচন ব্যবস্থায় তাদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। তাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার চেয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার দিকেই বিএনপি বেশি তৎপর।
দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, মানুষ হত্যাসহ গুরুতর সব অপরাধে আদালতে দোষী সাব্যস্ত বিএনপির প্রধান দুই নেতা- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এর মধ্যে একজন আবার পলাতক। আইনত তারা কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণের উপযুক্ত নন। এমন একটি দল নির্বাচন করবে কীভাবে? তাদের দুজনের কারণে দলের ভাবমূর্তি দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমনিতেই নাজুক। তাই কৌশলগত কারণে তারা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উল্টো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত নানারকম আগডুম-বাগডুম বক্তব্য দেন, জনগণকে ভুলভাল বোঝানোর কাজে ব্যস্ত। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে নয়, বরং নিজ দলের নেতা-কর্মীদেরকে মাঠে ধরে রাখার রাজনৈতিক কৌশল এসব।
আরও পড়ুনঃ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বোচ্চ ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে বিএনপির শাসনামলে
তাই প্রশ্ন- নির্বাচনে অযোগ্য দলীয় প্রধানরা, নির্বাচনে আস্থাহীন বিএনপিকে কেন ভোট দেবে মানুষ?
বিএনপি-জামায়াত আমলের ভঙ্গুর অর্থনীতি গত এক যুগে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮.১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২,৫৫৪ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৪৭.৫ বিলিয়ন ডলার। সোয়া ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু বিএনপি আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নিজেদের পকেট ভরেছিল তারা। কয়েকশ বিলিয়ন ডলার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার করেছিল এই দলটির নেতারা। দীর্ঘ একযুগ ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সেই পাচারকৃত অর্থ ফুরায়নি আজও।
তাই প্রশ্ন- মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ দুর্নীতিগ্রস্ত বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের অমীমাংসিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ৮৫১ একর জায়গা বাংলাদেশের সীমানার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং ছিটমহলের মানুষ মুক্তি পেয়েছে অভিশপ্ত জীবন থেকে। অথচ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা এসব নিয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। কারণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে তারা চেয়েছিল এসব সমস্যা যেন জিইয়ে থাকে।
তাই প্রশ্ন- দেশের স্বার্থের চেয়ে দল আর পকেটের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা আমাদের সীমানায় যুক্ত হয়েছে। অথচ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তাই প্রশ্ন- বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
পদ্মাসেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করা যাচ্ছে, এই বছরেই সেতুটি চালু করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণেই এটি আজ সম্ভব হয়েছে। এই সেতু আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, কারণ এটি নির্মিত হয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি। অথচ পদ্মাসেতু যেন নির্মিত না হতে পারে, সেজন্য বিএনপি শুরু থেকেই নানামুখী অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। তাদের ষড়যন্ত্রে তাল মিলিয়ে বিশ্বব্যাংকও এই প্রকল্প থেকে সর দাঁড়ায়। এমনকি খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিল যে এই সেতু কখনও নির্মিত হবে না। যদিও শেষ পর্যন্ত সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, সকল অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ তারেক-মামুনের খাম্বা বাণিজ্য: বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের কলঙ্কময় ইতিহাস
তাই প্রশ্ন- দেশের স্বার্থবিরোধী বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
প্রায় দেড়শটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার মেগাওয়াটে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রথম ইউনিটের পর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে। অথচ বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার পরিবর্তে তারা ব্যস্ত ছিল বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দুর্নীতিতে। উল্টো বিদ্যুতের দাবি করায় কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা হয় খালেদা জিয়ার নির্দেশে।
তাই প্রশ্ন- দেশকে অন্ধকার যুগে ঠেলে দিতে চাওয়া বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। ১৭ কোটি ৮৬ লাখ মোবাইল ফোন গ্রাহক, ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তি চালু হয়েছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রায় ৬ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, ইউনিয়নসমূহের মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্ট, অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ-ইউটিলিটি বিল প্রদান-টিকিট ক্রয়, ই-টেন্ডার প্রবর্তন, স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা, জাতীয় টেলিকম নীতিমালা, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি গাইডলাইন, সিগনিফিকেন্ট মার্কেট প্লেয়ার গাইডলাইন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইডলাইন, ই-কমার্স গাইড লাইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। শীঘ্রই উৎক্ষেপণ হবে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট। যা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের সামর্থ্যকেই তুলে ধরেছে।
পক্ষান্তরে বিনামূল্যে সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই অজুহাতে বিএনপি সেই সুযোগ গ্রহণ করেনি। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য মোবাইল ফোন কুক্ষিগত করে রেখেছিল, যাতে সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে।
তাই প্রশ্ন- অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার যোগ্যতাহীন বিএনপিকে মানুষে কেন ভোট দেবে?
সবার জন্য শিক্ষা – এখন আর শুধুমাত্র কথার কথা নয়। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই প্রদান, মেয়েদের জন্য বিনা বেতনে পড়ার সুবিধা, উপবৃত্তি প্রদান, নতুন নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করাসহ শিক্ষাক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে শতভাগ শিশু আজ স্কুলে যায়, কমে গেছে ঝরে পড়ার হার, বেড়েছে উচ্চশিক্ষার হার। এ পর্যন্ত প্রায় ২৮০ কোটির বেশি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আর বিএনপি জাতিকে শিক্ষাবিমুখ করতে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে সারাদেশে অসংখ্য স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল। মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে তরুণ ও যুবসমাজকে ধ্বংস করেছিল। দলের প্রধান হিসেবে ৮ম শ্রেণি পাশ একজন অযোগ্য নেত্রীকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে পুরো জাতির সাথে উপহাস করেছিল বিএনপি।
তাই প্রশ্ন- অশিক্ষিত, অযোগ্য ও টিপসই নির্ভর জাতি গড়ার কারিগর বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং ৪৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশে উৎপাদিত হয় এবং ১৫০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের পরিকল্পনাতে চালু হওয়ার কারণে প্রতিহিংসাবশতঃ বিএনপি আমলে এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
তাই প্রশ্ন- মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, শাক-সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম, চা উৎপাদনে চতুর্থ, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং ইলিশ উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অথচ বিএনপি আমলে বাংলাদেশ এ ধরনের অবস্থানে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। উন্নয়নের এই ধারাকে বিঘ্নিত করতে তারা বিভিন্ন রকমের অপকৌশল ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চেয়েছে।
তাই প্রশ্ন- বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বিরোধী অপশক্তি বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ফেরা কার্যক্রম, দুস্থ ভাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানকে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা হয়েছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে মানুষের কল্যাণ না করে অকল্যাণ ডেকে এনেছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কুখ্যাত রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদের ওপর ন্যস্ত করে। বিরোধী দলে থেকেও তারা মানুষের কল্যাণ চায় না। তাই সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তারা অবলীলায় দেশজুড়ে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে।
তাই প্রশ্ন- মানুষের জন্য অকল্যাণকর বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
বর্তমান সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে জঙ্গিবাদ দমনে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০টি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বিপুল সংখ্যক জঙ্গি দমন করা হয়েছে, নস্যাৎ করা হয়েছে অনেক সহিংস কর্মকাণ্ডও। পক্ষান্তরে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থেকে জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে। হাওয়া ভবনের নীলনকশা অনুসারে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫৫০টি বোমা হামলা, বাংলাভাই ও জেএমবির উত্থানসহ সারাদেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল।
তাই প্রশ্ন- জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। তাই দেশের প্রচলিত আইনে বিচারকার্য পরিচালনা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচার হয়েছে। বিচারের রায় ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। অথচ বিএনপি জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। বিচারের পথ রুদ্ধ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, জাতির পিতার খুনিদের তারা পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ দিয়েছিল।
তাই প্রশ্ন- খুনিদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলায় ৯২ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ৬৬৭টি মামলা নিষ্পত্তির জন্য জমা আছে। আসামিদের মধ্যে ৫ জন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ৫৩ জনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ, একজনকে যাবজ্জীবন এবং একজনকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। কুখ্যাত নরঘাতক মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী, মীল কাশেম, আলী আহসান মুজাহিদদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ গ্লানিমুক্ত হয়েছে।
পক্ষান্তরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত এবং পুরস্কৃত করেছে। গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করেছে, নিজামী ও মুজাহিদদের মন্ত্রী বানিয়েছে। এখানেই তারা থেমে ছিল না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা দেশে এবং বিদেশে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে, এমনকি বিচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির লক্ষ্যে লবিস্ট পর্যন্ত নিয়োগ করেছে।
তাই প্রশ্ন- যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?
বিএনপির রাজনীতি এবং তাদের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তাদের ভোট দেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ তারা গণমানুষের রাজনীতি করে না। তাদের রাজনীতি হচ্ছে লুটপাট আর সন্ত্রাসের রাজনীতি। তাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সবকিছু গোল্লায় যাক, নিজেদের আখের যেন ঠিক থাকে। দেশ ও মানুষ তাদের কাছে অত্যন্ত গৌণ।
তাই বিবেকবান মানুষের কাছে প্রশ্ন- “বিএনপিকে ভোট দেবে কে? নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন, কারা, কেন, কী কারণে, কোন সুখের স্বপ্নে বা কোন আশার আলো দেখে বিএনপিকে ভোট দেবে?”