
গরম কমলে, বর্ষা গেলে কিংবা ঈদ ও শীতের পর কঠোর অথবা তীব্র আন্দোলন, অনশন, সমাবেশ, বিক্ষোভসহ নানা চেহারায়, নানা ঢংয়ে কর্মসূচির ঘোষণা করে গেল বিএনপি, পুরো ২০২১ সাল জুড়ে।
তবুও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। উপরন্তু পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এছাড়া সভা-সমাবেশে তাদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি, নেতাদের সাথে সেলফি তুলতে গিয়ে মঞ্চ ভেঙে পড়া আর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ঘটনা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার।
এর মধ্যেও সেই পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েছে বিএনপি। বলেছে, অচিরেই দলের অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কঠোর আন্দোলন। কিন্তু বছর শেষ হয়ে গেলেও সেই আন্দোলনের বাস্তব রূপ দেখতে পায়নি দেশবাসী। শুধু দেখেছে, আন্দোলনের নামে তাদের সেই ‘মেকি হুংকার’।
বিশিষ্টজনদের ভাষ্য, শুধু মুখে মুখেই খৈ ফোটায় বিএনপি। আর কাজের বেলায় লবডঙ্কা। যা দেশবাসী এর আগেও দেখেছে, বছরজুড়েও দেখলো।
বছরের শুরুতে করোনার দোহাই দিয়ে মানুষের পাশে না থেকে নিজেদেরকে বন্দি করে রেখেছিল চার দেয়ালের মাঝে। বাতিল করেছিল দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। যদিও করোনার অজুহাত না দেখিয়ে এ সময় মাঠে দুর্দান্ত প্রতাপে জনমানুষের সেবায় দিনরাত পরিশ্রম করেছেন ক্ষমতাসীন সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
ত্রাণ-চিকিৎসা-আর্থিক সহায়তাসহ যেকোনো সাহায্যে সার্বক্ষণিক তারা নিয়োজিত ছিলেন অসহায় মানুষের পাশে। অথচ বিএনপি নেতারা জনগণকে ত্রাণ সহায়তা তো দেয়ইনি, উল্টো মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন দাতা থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়।
এখানেই শেষ নয়। দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক ডজন সমাবেশ করে বিএনপি। তবে সমাবেশের অধিকাংশ মানুষই ছিল ভাড়াটে। যাদের আনা হয় ৫০০-৬০০ টাকার সঙ্গে ১ প্যাকেট বিরিয়ানি ও ১ বোতল পানি দেওয়ার চুক্তিতে।
আরো পড়ুনঃ তারেকের সাথে দ্বন্দ্ব, মঞ্জুর পরিণতি হতে যাচ্ছে রিজভীর?
ফলশ্রুতিতে এসব অদলীয় লোক প্রায়শই নিজেদের মধ্যে মিছিল-সমাবেশে নিজেদের আগে দাঁড়ানো/বসা ও সেলফি তোলা নিয়ে জড়িয়েছে সংঘর্ষে। বিশেষ করে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, নয়াপল্টন ও হবিগঞ্জের কথা না বললেই নয়।
আর এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর নির্মমভাবে হামলা চালিয়ে আহত করেছে দেশের আইন-শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত সদস্যদের। এমনকি পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের কাজও করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এর বাইরে একটি মিটিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের নেতা ইলিয়াসের গুমের পেছনে নিজ দলীয় নেতারা জড়িত থাকার কথা ফাঁস করে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন তথা দলের ভেতর দারুণ হইচই ফেলে দেন। এ নিয়ে আব্বাসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয় বিএনপি।
আরেকটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। বছরের শেষ দিকে এসে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে সাবেক সাংসদ এবং জনপ্রিয় নেতা মঞ্জু ও তার এলাকার নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন।
যার প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন ৫ শতাধিক দলীয় নেতা-কর্মী। সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কমিটি প্রদানের ঘটনা তো ছিলই। সবমিলিয়ে বছরটা বিএনপির জন্য কেটেছে সম্পূর্ণ হ-য-ব-র-ল অবস্থায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, জনসমর্থনহীন বিএনপির উচিত ছিল জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করা। কিন্তু তারা তা না করে বরং উল্টো ঘরে বসেই হুংকার দিয়েছে আন্দোলন-সংগ্রামের।
বলেছে, তারা নেত্রীকে মুক্ত করে দলের পুরোনো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু তা কেবল কথার কথাই রয়ে গেছে। তাদের সেই পুরনো সংলাপ, শীতের পর, ঈদের পরে আন্দোলনের মতো। সেই সাথে অভিযোগ উঠেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের সথে আপোস করেছে নিজেদের মামলাগুলো অব্যাহতি পাওয়ার লোভে।
এ থেকেই বোঝা যায়, অনৈক্য আর দ্বন্দ্বের চরম শিখরে আরোহণ করেছে বিএনপি।
আরো পড়ুনঃ দল বাঁচাতে বিএনপির ভেতরেই সক্রিয় ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলাপন্থীরা