
টকশো-বক্তা হিসেবে ড. রেজা কিবরিয়াকে দেশবাসী নতুন চিনলেও, তার দেশবিরোধী কার্যক্রম অনেক পুরনো। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছদ্মবেশে সেনাশাসন জারির পেছনেও হাত ছিল এই ব্যক্তির। বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারির জন্য ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে আমেরিকাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
উইকিলিকসের কারণে ফাঁস হয়ে পড়া ২০০৬ সালের ৮ আগস্টের একটি মার্কিন নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মূলত, দীর্ঘদিন থেকেই মার্কিন এজেন্ট হিসেবে এদেশে তাদের এজেন্টা বাস্তবায়ন করে আসছেন এই অর্থনীতিবিদ।
রেজা কিবরিয়ার কালো অধ্যায় সম্পর্কে ফাঁস হওয়া নথি থেকে আরো জানা যায়, ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট রেজা কিবরিয়া সঙ্গে বৈঠক করেন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। এসময় বাংলাদেশ সরকারের দখল নিতে সেনাবাহিনীকে রাজি করানোর জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি। সেসময় আমেরিকার কর্মকর্তাদের রেজা কিবরিয়া জানান, একটি সেনাঅভ্যুত্থান প্রয়োজন দেশে। যুক্তরাষ্ট্র যেনো এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। তাহলে দেশ থেকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে নস্যাৎ করা সম্ভব হবে।
এমনকি ওই বৈঠকে বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজে রাজনীতিতে আসার আগ্রহও প্রকাশ করেন রেজা কিবরিয়া। তিনি মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে একটি তালিকা তুলে দিয়ে বলেন- যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি করাতে সমর্থ হয়, তাহলে ড. কামাল হোসেনসহ তারা সবাই একসঙ্গে একটি রাজনৈতিক বলয় গড়ে তুলে সেই শাসনকে বৈধতা দেবেন এবং পরবর্তীতে নিজেরা রাজনৈতিক দল গঠন করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন।
পরবর্তীতে রেজা কিবরিয়ার এই প্রস্তাবের কথা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে ইমেইল করে পাঠান তাদের প্রতিনিধিরা। কিন্তু উইকিলিকসের তথ্য ফাঁসের কারণে এসব ইমেইল প্রকাশ্যে চলে আসে। ফলে রেজা কিবরিয়ার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। একারণে পরে আওয়ামী লীগে ঘেঁষার চেষ্টা করলেও, খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ড. কামালের সঙ্গে জোট বেঁধে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন, কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতার কারণে ভোটে পরাজিত হন।
শক্তিশালী মার্কিন বলয় গড়ার জন্য রেজা কিবরিয়াকে সরাসরি দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে বসান ড. কামাল হোসেন। তবে পরবর্তীতে কৌশলগত কারণে ড. কামালের দল থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। তরুণদের নিয়ে আরেকটি পৃথক বলয় গড়ার মিশনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আস্থাভাজন ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গে একটি নতুন দল গড়ে তোলেন রেজা কিবরিয়া।
এর আগে, ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে রেজা কিবরিয়ার পিতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে। পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার বারবার সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারের চেষ্টা করলেও, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখার জন্য সেই বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করেন রেজা কিবরিয়া। পুরস্কার হিসেবে ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তাকে নির্বাচনের সুযোগ দেয় তাকে বিএনপি। এমনকি নিজের পিতার হত্যাকারীদের দল বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমমনা দল এবি পার্টির কর্মসূচিতেও দেখা যায় এই মার্কিন এজেন্ট রেজা কিবরিয়াকে।