বিএনপি

কানাডার ফেডারেল আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে এক-দু’বার নয়, বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আখ্যায়িত করা হয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। এতে শুধু দল হিসেবে বিএনপি নিজেই কলঙ্কিত হয়নি, ক্ষুণ্ন হয়েছে দেশের ভাবমূর্তিও।

বিএনপি সেই খবর বেমালুম চেপে গেলেও সম্প্রতি কানাডায় অবস্থতি একটি নামসর্বস্ব ভুঁইফোড় মানবাধিকার সংস্থা থেকে খালদা জিয়ার জন্য দেড় কোটি টাকায় কেনা একটি পুরস্কার নিয়ে রীতিমত গলাবাজি শুরু করেছে জ্বালাও-পোড়াও-আগুনসন্ত্রাসী দলটি।খালেদা জিয়া

দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, অতীত কর্মকাণ্ড ঢাকতে ঢাকঢোল পিটিয়ে সাড়ে তিন বছর পরে এসে বিএনপি পুরস্কারপ্রাপ্তির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

আরো পড়ুন : সাড়ে তিন বছর আগের কেনা সনদ দেখিয়েছে বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী

তারা ভেবেছে, মানুষ সব ভুলে গেছে। কিন্তু বিষয়টি কি এতই হালকা যে, মানুষ তাদের স্বরূপ ভুলে যাবে? দেশের মানুষ ভোলেনি তাদের নারকীয় সেই সন্ত্রাসীকাণ্ডের কথা। যা ভেবে শিউরে ওঠে আজও।

বিএনপি তাদের শাসনামলে ও ক্ষমতায় আসার আগে নির্বিচারে মানুষ হত্যাসহ যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছে তা দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বও অবলোকন করেছে। যারই প্রেক্ষিতে কানাডায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের কেউ আশ্রয় চাইতে গেলেই তাদেরকে দেশটির আদালত স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা। বলে, তারা একটি সন্ত্রাসী দল।

কিন্তু বারবারই বিএনপি কানাডার আদালতের রায়ের বিষয়টি গোপন রেখেছে। কখনই মুখ ফুটে এ বিষয়ে বলেনি, এমনকি প্রতিবাদও করেনি। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই কাডার আদালতের রায়ের বিষয়টি ফলাওভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

এখানে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ডের কথা কানাডার ফেডারেল আদালত একটি মামলার রায়ে উল্লেখ করা হয়। অটোয়ায় কানাডার ফেডারেল আদালতে (সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন, ২০১৭ এফসি ৯৪)- তে বলা হয়েছে, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

আদালত মনে করে, বিএনপি হচ্ছে একটি দল যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়। সেখানে আরো বলা হয়েছে- হাতবোমা, পিস্তল ও অস্ত্র ব্যবহার করে নেতৃস্থানীয় এবং জনগণের ওপর হামলা চালায় বিএনপি। এমনকি অগ্নিসংযোগের মতোও ঘটনা ঘটিয়েছে দলটি।

আদালত আরও বলেন, বিএনপি কর্তৃক হরতালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে যার ফলে সেবাভিত্তিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি, সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি এবং জনগণের মৃত্যু এবং গুরুতর শারীরিক ক্ষতি হয়েছে। সরকারকে অর্থনৈতিক অস্থিরতায় ফেলার লক্ষ্যে হরতাল করতে সহিংসতার ঘটনা ঘটায় বিএনপি, যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

[সন্ত্রাসী সংগঠন-এর রায় ধামাচাপা দিতে বিএনপির পদক-নাটক]

রায়ে আরও বলা হয়, এটি প্রমাণিত যে, বিএনপি একটি সমসময়ই একটি সন্ত্রাসী দল। এ বিষয়ে বিবিসি, এএফপি, কমনওয়েলথ স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন, ইকোনমিস্ট সাউথ এশিয়ান টেরোরিজম পোর্টাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির হরতাল, অগ্নিসংযোগে মানুষের মৃত্যু ঘটানো, গ্রামগুলোতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভোটকেন্দ্রে হামলা, পথ শিশুদের দিয়ে বিস্ফোরক তৈরি এবং পেট্রোল বোমা ছোঁড়ারও কাজ করায় দলটি।

কানাডার সেই আদালতের বিচারক মি. হেনরি এস. ব্রাউন বলেন, বিএনপির ডাকা হরতালগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রচন্ড খারাপ প্রভাব ফেলেছে। এর ফলশ্রুতিতে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মৃত্যু এবং এর মতো গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। বিএনপির দাবি দাওয়া সরকারকে মানতে বাধ্য করতে লাগাতার হরতালের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রমাণ করে, এটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বাইরে চলে গিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। কয়েক মাস পর কানাডার আরেকটি ফেডারেল আদালত বিএনপিকে পুনরায় ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী হরতাল ডেকে সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সরাসরি জড়িত বিএনপির পলাতক নেতা মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী’র কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে তার বিচারিক পর্যালোচনা করার কথা বলেন ফেডারেল কোর্টের বিচারক মি. ফোথারগিল।

আদালত পূর্ববর্তী অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিচারপতি বলেন, আমি মনে করি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে আবেদনকারী কানাডায় প্রবেশাধিকার পাওয়ার অনুপযুক্ত। কেননা এই দলটি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলো, আছে বা ভবিষ্যতে লিপ্ত হবে- এমনটি ভাবার যৌক্তিক কারণ আছে।

বিচারপতি আরও বলেন, বিএনপির হরতাল এবং এর প্রভাব বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায়, অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে কোন ভুল ছিলোনা এবং ওই কমিটির সিদ্ধান্তও যথার্থ। বিএনপির ধারাবাহিক হরতাল এবং ওই সময় ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনাগুলোর ফলে কানাডার অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাকে এই সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করেছে যে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

আরো পড়ুন : নিজেদের সন্ত্রাসী তকমা ঢাকতেই ‘পেইড পুরস্কার’ নিয়ে প্রচারণায় বিএনপি

কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই এই উপসংহারে এসেছেন আদালত।

বিচারপতি মি. ফোথারগিল সেই মামলায় শুধু জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন খারিজই করেননি বরং রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য এসএ পিটিশনের আবেদনও খারিজ করে দেন।

সম্প্রতি, ২০১৮ সালে দেশটির ভুঁইফোড় একটি মানবাধিকার সংস্থা থেকে কেনা সম্মাননা নিয়ে তারা মেতেছে প্রচারণায়। বলছে, এটা বিশাল এক অর্জন। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো থলের বিড়াল। জানা গেল, সংস্থাটির মালিকপক্ষের পকেট ভারি করিয়ে বিএনপি দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এই সম্মাননা কিনেছে।

বলে রাখা ভালো, সেই খবর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়। যেখানে বলা হয়, মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা কেনা হয়েছে। সে সময় ওই প্রতিবেদনে বিএনপির পুরস্কার কেনার তথ্য-প্রমাণাদিও প্রকাশ করা হয়। তারপর থেকে মাতামাতির বিপরীতে বিষয়টি চলে যায় একেবারে হিমাগারে।

[সন্ত্রাসী সংগঠন-এর রায় ধামাচাপা দিতে বিএনপির পদক-নাটক]

গত ৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কারপ্রাপ্তির এই বিষয়টি পুনরায় সামনে নিয়ে আসেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ভেবেছিলেন ২০১৮ সালে কেন পুরস্কারের আর্থিক লেনদেনের কথা লোকজন ভুলে গেছে। এখন হয়ত বিএনপিকে মাথায় তুলে নাচবে জনগণ।

কিন্তু তাদের এই চক্রান্ত হোঁচট খেয়েছে। আবারও সামনে চলে এসেছে সেই দেড় কোটি টাকায় পুরস্কার ক্রয়ের বিষয়গুলো। উল্টো নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়োধ্বনি শুনতে হচ্ছে এখন বিএনপিকে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং সদ্য সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা বিএনপি নেত্রীকে জনগণের সামনে ট্রলের শিকার বানানোর কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছেন সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।

এমনিতেই দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের মামলার কারণে বিএনপি নেত্রী ইমেজ সংকটে ভুগছেন, তারমধ্যে পুরস্কার ক্রয় করে এনে রীতিমত হাসির পাত্রে পরিণত করেছেন, যা মেনে নিতে পারছেন না তারা।

আরো পড়ুন :  ৩ বছর আগে কানাডিয়ান ১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলারের বিনিময়ে খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির পুরস্কার কেনার খবর ফাঁস