
বিজয়ের মাসে অশুভ তৎপরতায় লিপ্তরা সক্রিয় হয়েছে মার্কিন মুলুকেও। নানা ছুতানাতায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্ভট সব কথাবার্তা ছড়াচ্ছে বাংলাদেশকে আবারও পিছিয়ে দেওয়া অথবা থামিয়ে দেওয়ার মতলবে। তিলকে তাল বানিয়ে ঢাকার একটি বিশেষ মহল বাংলাদেশকে মানবিকতাহীন হিসেবে চিত্রিত করার সুগভীর ষড়যন্ত্রকে পাশ্চাত্যে বিস্তৃত করছে। ডলারের বান্ডেল ঢালছে মার্কিন রাজনীতিকদের ক্যাম্পেইন তহবিলে। সে অর্থে কথা বলছেন অনেকে। বিজয়ের মাসকে সামনে রেখেই এহেন গোষ্ঠীভিত্তিক তৎপরতা যুক্তির আলোকে প্রতিহত করা দূরের কথা বিভ্রান্ত মার্কিন রাজনীতিকদের সংশোধনেরও ন্যূনতম প্রয়াসও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যার আনুগত্য পেয়ে ঢাকায় গিয়ে যারা ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা, ঠিকাদারি লাইসেন্স ইত্যাদির মাধ্যমে শত-সহস কোটি বানিয়েছেন, সেই বিত্তশালীরাও নিরাপদ বিশ্রামে দিনাতিপাত করছেন।
দলগতভাবে আওয়ামী লীগ এবং জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ইমেজবিরোধী অপতৎপরতা রুখে দিতে তাদের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আগ্রহ রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক যে, এই লোকগুলো কখনো আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন কি না। অর্থাৎ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বানানোর অবলম্বন হিসেবে তারা আওয়ামী লীগের ব্যানার বহন করেছেন। টাকার পাহাড় গড়েছেন, তাই এখন আর আওয়ামী লীগের ব্যানার বহনের দরকার এরা কারা তা সবাই জানেন এবং চেনেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃকও চিহ্নিত হয়েছেন। কয়েকজনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউবা ব্যবসা লাইসেন্স বিক্রি করে মোটা অর্থসহ এক ধরনেরআত্মত্মগোপনে গেছেন।
অন্যদিকে, বিএনপির লোকজন সরব হয়েছেন জামায়াত শিবিরের টাকায়। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসন নানা কারণে নামমাত্র সুদ অথবা কখনোই পরিশোধ করতে হবে না-এমন শর্তে যেটা অর্থ প্রদান করেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।এসব প্রকল্পে বিএনপি-জামায়াতের লেবাসধারীরাও বেশ তাজা হয়ে পড়েছেন। নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সি-ফিলাডেলফিয়া-আটলান্টা-মিয়ামি হিউস্টন-ডালাস-লসএঞ্জেলেস-ডেট্রয়েট পর্যন্ত বিস্তৃত শত শত মানুষ হঠাৎ করে পাওয়া ডলারের একটি অংশ ব্যয় করছেন দলীয় প্রয়োজনে। তারা সুযোগ পেলেই ছুটছেন সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের অনুষ্ঠানে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও হাজির হচ্ছেন মোটা অঙ্কের চেকসহ।
এসব অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার সেই লোকজনও মাঝেমধ্যে আমন্ত্রিত হন। কিন্তু হাজির হন না চাঁদা দেওয়ার ভয়ে। অথচ সময়ের প্রয়োজনে এটি ছিল তাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা যদি হাজির হতেন তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে যে দুর্নীতির মামলায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে এ তথ্যটি যথাযথভাবে সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের বলতে সক্ষম হতেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছেন, সে কথাটি জোরালোভাবে অবহিত করতে পারতেন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে। র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ নিয়েও নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন সিটিজেনশিপ নেওয়া প্রবাসীরা। এটি করার দায়িত্ব আওয়ামী ঘরানার লোকজনের, বিশেষ করে যারা ঢাকায় গিয়ে দলের পদ-পদবি দেখিয়ে মোটা অর্থ বানিয়েছেন।
[শেখ হাসিনাকে সরাতে মার্কিন মুল্লুকে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ]
সে প্রত্যাশার পরিপূরক ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। হালে জামায়াত-শিবিরের লোকজন হুমকি দিচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার। মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে তারা জাতিসংঘে ইতিমধ্যেই দেন-দরবার শুরু করেছে বলে জানা গেছে। সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হিসেবে যাদের মনে করা হচ্ছে তাদের দফতরে র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাগণকে নিষিদ্ধ করার নথি বিতরণ করা হচ্ছে। জানানো হচ্ছে, ‘বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। মিডিয়ার স্বাধীনতাও হরণ করা হয়েছে, গুম আর খুনের হুমকি দিয়ে।’ এভাবেই বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই নানা কথা জানানো হচ্ছে এবং এ নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ টিম মাঠে রয়েছে।
গণমাধ্যমে কাল্পনিক কথা বলার জন্যও রয়েছে আরেকটি টিম। এরা লসএঞ্জেলেস, মেট্রো ওয়াশিংটন, বোস্টন, নিউজার্সি, মিশিগানে ঘাঁটি গেড়েছে কয়েক বছর আগে। এই টিমের নিজস্ব চ্যানেলও রয়েছে। দিন রাত একই ভাবনায় মগ্ন-কখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা যাবে। এমন মতলবি প্লটে ভয়ঙ্কর কিছু করারও ভাবনা রয়েছে ওদের। জামায়াত-শিবিরের এজেন্টরা গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে অনির্ধারিত এক বৈঠকে মিলিত হয়ে উল্লাস করেছে। ‘ডলার কথা বলছে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ডলারের পরিমাণ আরও বাড়ানোর যুক্তি দেখানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থামানো না গেলেও এখন শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়া সহজ হবে যদি নীতি-নির্ধারকদের তহবিল সংগ্রহ করার অনুষ্ঠানে সবাই মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে পারেন- এমন মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। জ্যাকসন হাইটসের সন্নিকটে একটি রেস্টুরেন্টে ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালে ঢাকা, লন্ডন, দুবাই, মক্কা থেকেও যোগদান করেছিলেন কয়েকজন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশেবিরোধী ষড়যন্ত্র এখন দৃশ্যমান এবং ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়
সবাই আরও জোরালো এবং সংঘবদ্ধভাবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ইমেজ ধূলিসাৎ করার জন্য কাজ করতে আগ্রহী বলেও সভায় অবহিত করা হয় এবং এজন্য ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে। হাফ বিলিয়ন ডলার পেলেই সারা বিশ্ব থেকে শেখ হাসিনা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেই গোপন বৈঠকে। এদিকে, বিজয় দিবস অতিবাহিত হলো। বিজয় অর্জনে যে দলকে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা গেল না। দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা আশা করেছিলেন, অন্তত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান থেকেও জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানো হবে। প্রতিহত করার প্রস্তুতির আহ্বান উচ্চারিত হবে। কিন্তু হতাশা কাটেনি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সহ্য করেনি, এখনো পারছে না।
এজন্যই অদম্য গতিতে এগিয়ে চলাকে থামিয়ে দিতে ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দেশপ্রেমিক প্রবাসীদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই টিমের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব ‘কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস’ পুনরায় গঠন করতে হবে। সেই ককাসের সদস্যগণকে হোয়াইট হাউসে দেন দরবারে অনুপ্রাণিত করতে হবে। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে যেমন প্রবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নেমেছিলেন এই আমেরিকাতেও ঠিক একই চেতনায় আবারও সরব হওয়ার বিকল্প নেই বলে ভাবছেন অনেকে।
আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: বিএনপিপন্থী চাকরিচ্যুত সেনাদের গোপন বৈঠক ফাঁস
বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: বিএনপিপন্থী চাকরিচ্যুত সেনাদের গোপন বৈঠক ফাঁস