
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিত্যনতুন উপায়ে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে দেশ বিরোধী অপশক্তি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কয়েক দশক ধরে গৌরবের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। বর্তমানে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ২০২০ সালেও ৬ হাজার ৭৩১ জন শান্তিরক্ষী পাঠানোর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ হিসেবে প্রথম হয় বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, দক্ষতার বিচারেও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সবার ওপরে অবস্থান করছে বর্তমানে।
এছাড়াও, অন্য দেশের শান্তিরক্ষীদের ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা মানবিক বলে প্রশংসিত এবং আদৃত হয়েছেন সবগুলো দেশেই। সর্বোচ্চ পয়েন্ট প্রাপ্ত শান্তিরক্ষী বাহিনীর নামও বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনের ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার নির্বাচিত হন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের এমন সুনাম থাকায় আঁতে ঘা লাগে দেশবিরোধী চক্রের। ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ১২টি ভুঁইফোড় সংস্থাকে ব্যবহার করে দেশের সুনাম বিনষ্টে শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব নিষিদ্ধে দাবি জানানো হয়েছে। যা নিতান্তই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, উন্নয়নমুখী এই সরকারের প্রতি দেশের মানুষের প্রবল আস্থা। এ কারণে বিরোধী দল কোনো নির্বাচনেই সুবিধা করতে পারছে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে দেশের সুনাম বিনষ্টে বেনামি ১২টি সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ অর্থায়নের মাধ্যমে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
আরও পড়ুনঃ যেভাবে র্যাব গঠিত হয়
যদিও তাদের মিথ্যাচার ইতোমধ্যে প্রমাণিত। ফলে এসব চিঠি জাতিসংঘের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মূলত দেশের শান্তি এবং ভাবমূর্তি বিনষ্টে ১২টি সংস্থাসহ যুক্তরাষ্ট্রেও একাধিক লবিস্ট নিয়োগ করে দেশবিরোধী অপশক্তি। তাদের পেছনে প্রতিবছর ২ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়, এমন প্রমাণও জনসম্মুখে এসেছে। এর আগে এসব লবিস্টের ইন্ধনে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কয়েকদিন পরই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে উক্ত বিষয়ে পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। মাত্র ৬ দিনের মাথায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বর্তমানে সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১২টি সংস্থাকে ব্যবহার করে শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব নিষিদ্ধে চিঠি পাঠায় কুচক্রী মহল। আর এ ষড়যন্ত্রও সফল হবে না বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুনঃ বেনজীর, র্যাবের ডিজিসহ ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
নামসর্বস্ব সংস্থাগুলো হলো— অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগিনেস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, এশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল),
ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, সিভিসাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টানন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেট ফর হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড, অর্গানাইজেশন অ্যাগিনেস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।
এই সংস্থাগুলোর মধ্যে অ্যামনেস্টি, আনফ্রেলসহ কয়েকটি সংস্থার কার্যক্রম অত্যন্ত সন্দেহজনক। বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সরকার উৎখাতের মত ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে জড়িত সংস্থাগুলো। গত বছর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসাথে তাদের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত সিদ্ধান্ত: বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন
এছাড়া আনফ্রেল এর কার্যক্রম অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের অর্থায়ন করে এনইডি- ন্যাশনাল এনডৌমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি। এটি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র একটি ফ্রন্ট। এনইডি বিভিন্ন দেশের সরকার উৎখাতের গ্রাউন্ড তৈরিতে সক্রিয়। বিশ্বের প্রগতিশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে ধ্বংস ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ষাটের দশক থেকে।
দেশগুলো যেন মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য এনইডি নেপথ্যে সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রতিপক্ষ তৈরীতে অর্থায়ন এবং নানান সাহায্য দেয়। এনইডি’র হয়ে কাজ করে কিছু প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র। যেখানে সরকার বিরোধী অপপ্রচার, গুজব, প্রোপাগান্ডা চালানো হয় অবিরত। জনমতকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে উসকে দেয়া হয়। ক্যু ঘটালে জনগণ যেন তা মেনে নিতে পারে- এমন গ্রাউন্ড তৈরি করে।
এনইডি’র অর্থায়নে বাংলাদেশে চলছে বেশ কিছু পত্রিকা। সাথে আছে বিদেশে পলাতক দেশবিরোধী চক্রের মালিকানার কয়েকটি পোর্টাল। সংবাদ প্রকাশের নামে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রক্তস্নাত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে চক্রটি।
[র্যাব নিষিদ্ধের দাবী জানানো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি অর্থায়নে পরিচালিত – জানুন তাদের বাংলাদেশ বিরোধীতার আদ্যপ্রান্ত]
মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় কোনো দেশের কোনো গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা কিংবা মার্কিব স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে কোনো দেশের সরকারকে কৌশলে সরানোর পটভূমি তৈরি করে এনইডি। এজন্য তারা ওসব দেশের স্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নেগোশিয়েট করে বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণ ক্ষেপিয়ে তোলে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ওই দেশ ও সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে চাপ সৃষ্টি করে। সাথে কাজ করে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মও।
নিকারাগুয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, ইরান, ইউক্রেন, চিলিসহ অন্তত এক ডজন দেশের সরকার হঠানোর জন্য বিভিন্ন সময় সেসব দেশে উগ্রবাদীদের দিয়ে সহিংসতা ছড়াতে মোটা অর্থ
বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে ৭৫ এর পট পরিবর্তনের বেনিফিসিয়ারি ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা।
তাই ভুঁইফোড় এসব সংগঠনের এমন চিঠি চালাচালি অবশ্যই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এই পক্ষের সাথে স্বার্থ ও এজেন্ডা মিলে গেছে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত। তাই তারাও অর্থায়ন করেছে বিভিন্ন বিদেশি লবিস্ট ফার্মগুলোতে। ফলে কয়েকটি পক্ষের মিলিত ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ আজ শত্রুদের টার্গেট।
যদিও কূটনৈতিক বিশ্লষকরা বলছেন জাতিসংঘে চিঠি পাঠানো- এই বিষয়টিকে আসলে হাইপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। জাতিসংঘে চিঠি পাঠানো বিশেষ কিছু নয় মোটেই।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকরোইক্স জানান, যে কেউ চাইলেই জাতিসংঘে চিঠি পাঠাতে পারে। তার মানে এই নয় যে, সেই চিঠি আমলে নিয়ে জাতিসংঘ কাজ শুরু করে দেবে।
নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নে পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজারো সংস্থা, যারা ভাড়া খাটে। তারা চাইলে চিঠি দিতে পারে যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে। জাতিসংঘকে পাঠানো চিঠি নিরীক্ষা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব জাতিসংঘেরই।
তবে বেনামি কোনো সংস্থা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রোণদিত ষড়যন্ত্র করলে, সেই সংস্থার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুনঃ