
বিএনপি নেতারা যখন বাংলাদেশকে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে, ঠিক তখনই আমেরিকার পক্ষ থেকে তাদের এই দাবিকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) মার্কিন কংগ্রেসম্যান এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক হাউস কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগরি ডাব্লিউ মিকস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।’
নিউইয়র্ক থেকে তিনি আরো জানান, ‘কিছু কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে জোরালোভাবে লবিং আসছে আমাদের কাছে। তবে তাদের কথা অনুযায়ী আমরা এটা করব না।’ ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়া এবং সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করার জন্য আমেরিকাকে একাধিকবার চিঠি দেয় বিএনপি এবং রেজা কিবরিয়াদের একটি চক্র। সম্প্রতি সেসব চিঠির কপি ফাঁস হয়ে গেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য আমেরিকার ৩টি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছিল দলটি। উইকিলিকসের তথ্য ফাঁসের সঙ্গে এসব নথি প্রকাশ হয়ে যায়। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তবে পরিস্থিতি পাশ কাটানোর জন্য তিনি দাবি করেন যে, দেশের ভালোর জন্য তারা লবিং করছিল।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং করতে সরকার লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে কোনো রাজনৈতিক দল বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে না। এটা অর্থ পাচারের অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। আর দেশবিরোধী তৎপরতা থাকলে তা দেশদ্রোহিতা বলে গণ্য হয় এবং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।
সম্প্রতি দেশের একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের ওপর স্যাংশন দেয় আমেরিকা। এরপর থেকে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশকে আরো স্যাংশন দেওয়া হবে বলে প্রকাশ্যে অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন। এমনকি টক-শো বক্তা রেজা কিবরিয়া বিভিন্ন শো-তে আমেরিকার জুজু দেখানো শুরু করেন। তারা দাবি করেন, বাংলাদেশকে একের পর এক স্যাংশন দেবে আমেরিকা।
এদিকে ফাঁস হওয়া নথি থেকে দেখা যায়- একিন গাম্প, রাস্কি পার্টনার্স এবং ব্লু স্টার নামের তিনটি আমেরিকান লবিং ফার্মকে বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচারণার জন্য মোট ৩১ কোটি ২৮ লাখ টাকা শোধ করেছে বিএনপি।
এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর, বিএনপির গত দশ বছরের আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকার কোনো সূত্র পাওয়া যায় নি। এমনকি এই অর্থ কীভাবে বিদেশে গেলো, কোন ফান্ড থেকে গেলো, তারও কোনো হদিস নেই।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া বিএনপির আয়-ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায়, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিএনপির মোট আয় ৩৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯ টাকা। এবং একই সময় দলটির মোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৮ কোটি ৪২ লাখ ২ হাজার ৬৮২ টাকা। আয়ের খাত হিসেবে দেখানো হয়েছে অনুদান, নির্বাচনি ফরম বিক্রি, প্রাথমিক সদস্য ফি। এছাড়াও ব্যয়ের খাত হিসেবে দেখানো হয়েছে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, নির্বাচনি ব্যয়, জাতীয় সম্মেলন, সম্পদ ক্রয় ইত্যাদি। গত ১০ বছরের বিএনপির আয়-ব্যয়ের হিসেবে কোথাও লবিস্ট নিয়োগের পেছনে অর্থ ব্যয়ের কথা উল্লেখ নেই।