বিএনপি

❝এভাবে চলতে পারেনা, চলতে দেওয়া যায় না। ‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’ এর আদর্শের জলাঞ্জলী হচ্ছে চোখের সামনে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। কিছু একটা করতে হবে, যদি বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। যদি সত্যি সত্যি আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠিয় ক্ষমতায় যেতে হয়।❞

এমন প্রত্যয় নিয়ে বিএনপিতে সক্রিয় হয়েছেন সংস্কারপন্থীরা। তারা যে কোনো মূল্যে দলকে রক্ষা করতে চান। আর এজন্য প্রয়োজনে হার্ডলাইনে যাওয়ার বিকল্প দেখছেন না তারা। দলের সর্বোচ্চ প্রধান- খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির বাইরে। তার পুত্র তারেক রহমান আছেন নিজের অর্থলিপ্সা আর প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতির খেলা নিয়ে।

অথচ বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মী তাদের মুখের দিকে চেয়ে বসে আছেন আন্দোলনে নামার অপেক্ষায়। কিন্তু আজ্ঞাবহ কেন্দ্রীয় নেতারা পারছেন না জনস্রোত নিয়ে রাস্তায় নামতে। তাই দলের প্রধান দুজনকে বাদ দিয়ে হলেও একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চায় বিএনপির একটি অংশ।

তবে এই ক্ষুদ্র অংশটির সাথে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একাত্মতা প্রকাশ করতে পারছেন না বাকিরা। কারণ লন্ডনে খবর চলে গেলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মত বিতাড়িত হতে হবে। যদি ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলাপন্থীরা সফল না হন, তবে তাদের সাথে সম্পৃক্ত সবার কপালে খারাবি জুটবে। ওয়ান-ইলেভেনের মান্নান ভুঁইয়াদের মত পরিণতি ভোগ করতে হবে। এসব চিন্তা থেকে ঝুঁকি নিতে চান না অনেকেই।

এদিকে নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কিছুদিনের মধ্যেই দলটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে বলে প্রকাশ্যে বলাবলি করছেন অনেকেই। আর সেই সাথে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি অসন্তোষ।

ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে ‘আঁতাত’ এর অভিযোগ অনেক নেতার বিরুদ্ধে। এছাড়া স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কয়েকজন নেতা নিজেদের মামলাগুলো থেকে ছাড় পেতে আপোস করেছেন বলে আন্দোলন ব্যাহত হচ্ছে- তৃণমূলের এমন পূঞ্জীভূত ক্ষোভ এখন প্রকাশ্য।

গত এক মাসে কয়েকটি সভা-সমাবেশে দলের নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, ধাক্কাধাক্কি, মারামারির পর দলের বিভক্তির ব্যাপারে নেতারা কথা বলা শুরু করেন। ইতিমধ্যে দেশের অনেক জায়গায় গণপদত্যাগের হিড়িক দেখা গেছে। সেইসাথে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি এখন ভাঙনের মুখে।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সুযোগে দলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন লন্ডন পলাতক আসামি তারেক রহমান। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেও কার্যত তিনিই এখন দল পরিচালনা করছেন। তবে তিনি পলাতক বলে দলের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব করতে পারছেন না। কারণ, খালেদা জিয়ার সত্যিকার অনুসারীরা তার নির্দেশ মানছেন না।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতার বরাতেই জানা গেছে, খালেদার অসুস্থতা এবং তারেকের নেতৃত্বে অনাস্থা পোষণকারীরা মা-ছেলে দুজনকে বাদ দিয়ে বিএনপি দখলে নিতে চান। এছাড়া আছে ফখরুল-রিজভীর পৃথক পৃথক সমর্থক গোষ্ঠী। তারাও প্রধান দুই নেতাকে বাদ দিয়ে নতুন ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলার কথা ভাবছেন।

এছাড়াও গয়েশ্বর চন্দ্র, শামসুজ্জামান দুদু, মির্জা আব্বাস, আমানুল্লাহ আমানসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা অপেক্ষায় আছেন খালেদা জিয়ার কিছু একটা হলে দলের কর্তৃত্বের লড়াইতে নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে এগিয়ে আসার। মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব খুব চরমে পৌঁছেছে। সিনিয়র নেতাদের শঙ্কা- অচিরেই বিএনপি ভেঙে ৫-৬ ভাগ হবে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দলের কিছু নেতার ক্ষমতা-লিপ্সার কারণে এসব হচ্ছে। আমাদের উচিত ম্যাডামকে মুক্ত করা, তারেক রহমানকে দেশে নিয়ে আসা। তা না করে কেউ কেউ নিজের লাভের জন্য দলাদলি করছে। এতে কিছু গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি মোটেও আশাবাদী নই।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, তারেকের মতো অশিক্ষিত দিয়ে তো বিএনপির মতো এত বড় দল চলবে না। অনেকদিন থেকেই বলে আসছি। কিন্তু আমার কথা তো খালেদা জিয়া আমলে নিলেন না। তারেকের অতীত অপকর্মের জন্য দেশে-বিদেশে সে সমালোচিত।

ফলে তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় বিএনপির সিনিয়র এবং ভালো নেতারা হতাশ হয়েছেন। এই অযোগ্য তারেকের আন্ডারে তারা কীভাবে কাজ করবেন? বিএনপি যে এতদিন ভাঙেনি সেটাই বরং বিস্ময়ের।

বিএনপি ভেঙে যাবে কি না জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক একটি দলের নেতা বলেন, জোটের অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপির ভাঙন আমার কাছে অস্বাভাবিক বলে কিছু মনে হয় না।