হারিছ চৌধুরী

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি লন্ডন বা ঢাকায়। ধারণা করা হচ্ছে, পরিচয় গোপন করার জন্যই হারিছ চৌধুরী মৃত্যুর নাটকটি সাজানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

উল্লেখ্য, ৪ মাস আগে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে তার চাচাতো ভাই একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলা হয় যে, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী এই তথ্য দেন।

তার দাবি, গত আগস্ট মাসে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। ব্রিটেনে করোনা বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যগুলো পাওয়া যায় ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস)। এনএইচএস-এর তথ্য খতিয়ে দেখা যায়, সেখানে গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর এমনকি অক্টোবরেও হারিছ চৌধুরী নামে কেউ মারা যাননি।

তাহলে হারিছ চৌধুরী মারা গেলেন কীভাবে? বিএনপির একটি অংশ দাবি করছে, হারিছ চৌধুরী দেশে এসেছিলেন এবং দেশেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সূত্র নিশ্চিত করেছে, হারিছ চৌধুরী একজন মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। কাজেই তার বাংলাদেশে আসার প্রশ্নই আসে না। তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ওয়ান-ইলেভেনের সময় হারিছ চৌধুরী পালিয়ে ভারতের আসামে গিয়েছিলেন। সেখানে তার নানার বাড়ি রয়েছে। সেখান থেকে হারিছ চৌধুরী লন্ডনে যান। কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর হারিছ চৌধুরী তার নাম পরিবর্তন করেন। সেখান থেকে তিনি অন্য নামে একটি পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তবে তার পাসপোর্টে ব্যবহৃত নামটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

হারিছ চৌধুরীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, হারিছ তার নাম বদল করেছেন। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি লন্ডনে প্রবেশ করেন। ওই ভারতীয় পাসপোর্ট থাকায় তিনি লন্ডন, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন।

সূত্রটির দাবি, ওই পাসপোর্ট গ্রহণের পর হারিছ চৌধুরী অবাধে বেশ কয়েক বছর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ যখন দণ্ডিত অপরাধীদের তালিকা ইন্টারপোলকে প্রদান করা হয় এবং যখন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে, তখন জানা যায় হারিছ চৌধুরী লন্ডনে অবস্থান করছেন।

গত বছরের শুরু থেকেই হারিছ চৌধুরীকে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে। তখনই হারিছ চৌধুরীর ব্যাপারে ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা সজাগ হয়ে ওঠে। কারণ, হারিছ চৌধুরী গণহত্যা সংঘটিত (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা) করাসহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে পলাতক জীবনযাপন করছিলেন।হারিছ

যখন হারিছ চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে ইন্টারপোল এবং বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিশ্চিত হয়, তখনই পররাষ্ট্র দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হারিছ চৌধুরীর নাম ইন্টারপোলের লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করে। এ আবেদনের খবর কানে যেতেই হারিছ চৌধুরী আবার গা ঢাকা দেন।

গত বছর জুলাই মাসে হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এ খবর সঠিক। ওই সময় যারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজনের নাম শুভাশীস চৌধুরী, যার চেহারার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর চেহারা হুবহু মিল পাওয়া যায়। তিনি রয়েল হসপিটাল লন্ডনে করোনার চিকিৎসা নেন।

ওই হাসপাতালের তথ্য বিবরণী পর্যালোচনা করে যা জানা গেছে, তাতে ওই শুভাশীস চৌধুরীর সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর অনেক মিল পাওয়া যায়। প্রথমত, শুভাশীস চৌধুরী বাঙালি। দ্বিতীয়ত, শুভাশীস চৌধুরীকে ক্যান্সারে আক্রান্ত দেখানো হয়েছে। হারিছ চৌধুরীও ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। তৃতীয়ত, শুভাশীস ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

লন্ডন রয়েল হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, এই শুভাশীসই আসলে হারিছ চৌধুরী। তিনি হয়ত ভারতীয় পরিচয় নিয়ে লন্ডনে এসেছিলেন। কিন্তু তারপর তাকে যখন স্থানীয় বাঙালিরা চিনে ফেলে এবং তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়, তখন তিনি আবার গা ঢাকা দেন।

এরপর গোয়েন্দা সংস্থা যখন খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে, তখনই তার মৃত্যুর নাটক সাজানো হয়েছে। এখন হারিছ চৌধুরীকে মৃত দেখিয়ে জীবিত হারিছ চৌধুরীই দালিলিকভাবে শুভাশীস চৌধুরী বনে যান চিরতরে, তবে হারিছ চৌধুরীর নামে থাকা সমস্ত মামলা ক্লোজ হয়ে যাবে। আর শুভাশীসরূপি হারিছ সব ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

হলিউডি গোয়েন্দা সিনেমার মতই শোনাচ্ছে বিষয়টি। শুভাশীস চৌধুরী- যিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন তিনি যদি শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয় পান বা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান, আর তারপর তিনি যে পাসপোর্টটি পাবেন সেটি শুভাশীস নামেই হবে। শুভাশীসের আড়ালে হারিছ চৌধুরী থাকলেও তা প্রমাণের কোনো উপায় থাকবে না।

কাগজে-কলমে হারিছ চৌধুরীর যদি মৃত হন এবং শুভাশীস চৌধুরী যদি ব্রিটিশ পাসপোর্ট পান, তাহলে হারিছ চৌধুরী পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাই পরিচয় গোপন করার জন্যই হারিছ চৌধুরীর এই মৃত্যুর নাটকটি সাজানো হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে।

লন্ডন প্রবাসীরা বলছেন, হারিছ চৌধুরীর মত একজন বহুল পরিচিত বিএনপির নেতা লন্ডনে মারা যাবেন, তার খবর কেউ জানবে না, এটি হতেই পারে না। এমনকি হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার মুনা বা তার ছেলের মধ্যে কোন শোক দেখা যাচ্ছে না। তারা সবাই লন্ডনে বসবাস করে।

তাই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি যে স্রেফ নাটক, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়।