

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্ল্যাকলিস্টেড কোম্পানিই বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠাবে। এর ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং চোখ রাঙানির বিপরীতে পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ- কূটনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ বা BS-2 নামে এ স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রসকসমসের সাবসিডিয়ারি গ্লাভকসমসের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়েছে গতকাল।
Table of Contents
আরও পড়ুনঃ
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্রেটওয়াল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন এবং ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস ও এয়ারবাস প্রতিযোগিতায় হেরে BS-2 কক্ষপথে পাঠানোর প্রকল্পটি পায় রাশিয়া।
তবে রাশিয়ার এই প্রতিষ্ঠানের ওপর দুই দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ‘মিসাইল স্যাংশন ল’-এর আওতায় মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম নীতিমালার সঙ্গে কার্যক্রম অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় ১৯৯২ সালে প্রথম নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালে আবারো নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। পরবর্তীতে ২০১০ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়।
সেই সময় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় কোনো দেশ গ্লাভকসমসের সঙ্গে চুক্তি করলে সে দেশের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তাই এই কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুপ মনোভাবের কারণে সর্বশেষ ভারত রাশিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প বাতিল করে।
আরও পড়ুনঃ ২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি হবে অপ্টিক্যাল ভিএইচআর-সার (সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার)। যার মূল কাজ এর আওতায় থাকা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি ও সমুদ্র এলাকার হাই রেজ্যুলিউশনের ছবি তোলা।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও এই স্যাটেলাইটের আওতায় যদি আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের ছবি তুলতে পারবে স্যাটেলাইটটি। তবে আশঙ্কা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোম্পানিটির ওপর ভবিষ্যতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আবার দেয় তাহলে সেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে BS-2 এবং সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশী কর্মকর্তারাও।
ফলে নিষেধাজ্ঞার কারণে ছবি তোলার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়তে পারে BS-2। আবার যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারিং অ্যামেরিকাস অ্যাডভার্সারিস থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট (CATSA) সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণেও রাশিয়ার তৈরি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইউরোপ বা আমেরিকার দেশগুলো নিজেদের সীমানার ভেতরে ছবি তোলার অনুমতি নাও দিতে পারে।
[মার্কিন ব্ল্যাকলিস্টেড সংস্থাকে BS-2 স্যাটেলাইট প্রজেক্ট দিয়ে পাল্টা কূটনৈতিক চাল বাংলাদেশের]
সেক্ষেত্রে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ তৈরি করা হচ্ছে, তার বড় অংশই ব্যাহত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দফায় দফায় র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধের পরও এ বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরে আসেনি।
এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিধির বিস্তার ঘটাতে চায় বাংলাদেশ। আর সেজন্যই রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক আরো জোরদারের কথা ভাবা হচ্ছে।
বর্তমানে BS-1 থেকে বছরে আয় হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। দেশের টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচারের জন্য এ অর্থ দিচ্ছে। আগে এর চেয়ে বেশী অর্থ বিদেশী কোম্পানিদের দিয়ে দিত হত। BS-1 এর ফলে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।
এছাড়া BS-1 স্যাটেলাইটটির ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া হচ্ছে। সমুদ্রে জলযানগুলোর আন্তঃ যোগাযোগের ক্ষেত্রে আগে জাপানি স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে হতো। বর্তমানে BS-1 দিয়ে সেই সেবা দেওয়া হচ্ছে, ফলে সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।
আরও পড়ুনঃ
- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে রুশ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি
- বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে না আমেরিকা; লবিস্টের পিছে বিএনপির ৩১ কোটি টাকা নষ্ট
- দেশবিরোধী প্রচারণার জন্য আমেরিকার ৩টি ফার্মকে ৩১ কোটি টাকা দেয় বিএনপি
- পশ্চিমাদের উপেক্ষা করে পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের সাফল্যকে আড়াল করতেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা