দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই- দাবি করা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হতাশ করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন খালেদা জিয়া। সরকার বিএনপির প্রতি অন্যায় অবিচার করছে- দাবি করলেও খালেদা জিয়া কারাদণ্ডের পরিবর্তে ‘আরামদণ্ড’ উপভোগ করেছেন সরকারের বদান্যতায়।

জেলের বাইরে থাকা, সাজা স্থগিত, উন্নত চিকিৎসা, পরিবারের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, টিভি, উন্নত খাবারসহ সব সুবিধা পেয়েছেন। এমনকি চিকিৎসা নিতে পেরেছেন পাঁচ তারকা মানের উন্নত হাসপাতালে। যেখানে বিলাসবহুল চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন খালেদা জিয়া।

যেই হাসপাতালে দেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসার কথা ভাবার সাহস পান না, সেই এভারকেয়ারে উন্নতমানের সকল সুবিধা পেয়ে সুস্থ হয়ে খালেদা জিয়া বাড়ি ফিরেছেন।

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, খালেদা জিয়া ৩ দফায় যে ৬ মাস রাজধানীর ৫ তারকা মানের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, এই দীর্ঘ চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা, কে বহন করছে এই ব্যয়? সরকার নাকি খালেদা জিয়ার পরিবার?

অনুসন্ধানে এবং হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, তিন দফার চিকিৎসায় প্রথম দফায় ৮৫ লাখ, দ্বিতীয় দফায় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়। আর সবশেষ দফায় ২ কোটি টাকার ওপরে বিল হয়েছে। সব মিলিয়ে চিকিৎসা বাবদ এই তিন দফায় খরচ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন লন্ডনে পলাতক পুত্র তারেক রহমান। তারেক রহমানের নির্দেশে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব আব্দুস সাত্তার বিষয়টি সমন্বয় করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি এবং পদ নিয়ে ব্যাপক নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের দলে পদ দিয়ে, কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার বিনিময়ে তারেক রহমানের নামে চাঁদা দিতে হয়েছে ঢের। সেই টাকার একটা বড় অংশ পাঠানো হয়েছে লন্ডনে। আরেকটি অংশ জমেছে বিশেষ ফান্ডে।

আরও পড়ুনঃ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় কত

অসহায়, দুঃস্থ নেতা-কর্মীদের কল্যাণের নামে গঠিত ফান্ডে নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে চাপ দিয়ে অর্থ নেওয়া হয়। কর্মীদের জন্য গঠিত ফান্ডের অর্থ ব্যয় হলো খালেদা জিয়ার চিকিৎসায়। লন্ডন থেকে আসেনি ১ টাকাও! ক্যাসিনোয় জুয়া খেলে অর্থ ওড়ানো, দামি গাড়ি হাঁকানো, বিলাসী জীবন-যাপন করা তারেক এভাবে কর্মীদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙলেন।

কিন্তু নেতা-কর্মীরা কোনো প্রতিবাদ করেননি। কারণ বিএনপি করতে হলে, দলে পদ-পদবী টিকিয়ে রাখতে হলে শুনতে হবে তারেকের কথা, তাই তারা বাধ্য।

উল্লেখ্য, ২৫ মাস সাজা খেটে দুই শর্তে ২৫ মার্চ ২০২০ কারামুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসন। কারাগারে থাকাকালে তিনি দুবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। খালেদা

সবশেষ মহামারি করোনার মধ্যে সাজা স্থগিত হলে তিনি সরাসরি হাসপাতাল থেকেই ফিরোজায় ওঠেন। বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়া দুই দফায় করোনায় আক্রান্ত হন। সে সঙ্গে পুরনো রোগ জেঁকে বসে। ৮১ দিনের টানা চিকিৎসা শেষে গত মঙ্গলবার রাতে ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাসায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ড। যার পেছনে বোর্ড বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে করোনা সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে পড়া। তাই হাসপাতাল থেকে বাসাকেই বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য নিরাপদ মনে করেছেন চিকিৎসকরা।

এখন পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী এভারকেয়ারে গেছেন ৪ বার। তিনবার তিনি সেখানে ভর্তি হন। প্রথমবার ২৭ এপ্রিল থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ৫৩ দিন, দ্বিতীয় দফায় ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬ দিন এবং তৃতীয় দফায় ১৩ নভেম্বর থেকে ৮১ দিন তিনি হাসপাতালে থাকেন।

এভারকেয়ারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় প্রথম দফায় ৮৫ লাখ, দ্বিতীয় দফায় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বিল আসে হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ। তবে তিনি শেষ দফার বিলটির সঠিক ফিগার বলতে পারেননি। তবে ২ কোটির ওপরে আসার কথা- এমন ধারণা দিলেন তিনি।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, শেষবার সবচেয়ে বেশি সময় ম্যাডাম চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়ে অনেক ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে ছিলেন তিনি। সার্জিক্যাল আইসিইউ ও সিসিইউতে ছিলেন। দেশে না থাকায় কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম আমেরিকা থেকে অর্ডার করে আনা হয়েছিল।